জবির সংকট নিরসনে প্রশাসনের আশ্বাস দিলেও হতাশ শিক্ষার্থীরা
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) একটি ব্যতিক্রমী বিশ্ববিদ্যালয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেটিকে কলেজ হতে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয়েছে।
আয়তন, আবাসন, এমনকি একাডেমিক সিস্টেমের দিক থেকেও দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এটি ব্যতিক্রম। প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থীতে ভরপুর রাজধানী ঢাকার সদরঘাটের ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে অবস্থিত একটি স্বায়ত্তশাসিত পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শেষে কালো গাউন পরে সমাবর্তনের মাধ্যমে সনদ নিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের স্বপ্ন থাকে প্রতিটি শিক্ষার্থীর। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের এক যুগেও সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
সমাবর্তন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আন্দোলন হলেও প্রতিবারই আশ্বাস দিয়ে থামিয়ে দেয় সেই আন্দোলন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সমাবর্তন সম্পর্কে এক সাক্ষাৎকারে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেছিলেন, বর্তমান ক্যাম্পাসে সমাবর্তন করা যাবে না। আমার যেটা পরিকল্পনা, আমারা যদি দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের জায়গা ভরাট করতে পারি, মাঠ সমান করতে পারি। তাহলে সেখানে সমাবর্তন হবে। আগামী বছর মানে ২০১৭ শেষ থেকে ২০১৮ সালের মার্চের মধ্যে সমাবর্তনের ইচ্ছা আছে। কিন্তু উপাচার্যের সেই সময় অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম সমাবর্তন করা সম্ভব হয়নি।
সম্প্রতি ১৮ সেপ্টেম্বর আন্দোলনের চাপে জবির প্রথম সমাবর্তনের জন্য কমিটি গঠন করা হয়। সমার্বতন আয়োজন কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২৪ সেপ্টেম্বর, যেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কেরানীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নিজস্ব জায়গায় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম সমাবর্তন।
সিদ্ধান্ত গ্রহণের ১মাস পেরিয়ে গেলেও কাজের কোন বাস্তবায়ন নেই। কেরানিগঞ্জের সেই নিজস্ব জমি খাল-বিল, পতিত জমি হিসেবেই পড়ে আছে। কবে হবে সেই জমি ভরাট? কবে করবে মাঠ সমান? আর কবে হবে সেই মাঠে সমাবর্তন? তা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্থ সমাবর্তন প্রত্যাশী ছাত্রছাত্রী।
সমাবর্তন প্রত্যাশী ৭ম ব্যাচের স্নাতকোত্তর শেষ সমাজকর্ম বিভাগের ছাত্র তৌকির তাজমুল হক রক্তিম বলেন, আমি জবিতে দীর্ঘ ৬ বছর শিক্ষা জীবন শেষে করিছি নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে, যেমনঃ খাদ্য পরিবহন, আবাসন ইত্যাদি। এই সকল সমস্যা কোন সমস্যা ই মনে হত না যদি পেতাম বিদায়বেলা একটু স্বীকৃতি আর সমাবর্তনের মাধ্যমে সম্মান সহকারে বিদায়। শিক্ষার্থীদের কাছে সমাবর্তন অনেকটা স্বীকৃতি স্বরূপ। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ১৩ বছর পরেও কোন এক অজানা/অযৌক্তিক কারনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালের শিক্ষার্থীরা এই প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে।
‘বর্তমান ভিসি স্যার আসলে যে কোনো বিষয় বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলেও সেগুলোর গতি খুবই মন্থর। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি সামাল দিতে উনি এমন অনেক আশ্বাসই এ পর্যন্ত দিয়েছেন যা এখনও আলোর মুখ দেখেনি। তাই আমার মনে হয় না এটা ঠিক সময়ে হবে।’
গত ৯ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন জন্য ১ হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকা প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেকে)।
কিন্তু কবে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে কবে? সেই সম্পর্কে জবি রেজিস্টার ওহিদুজ্জামান কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু প্রকল্পের সম্পুর্ণ টাকা সরকার বহন করবে তাই সরকারের টাকা না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের কিছু করার নেই। তবে আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তখনই আমরা টেন্ডার করে প্রকল্পের বাস্তবায়নের কাজ শুরু করব।
জবির সংকট সম্পর্কে প্রশাসনের কাছে জানতে চাইলে, তারা বলে জবিকে আধুনিক বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার জন্য আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু সাধারণ ছাত্রছাত্রী বলে কাজের বাস্তবায়ন কোথায়?
দৃষ্টান্তস্বরূপ, তিন মেয়াদে ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র আবাসিক ছাত্রী হলের কাজ শেষ করতে পারেনি জবি প্রশাসন। ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ ছাত্রী হল নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম মেয়াদ ছিল ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত। দ্বিতীয় মেয়াদ ২০১৩ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের জুন এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালের জুন থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত তৃতীয়বারের মতো মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। এখন ২০১৮ সালের জুন পেরিয়ে ২০১৯ হয়ে যাচ্ছে এখনও হলের কাজের সমাপ্তি হল না।
এইসম্পর্কে জবি পরিসংখ্যান বিভাগের ১০ম ব্যাচের ছাত্রী মুন্নি আক্তার বলেন, আমার নিজের চোখে দেখা ৪-৫ বছরে পুরান ঢাকার কত বড় বড় বিল্ডিং উঠে গেলো। একইসাথে কাজ শুরু হয়ে রাজকীয় ভাবে ঢাবির সুফিয়া কামাল হল উঠে গেলো, ৭ই মার্চ ভবন উঠে গেলো, শেখ রাসেল টাওয়ারের কাজও প্রায় সম্পূর্ণ শুধুমাত্র আমাদের বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রীহলের কাজই অগ্রসর হয় না, আমরা জবিয়ান'রা সবদিক থেকেই বঞ্চিত। পর্যাপ্ত পানির অভাবে নাকি আমাদের হলের কাজ বেশিরভাগ সময়েই বন্ধ থাকে আর প্রশাসনেরও এ নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই!
২৫ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য একটি মাত্র ক্যান্টিন! তাতেও প্রশাসনের বেখেয়ালিপনা ও অব্যবস্থাপনায় উচ্চদামে বাজে খাবার কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা!
গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের মুখে ক্যান্টিন সঙ্কট নিয়ে শাখা ছাত্রলীগ, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের প্রতিনিধি হিসেবে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সাথে বৈঠক করেছে জবি প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের সভাপতিত্বে ক্যান্টিন সঙ্কট নিরসনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক সেলিম ভূঁইয়াকে প্রধান করে ৪ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। কমিটিকে দু’সপ্তাহের মধ্যে ক্যান্টিনের বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধান খুঁজে বের করা জন্য উপাচার্য সময় বেঁধে দিলে ওই মিটিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. ভূঁইয়া উপাচার্যের কাছে দু-মাস সময় চান।
কিন্তু দু’মাস পেরিয়ে দুবছর হতে লাগল এখন পর্যন্ত ক্যান্টিনের উচ্চ দামে নিম্ন মানের খাবারের ভোগান্তির কোন সমাধান পেল না সাধারণ ছাত্রছাত্রী।