• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ফরিদগঞ্জে হতদরিদ্রের সাজানো সংসারটি তছনছ করে দিয়েছে দুর্বৃত্তের দেয়া আগুন!

প্রকাশ:  ০১ এপ্রিল ২০১৯, ১৩:০২
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

অসুস্থ বাবাকে দেখতে ঘরে তালা মেরে সন্তানদের নিয়ে বাপের বাড়ি যান নারগিস বেগম। ওই রাতেই শুনেন তার বসতঘরে আগুন জ¦লছে। এমন খবর শুনে তিনি ছুটে এসে দেখেন তিল তিল করে গড়ে তোলা তার সাজানো সংসারটি তছনছ করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি হয়ে যাওয়া মেয়ের বিয়ের পর জামাইয়ের বাড়িতে পাঠানোর উদ্দেশ্যে ধার-দেনায় কিছু আসবাবপত্র ক্রয় করার পর ঘরে রাখা হয়েছিল। কিন্তু নিষ্ঠুর ওই আগুনে সবই ভস্মীভূত হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় নিঃস্ব পরিবারটি বর্তমানে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে ২৯ মার্চ শুক্রবার দিবাগত রাতে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১০নং গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের উত্তর হাঁসা গ্রামের শীতল গাজী বাড়িতে। এ ঘটনায় ওই হতভাগ্য গৃহবধূ নারগিসের স্বামী মোঃ হাসান গাজী সংশ্লিষ্ট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন নবনির্বাচিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ৩০ মার্চ শনিবার সকালে হাসান গাজীর স্ত্রী নারগিস বেগম আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরের পাশে বিলাপ দিয়ে কাঁদছেন। কাঁদতে কাঁদতে বার বার তিনি মুর্ছা গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন। তিন মেয়ে নাজমিন, সাথী ও সীমার অশ্রুগড়িয়ে পড়ছে। বাবা হাসান গাজীর চোখে রাজ্যের হতাশা। এ প্রতিনিধি তাদের সাথে কথা বলতে চাইতেই জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করেন। বলতে থাকেন, ভাই আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। শরীরে পরিধেয় বস্ত্র ছাড়া পরিধান করার মতো আমাদের আর কোনো বস্ত্র নেই। ক্ষুধা নিবারণের জন্যে কোনো খাবার নেই। চাল-ডাল-আলু যা ছিলো সব পুড়ে গেছে। এ সময় উপস্থিত নারী-পুরুষ অনেকের চোখের জল ছল ছল করছিলো। পুড়ে যাওয়া বসতঘরটির অবস্থান বিলের ধারে কিছুটা নির্জন স্থানে। বসতঘরটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। শুধু তাই নয়, অগ্নিকা-ের সময় বসতঘরে কেউ ছিলোও না।
বসতঘরের ভিটায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিলো আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন আসবাবপত্র। পেশায় মিস্ত্রী হাছান গাজী, তার স্ত্রী নারগিস বেগম একজন গৃহিণী। তিল তিল করে বহু কষ্টে গড়ে তুলেছিল তাদের এই সংসার। কিন্তু আগুনে সব পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। পুড়ে যাওয়া আসবাবপত্রের মধ্যে মেয়ের বিয়েতে জামাইর বাড়িতে দেয়ার জন্যে ৪০ হাজার টাকা ধার নিয়ে বহু কষ্টে ক্রয়কৃত কিছু স্বর্ণালঙ্কার ও আসবাবপত্র ছিলো।
এ বিষয়ে মোঃ হাসান গাজী বলেন, শ^শুরের অসুস্থতার খবর শুনে রাত ১০টার দিকে আমার স্ত্রী চৌচালা টিনশেড ঘরে তালা দিয়ে মেয়েদের সাথে নিয়ে বাবার বাড়িতে যায়। রাত তিনটার দিকে তার কাছে খবর আসে আমার বসতঘরে আগুন লেগেছে। আমার স্ত্রী এসে দেখে আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনে আনুমানিক ৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  শত্রুতাবসত রাতে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়ে আমার বসতঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। এ নিয়ে আমি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি।
এ বিষয়ে স্থানীয় ক’জন এ প্রতিনিধিকে জানান, আগুন লাগার পর রাত দুটার দিকে বাড়ির লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। কিন্তু আগুনের লেলিহান শিখায় এরই মধ্যে ঘরটি পুড়ে যায়।
এদিকে রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তের আগুনে বসতঘর পুড়িয়ে দেয়ার খবর শুনে উপজেলা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হাসান গাজীর পরিবারকে সান্ত¡না দিতে বাড়িতে যেতে দেখা যায়।
 আগুনে নিঃস্ব এ পরিবারটির বর্তমান অসহায় অবস্থা দেখে উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান, বাসসের চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি আঃ সালাম আজাদ জুয়েল ও এলাকার একজন তরুণ সমাজসেবক আলমগীর পাটওয়ারী তাৎক্ষণিক ওই পরিবারটিকে কিছু নগদ অর্থ প্রদান করেন।

 

 

সর্বাধিক পঠিত