• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকার পাশাপাশি নিধন হচ্ছে পাঙ্গাসের পোনা

প্রকাশ:  ২৩ মার্চ ২০১৯, ২০:৩৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অসাধু জেলেরা নদীতে জাল না ফেলে ভিন্ন কায়দা ব্যবহার করে নিধন করছে পাঙ্গাসের পোনা। প্রতিদিন শত শত জেলে সরকারের কাছ থেকে সকল প্রকার সুবিধা গ্রহণ করার পরও চাঁই পেতে লাখ লাখ পাঙ্গাসের পোনা নিধন করছে। এতে করে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করার ফলে সরকার তথা দেশ মৎস্য সম্পদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
    অসাধু জেলেরা পাঙ্গাসের পোনা প্রতি কেজি ৩শ’ থেকে ৪শ’টাকা কেজি ধরে বিক্রি করছে স্থানীয় হাট-বাজারে। মার্চ-এপ্রিল ২ মাস পদ্মা-মেঘনা নদীতে সকল প্রকার মাছ ধরা, ক্রয়-বিক্রয় পরিবহন নিষিদ্ধ করা হলেও জেলেরা নদীতে দিনে ও রাতে কারেন্ট জালের মাধ্যমে ইলিশের পোনা জাটকা নিধন করছে। প্রশাসন যখন জাটকা ধরা ও নিধন প্রতিরোধের কাজে ব্যস্ত থাকছে ঠিক সেই সময় এক শ্রেণীর জেলে জাটকা ধরার ফাঁকে ফাঁকে নদীর কিনারে ও নদীর পাড় থেকে ২৫/৩০ গজ দূরে দূরে চিকন ফাঁকের ৪/৫ হাত লম্বা লম্বা চাঁইয়ের ভেতরে চাউলের কুড়ার সাথে সিধল শুঁটকি মিশিয়ে চাঁই পেতে রাখে। শুঁটকির গন্ধে পাঙ্গাসের পোনা চাঁইয়ের ভেতরে প্রবেশ করে আটকে যায়। তারপর অসাধু জেলেরা গভীর রাতে অথবা ভোরে নদীর পাড়ে গিয়ে চাঁই উঠানোর পর প্রতিটি চাঁইয়ের ভেতর থেকে ৮/১০ কেজি করে পাঙ্গাসের পোনা বের করে সাথে সাথে নদীর পাড়েই পাইকারী মূল্যে ২শ’ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করে দেয়। অনেক জেলে স্থানীয় হাট-বাজারে গিয়ে নিজেরা বিক্রি করছে। এসব পোনা নিধন না হলে প্রতিটি পোনা ২/৩ মাস নদীতে থেকে বড় হয়ে ৬/৭ কেজি হতে শুরু করে ১০ কেজি ওজন হয়ে থাকে। যেসব জেলে এই পোনা নিধন করছে তারাই নদীতে জাল ফেলে কিছুদিন পর বড় আকারের পাঙ্গাস বিক্রি করে নিজেরা লাভবান হতে পারে। এসব বড় আকারের পাঙ্গাস প্রতি কেজি ৮শ’ হতে ১হাজার টাকা ধরে বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়া এ নদীর পাঙ্গাস মাছ অন্য মাছের তুলনায় অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে বলে জেলেরা জানান। তারপরও জেলেরা নিজেদের লাভের দিক বিবেচনা না করে পাঙ্গাসের পোনা নিধনে মেতে উঠছে প্রকাশ্যে।
    চাঁদপুর নৌ-সীমানার পদ্মা-মেঘনা নদীর হাইমচর, নীলকমল, ঈশানবালা, আলুরবাজার, আখনেরহাট, তারাবুনিয়া, রাজরাজেশ্বর, ঘাশিরচর, হরিনা, চরলক্ষীপুর, সাখুয়া, ইব্রাহিমপুর, দোকানঘর, এখলাসপুর, ষাটনল, আনন্দবাজার, সফরমালী, কোড়ালিয়ার চর, নিশিবিল্ডিং এলাকার নদীপাড়, উত্তর শ্রীরামদী নদীপাড়, টিলাবাড়ি, পুরাণবাজার হরিসভাসহ চাঁদপুর নৌ-সীমানার অসংখ্য স্থানে অসাধু জেলেরা জাটকার পাশাপাশি ৩/৪ ইঞ্চি সাইজের পাঙ্গাসের পোনা অবাধে নিধন করে যাচ্ছে। পাঙ্গাসের পোনার শরীরে বড় বড় কাঁটা থাকায় জেলেরা এসব পোনা মাছ পাতিলে অথবা মাটিকাটার ওড়ায় করে পাচার করে থাকে। চাঁদপুর শহরের হাট-বাজার ছাড়া গ্রাম-গঞ্জের বাজারে এখন প্রকাশ্যে পাঙ্গাসের পোনা খুচরা বাজারে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে। জেলেরা জানান, মাঝে মধ্যে বড় আকারে পাঙ্গাসের পোনার জাঁক (তাদের ভাষায় পাঙ্গাসের পোনার চাক) তাদের জালে অথবা চাঁইয়ে ধরা পড়লে তারা সেগুলো ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় পাচার করে থাকে। এতে করে তারা চাঁদপুরের চাইতে বেশি দাম পেয়ে থাকে।
    চাঁদপুরের প্রশাসন জাটকা নিধন রোধে ব্যাপক তোড়জোড় দেখালেও পাঙ্গাসের পোনা ধরা বন্ধে তেমন তোড়জোড় দেখাচ্ছে না। প্রশাসনের কিছু সংখ্যক অসাধু কর্তা ও ব্যক্তির সাথে সমঝোতার মাধ্যমে জেলেরা এসব পাঙ্গাসের পোনা ধরে প্রকাশ্যে চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন বাজারগুলোতে বিক্রি করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত সোমবার সরেজমিনে চাঁদপুর শহরের পালবাজার, নতুনবাজার, পুরাণবাজার, বিপণীবাগ বাজার, ওয়্যারলেস বাজার, ফিশারী এলাকার বাজার, ভুঁইয়ার বাজার, কাঁচ্চা কলোনী বউবাজার, রেলওয়ে ক্লাব রোড বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে প্রকাশ্যে পাঙ্গাসের পোনা বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া একশ্রেীর মাছ বিক্রেতা শহরের পাড়া-মহল্লায় সকালে ও সন্ধ্যায় ফেরি করে এসব পাঙ্গাসের পোনা ৫শ’ টাকা কেজি ধরে পর্যন্ত বিক্রি করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন কঠোর হলে পাঙ্গাসের পোনা নিধন করা সম্ভব হবে বলে সচেতন মহল মনে করেন। চাঁদপুর নৌ-সীমানায় মার্চ-এপ্রিল ২ মাস সকল ধরনের মাছ ও জাল ফেলা নিষেধ থাকলেও চাঁদপুরের অধিকাংশ হাট-বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সকল প্রকার নদীর মাছের আমদানি ও বিক্রি অব্যাহত ভাবে চলছে। মনে হয় এ বাজার মনিটরিং করার জন্যে সরকারের পক্ষের যেন কেউ নেই।
    এ ব্যাপারে চাঁদপুরের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পাঙ্গাসের পোনা ধরা আমাদের নিধেষাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে। বড়-বড় চাঁই ফেলে পাঙ্গাসের পোনা ধরা হচ্ছে। এ ব্যাপারেও আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিবো। ২ মাস সকল মাছ ধরা নিষেধ রয়েছে।