আদালতে নির্দোষ প্রমাণের পর চাকুরি ফিরে পেতে চান বিপ্লব কান্তি সরকার
অবশেষে দীর্ঘদিন ধরে অবজ্ঞা ও লোকজনের কাছে অপরাধী হয়ে থাকা থেকে দায় মুক্তি পেলেন বিপ্লব কান্তি সরকার। আদালত মামলাটি খারিজ করে দিয়ে জব্দকৃত মুঠোফোন ও মুঠোফোনে ব্যবহৃত দুটি সিমকার্ড ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু মামলা থেকে মুক্তি পেলেও চাকুরি এখনো ফিরে পাননি। তা নিয়ে চলছে টালবাহানা। স্কুল কর্তৃপক্ষ দাঙ্গাসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে তাকে চাকুরিতে পুনর্বহাল করতে চাচ্ছে না। যেই অপরাধের কারণে তাকে চাকুরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের পর পুরোপুরি বরখাস্তের চেষ্টা দীর্ঘদিন ধরে চালচ্ছে একটি মহল, সেই অপরাধে তিনি যে অপরাধী নয় তা আদালত রায়ের মাধ্যমে বলে দিয়েছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক বিপ্লব কান্তি সরকারের দীর্ঘদিনের আর্তনাদের কথা এটি।
সাইবার ট্রাইব্যুনালের রায়ের সার্টিফায়েড কপি হাতে নিয়ে তিনি জানান, ২০১৯ সালে তার মুঠোফোনে ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হ্যাক করে ধর্মীয় উস্কানিমূলক তথ্য দিয়ে একটি চক্র তাকে ফাঁসাতে চেষ্টা করে। তিনি পরবর্তীতে হ্যাকের বিষয়টি বুঝতে পেরে তাৎক্ষণিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে এবং এটি তার পোস্ট নয় বলে বিবৃতি দেন। কিন্তু কপাল খারাপ। কে শুনে কার কথা। বিষয়টি তার কর্ম এলাকায় কে বা কারা ছড়িয়ে ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি করে। তাকে হেস্তনেস্ত করার নানা চেষ্টা করা হয়। থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। তাৎক্ষণিক তিনিও থানায় এসে এ বিষয়ে জিডি করেন।
তারপরও স্থানীয় এক যুবক তার বিরুদ্ধে ২৮(২) ও ৩১(২) ধারায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ অনুযায়ী ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও অনুভূতিতে আঘাত হানা এবং জনমনে বিভ্রান্তি ও উত্তেজনা সৃষ্টির অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করেন। এ সময় তার মুঠোফোন ও দুটি সিমকার্ড জব্দ করা হয়। ফলে সম্মানের ভয়ে দীর্ঘদিন তিনি স্ত্রী-সন্তান রেখে পালিয়ে থাকতে বাধ্য হন।
পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিপ্লব কান্তি সরকারের মুঠোফোন, সিমকার্ড, ফেসবুক আইডিসহ জব্দকৃত সকল কাগজপত্রসহ উক্ত পোস্টটি তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে করেছে কিনা তা যাচাই ও পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্যে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (সাইবার ফরেনসিক)-এর নিকট প্রেরণ করে।
পরবর্তীতে ফরেনসিক ল্যাবরেটরী (ঢাকা) আইপ ফরেনসিক শাখা/আইটিএফ-এর স্মারক মূলে রিপোর্ট প্রদান করা হয়। রিপোর্টে ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টিকারী পোস্ট করার তথ্য পাওয়া যায়নি বলে বরং বিপ্লব কান্তি সরকারের হ্যাক হওয়া আইডি থেকে পোস্ট দেয়া পোস্টে কিছু কমেন্টস পাওয়া যায়। সেই আলোকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলাটির ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টিকারী পোস্টটি বিপ্লব কান্তির নয় বলে চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রদান করেন। পরবর্তীতে বিগত বছরের ৩০ নভেম্বর সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস্সামছ জগলুল হোসেনের আদালত মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহণ করে বিপ্লব কান্তি সরকারকে নির্দোষ বলে রায় (আদেশ নং-০২, আদেশের তাং-২৩/১১/২০২০) দেয়। একই সাথে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন ও সিমকার্ড দুটি ফেরত দানের নির্দেশ দেয়।
মামলার রায়ের সার্টিফায়েড কপি হাতে পাওয়ার পর বিপ্লব কান্তি সরকার শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলেও তারা তাকে চাকুরিতে পুনর্বহালের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দেয় নি। বরং তাকে সেখানে পুনর্বহাল করলে দাঙ্গা সৃষ্টির নতুন কাল্পনিক কথা বলছে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে বিপ্লব কান্তি সরকার বলেন, তাকে হেনস্তা করার জন্য কে বা কারা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তার সুন্দর জীবনটিকে বিষিয়ে তুলেছে। তিনি সমাজ, সংসার এবং নিজের পরিচিতজনের কাছেও বাঁকা চোখে দেখার পাত্রে পরিণত হন। শিক্ষার্থীদের কাছে প্রিয় শিক্ষক অপ্রিয় পাত্রে পরিণত করার নানা চেষ্টা হয়। কিন্তু আদালত আমি যে নির্দোষ তার প্রমাণ দিয়েছে রায়ের মাধ্যমে। এখন আমি আমার নিজের বিদ্যালয়ে ফিরে যেতে চাই। একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের আলোকিত করার যেই শপথ নিয়ে শিক্ষকতা পেশায় এসেছিলাম তার পূর্ণতা দিতে চাই। সে জন্যে প্রয়োজন সকলের সহযোগিতা। যেই ঘটনার সাথে আমি জড়িত নই, তার জন্য আমি সারাজীবন কেন কষ্ট পাবো। এর থেকে মুক্তি চাই।