আর স্বপ্ন নয়, এখন বাস্তব
ভর্তি কার্যক্রম দিয়ে শুরু হলো চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের যাত্রা
প্রধানমন্ত্রী ও ডাঃ দীপু মনি এমপির প্রতি জেলাবাসীর কৃতজ্ঞতা
১ এপ্রিল ২০১৮, রোববার অপরাহ্ন। চাঁদপুর স্টেডিয়ামসহ আশপাশ জুড়ে উত্তাল জনসমুদ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা 'কথা দিচ্ছি চাঁদপুরে মেডিকেল কলেজ করে দেবো'। মেডিকেল কলেজ সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর সেদিনকার কয়েকটি বাক্য ছিলো এ রকম-তিনি পাশেই থাকা ডাঃ দীপু মনিকে দেখিয়ে বললেন, 'আপনাদের এই জনপ্রতিনিধি ডাক্তার। সে আমার কাছে আগেই চাঁদপুরে একটি মেডিকেল কলেজ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছে। কথা দিচ্ছি চাঁদপুরে মেডিকেল কলেজ করে দেবো।' প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সাথে সাথে লাখো জনতার মুহুর্মুহু করতালি।
প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণায় জেলাবাসী আশ্বস্ত হলো এবার চাঁদপুরে মেডিকেল কলেজ হবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার মাস না যেতেই শুরু হয়ে গেলো তাঁর এ ঘোষণা বাস্তবায়ন কার্যক্রম। জায়গা দেখা, চূড়ান্ত করা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাঁদপুরে আসা। অর্থাৎ দ্রুততার সাথে কাজের অগ্রগতি দেখে জেলাবাসী শতভাগ নিশ্চিত হয়েছে যে, চাঁদপুরে মেডিকেল কলেজ হচ্ছে। কিন্তু ভবন নির্মাণের আগেই ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে এটা জনসাধারণের কারোরই ধারণার মধ্যে ছিলো না। সেই অবিশ্বাস্য ঘটনাই ঘটলো। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর অনুমতি পাওয়া গেছে। গত ৩১ আগস্ট থেকে অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। অনলাইনে আবেদনের শেখ তারিখ ১৮/০৯/২০১৮ রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত। ১ম বর্ষ এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি পরীক্ষা (২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ১৬/০৮/২০১৮ তারিখে 'এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি' শিরোনামে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিটি ছিলো এ রকম-'সম্প্রতি কয়েকটি জেলায় নতুন সরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের সরকারের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে এমবিবিএস ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি সংক্রান্ত অনলাইন সফ্টওয়্যার প্রস্তুতকরণের সুবিধার্থে ছাত্র-ছাত্রীদের অনলাইন ভর্তির আবেদন গ্রহণ ২৭/০৮/২০১৮ খ্রিঃ তারিখের পরিবর্তে ৩১/০৮/২০১৮ খ্রিঃ তারিখ দুপুর ১২টা থেকে শুরু হবে। অনলাইন আবেদনের শেখ তারিখ ১৮/০৯/২০১৮ খ্রিঃ রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত এমবিবিএস ১ম বর্ষে (২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) ভর্তির অনুমতিপ্রাপ্ত মেডিকেল কলেজের নাম ও আসন সংখ্যাসহ 'সারণি-২' নামে যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, সে তালিকায় দেখা গেছে যে, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের কোড নং-৪৬। আর আসন সংখ্যা হচ্ছে ৫০। চাঁদপুর মেডিকেল কলেজসহ অন্য ক'টি জেলায় আরো নতুন যে পাঁচটি মেডিকেল কলেজ ভর্তির অনুমতি পেয়েছে সেসব কলেজেও দেখা গেছে যে, আসন সংখ্যা ৫০টি করে। এছাড়া সারণি-১ ও সারণি-২ নামে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজসহ ৫১টি মেডিকেল কলেজের নাম রয়েছে।
এদিকে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস ১ম বর্ষে (২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) ভর্তির অনুমতি সংক্রান্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত কলেজের তালিকাসহ সংবাদ গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে পুরো চাঁদপুর জেলায় যেনো আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। জেলার আপামর জনতা এই আকাশছোঁয়া প্রাপ্তির জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডাঃ দীপু মনির প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং অভিনন্দন জানান।
এ বিষয়ে গতকাল রাতে এ প্রতিবেদক কথা বলেন ডাঃ দীপু মনি এমপির সাথে। তিনিও জানান, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজসহ দেশের আরো বেশ ক'টি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস ১ম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম অনলাইনে ৩১ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে গেছে। এ জন্যে তিনি মহান রাব্বুল আলামিনের প্রতি শোকরিয়া আদায় করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি আরো জানান, চাঁদপুরে এখন একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহার করা হবে। প্রয়োজনবোধে নার্সিং ইন্সটিটিউটকে কাজে লাগানো হবে। মেডিকেল কলেজের নিজস্ব ভবনের কাজ আশা করি ২/৩ বছরের মধ্যে হয়ে যাবে। তখন নিজস্ব ক্যাম্পসেই সব কার্যক্রম চলবে।
এ বিষয়ে কথা হয় বেশ কিছুদিন যাবৎ ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জনের দায়িত্বে থাকা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ সফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, এই ভর্তি কার্যক্রম ২৭ আগস্ট থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিলো। চাঁদপুরসহ আরো কয়েকটি নতুন সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির অনুমতি ওই বিজ্ঞপ্তির সাথে যুক্ত হবে বলে ক'দিন দেরি হয়েছে। তিনি জানালেন, এখন কোনো একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে কার্যক্রম চলবে। এটিকে আবাসন হিসেবে এবং নার্সিং ইন্সটিটিউটকে ক্লাস ও পরীক্ষার জন্যে ব্যবহার করা হতে পারে। তিনি আরো জানান, অতীতেও আমরা দেখেছি, নতুন মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম এভাবেই শুরু হয়। ভবন হওয়ার আগেই ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। তাতে কাজে গতি আসে।
উল্লেখ্য, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের জন্যে স্থায়ী ক্যাম্পাস হবে গাছতলা ব্রিজের দক্ষিণ পাড়ে মেরিন একাডেমি সংলগ্ন এলাকায়। সহসাই সেখানে নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে।