ফরিদগঞ্জে কে এই আবুল কাসিম!
যার মিথ্যা ও ভুয়া মামলায় একের পর এক শিকার হচ্ছে সরকারি দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ


আবুল কাসিম নামে এক যুবক ফরিদগঞ্জে এখন নব্য আওয়ামী লীগ হয়ে সাধারণ মানুষের উপর অযথা হামলা নির্যাতন এবং মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। প্রকৃত আওয়ামী লীগ অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের পদপদবী নিয়ে যারা দীর্ঘদিন ফরিদগঞ্জে রাজনীতি করছেন, তারা এখন এই নব্য আওয়ামী লীগার আবুল কাসিমের মিথ্যা মামলার শিকার হচ্ছেন একের পর এক। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছেÑযে সব ঘটনার কথা উল্লেখ করে মামলা দেয়া হচ্ছে সেসব ঘটনার সাথে বিবাদীরা কোনোভাবে সম্পৃক্ত তো নয়ই বরং দেখা গেছে যে, ওইসব সাজানো ঘটনার সময় বিবাদীরা সরকারি কোনো অনুষ্ঠান অথবা সামাজিক বা রাজনৈতিক কোনো না কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এমন হাস্যকর মিথ্যা ঘটনায় মামলা সাজিয়ে তাদেরকে আসামী করা হচ্ছে।
এমন একটি মিথ্যা, সাজানো এবং কল্পকাহিনীর অবতারণা করে গত ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার ফরিদগঞ্জ আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন আবুল কাসিম। মামলা নং ৬৬৫। মামলায় বিবাদী করা হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও শহীদ পরিবারের সদস্য মহিউদ্দিন ভূঁইয়া ইরান, আষ্টা মহামায়া পাঠশালা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ৭নং পাইকপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন, ৭নং পাইকপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মাজহারুল ইসলাম আকরাম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব আলম পাটওয়ারী ও ২নং বালিথুবা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হোসাইন রাব্বিসহ ১০ জনকে। যে অভিযোগে এসব ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে, দেখা গেছে যে তাদের কেউই ওই ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এমনকি তারা মামলায় উল্লেখ করা ঘটনার সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বিবাদী মহিউদ্দিন ভূঁইয়া ইরান জানান, তিনি ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার সকাল থেকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা অডিটোরিয়ামে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান সাহেবের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত কৃতী ছাত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সে অনুষ্ঠানে সাবেক এমপি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ আরো অনেক অতিথি উপস্থিত ছিলেন। অথচ তাকে প্রধান আসামি করে মামলা দেয় মামলাবাজ আবুল কাসিম। এভাবে ১ থেকে ৬নং বিবাদীর সবাই সেদিন বিভাগীয় কমিশনারের উপস্থিতিতে দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অথচ মামলার তারিখ ও সময় উল্লেখ করা হয় ২৬ নভেম্বর সকাল ১১টা ২০মিনিট। যা সম্পূর্ণ ভুয়া, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
এদিকে মামলাবাজ আবুল কাসিমের বিষয়ে জানা গেছে, তার দাদা আব্দুল গফুর গাজী মুক্তিযুদ্ধের সময় শান্তি কমিটির সদস্য ছিলো। তাকে পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার শহিদুল্লাহ তপাদার ও ৭নং পাইকপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এছাড়া ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর এই আবুল কাসিম ও তার বাবা আলী আক্কাছ আওয়ামী লীগ অফিস ভাংচুর করেছে এবং আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের উপর অনেক অত্যাচার নির্যাতন করেছে বলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অভিযোগ করেন। তার নামে আরো অভিযোগ রয়েছে, সে এলাকায় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী এবং সেবনকারী। এক সময়ের যুবদল কর্মী এই আবুল কাসিম তার ফেসবুক আইডি থেকে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর পুত্রকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
মামলার বিবাদীরা অভিযোগ করেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলার চিহ্নিত এবং প্রমাণিত কুখ্যাত মাদকসেবী খাজে আহম্মদ মজুমদারের পরামর্শ এবং দিক-নির্দেশনায় আবুল কাসিম আমাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা করছে। এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা ছাড়া অন্য কিছু নয় বলে তারা অভিযোগ করেন। ফরিদগঞ্জের সাধারণ মানুষ এই মামলাবাজ আবুল কাসিমের মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা থেকে রেহাই পেতে চায়।
এ বিষয়ে আবুল কাসিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনা সত্যি বলেই মামলা দিয়েছি। কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। এর পূর্বেও আমি সাংবাদিক শফিকুর রহমানের পক্ষে পোস্টার লাগানোর সময় আমাকে ইরানের নেতৃত্বে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে গিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। আর মাদক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ফেসবুকে আমার এডিট করা ছবি দিয়ে মাদক সংশ্লিষ্টতার অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে আমি ফরিদগঞ্জ থানায় তৎসময়ে মামলাও দায়ের করেছি। সাংবাদিক শফিকুর রহমানকে ভালোবাসি বলেই আমার বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ।