কোস্টগার্ডের সোর্স পরিচয়ে প্রতারণা
কোস্টগার্ডের সোর্স পরিচয়ে লিটন ওরফে বসু রাজ ও সেন্টু নামের দুই যুবক সাধারণ মানুষের সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রতারণা করে আসছে। একই সাথে প্রতারণা করছে কোস্টগার্ড কর্তৃপক্ষের সাথেও। তারা কোস্টগার্ডের সোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগে কোস্টগার্ড কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে নদীতে বিভিন্ন অভিযানে জেলেদের কাছ থেকে আটককৃত জাল, কাচি, নৌকাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করছে। অন্যদিকে ওইসব মালামাল সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করবে বলে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাদেরকে সেই মালামাল না দিয়ে বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাদের টাকা আত্মসাৎ করে প্রতারণা করছে।
এই দুই প্রতারক হচ্ছে মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি থানার কু-ারবাজার গ্রামের কার্তিক রাজের ছেলে লিটন ওরফে বসু রাজ এবং নারায়ণগঞ্জ দক্ষিণ পানগাঁও এলাকার নিতাই রাজবংশের ছেলে সেন্টু রাজবংশ।
এই প্রতারকদের হাতে প্রতারণার শিকার হয়েছেন চাঁদপুর পুরাণবাজার এলাকার ফয়সাল, দুলাল, খলিল ও হাকিম নামের ৩/৪ জন ব্যক্তি।
ভুক্তভোগীরা জানায়, বসু রাজ ও তার পার্টনার সেন্টুসহ ক’জন মুন্সিগঞ্জ পাগলা কোস্টগার্ডের সোর্স হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা কোস্টগার্ডের আটককৃত বিভিন্ন মালামাল চুরি করে অন্যত্র বিক্রি করে। কিন্তু চুরি করা মালামাল তাদের কাছে বিক্রি করার কথা বলে যে তারা প্রতারণা করবে তা তারা বুঝতে পারেনি। ফয়সাল নামের যুবকের কাছ থেকে জাল, কাচি বিক্রি করবে বলে বসু রাজ ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন অংকে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নেয়। একইভাবে দুলালের কাছ থেকে প্রায় ৭০ হাজার এবং খলিলের কাছ থেকে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা নেয়। ফয়সাল জানান, সে যখন জানতে পারে কোস্টগার্ড থেকে চুরি করা মাল বসু রাজ তার কাছে বিক্রি করবে তখন সে সেসব মালামাল ক্রয় করবে না বলে জানান। এজন্যে বেশ কদিন পূর্বে বসু রাজ তাকে অন্য জায়গা থেকে মালামাল কিনে দিবে বলে নারায়ণগঞ্জ নিয়ে সারাদিন বিভিন্ন টালবাহানা করে এক পর্যায়ে তাকে মালামাল এবং তার দেয়া টাকা কোনোটাই ফেরত দিবে না বলে বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখিয়ে ফয়সালকে সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য করে। শুধু পুরাণবাজারের ফয়সালই নয়, বসু রাজ এবং তার সহযোগীদের কাছে আরো অনেকেই একইভাবে প্রতারিত হয়েছে বলে অনুসন্ধান করে জানা গেছে।
এ বিষয়ে লিটন ওরফে বসু রাজের মুঠোফোনে কথা হলে সে জানায়, আমি কোস্টগার্ডের সোর্স হিসেবে কাজ করি সত্য। যেসব মাল বিক্রি করি, সেগুলোর কিছু মালামাল কোস্টগার্ড কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে দেয়। এখন তারাতো তা আর স্বীকার করবে না।
আমি তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছি সত্যি। তবে ব্যবসা করলে তো লেনদেন থাকবেই। আমি মাঝে মধ্যে তাকে মালও দিয়েছি। কিন্তু সে যে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার কথা বলেছে, আসলে এতো টাকা নয়। আরো কম হবে।
এ বিষয়ে তার পার্টনার দেলুর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি ঘটনার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ফয়সাল টাকা পাবে এটা সত্যি। তবে বসু রাজ মিথ্যে বলছে। সে ২ লাখের উপরে টাকা পাবে।
মূলত কোস্টগার্ডের সোর্স হওয়ার বিষয়টি পুঁজি করেই তারা ব্যবসার নামে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতারণা করছে। মাছ ধরা বন্ধের অভিযানের সময় এবং কারেন্টজাল জব্দ করার সময় চাঁদপুরেও সোর্স পরিচয়ে অনেক অনিয়ম করা হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এসব প্রতারকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন ভুক্তভোগীরা।