মতলব উত্তরে ছাত্রদল-যুবদল নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা-লুটপাট

মতলব উত্তর ষাটনল ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা-কর্মীদের বাড়ি-দোকানপাটে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। এতে দফায় দফায় এ হামলায় অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা৷ মতলব উত্তর বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মশাল মিছিল করাকে কেন্দ্র করে গত শনিবার রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উপজেলার ষাটনল এলাকায় এ হামলা চলে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা৷
স্থানীয় লোকজন ও বিএনপি নেতা-কর্মীরা জানান, শনিবার মতলব উত্তর ষাটনল কাওছার মোল্লাসহ বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাত ৯টার দিকে মতলব উত্তর থেকে ষাটনল পর্যন্ত একটি মশাল মিছিল করে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা৷ মিছিলের খবর পেয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংঠনের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিয়ে মিছিল করে৷ তাৎক্ষণিক সমাবেশও করেন তারা৷ এ সমাবেশের পরই হামলার ঘটনাগুলো ঘটে৷
বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের একাধিক নেতা-কর্মীর অভিযোগ, ষাটনল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের  সাধারণ সম্পাদক নাইম, তার ভাই যুবলীগ নেতা রানা, উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান, যুবলীগ নেতা আল-আমিন ও আব্দুল্লাহসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হামলায় অংশ নেয়৷ তারা উপজেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কাওছার মোল্যা বাড়িতে হামলা চালিয়ে পরিবারের সদস্যকে আহত করে৷ তাদের মধ্যে মাসুদুরের বাবা ও মা মতলব উত্তর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷
একই রাতে ষাটনল ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি আলমগীর হোসেন, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি রনি হাসান, তার মামা মো. শরীফ ও ছাত্রদল কর্মী মো. আলিফের দোকান ও রেস্তোরাঁ লুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের৷
ছাত্রদল নেতা নাদিম বলেন, রাতে মশাল মিছিল বের করেন তারা৷ উপজেলার ষাটনল এলাকায় মিছিল শেষ করার কিছুক্ষণ পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তার বাড়িঘরে হামলা চালায়৷ বাড়ির সামনে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণেরও অভিযোগ করেন তিনি৷
হামলার সময় তার বাড়িতে থাকা  বাবা, মা, কিশোরী বোন,  পিটিয়ে আহত করা হয়েছে বলে জানান মাসুদুর৷ গুরুতর আহত অবস্থায় বাবা-মা চাঁদপুর একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন৷
বাড়িঘর ভাঙচুর ছাড়াও ঘরে থাকা নগদ ৭৩ হাজার টাকা, টেলিভিশন ও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অন্তত দেড় লাখ টাকা মূল্যের পণ্য লুট করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ এ ছাত্রদল নেতার৷ হামলার সময় ঘটনাস্থলে এক গাড়ি পুলিশও উপস্থিত ছিল বলে জানান তিনি৷
কাওছার মোল্যা বাড়িতে হামলার পূর্বে ষাটনল ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি শাকিল আহমেদের বাড়িতে হামলা করা হয়৷ তার বাড়ির মূল গেট ভাঙতে না পেরে পাশের মুদি দোকানের তালা ভেঙে নগদ টাকা ও চাল লুট করে হামলাকারীরা৷ রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত ছাত্রদলের বিভিন্ন নেতা-কর্মীর দোকান ও রেস্তোরাঁ লুট হয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপি নেতা-কর্মীর৷
শাকিল বলেন, 'রাজনীতির নামে লুটপাট চালাচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা৷ ও বিভিন্ন গ্রুপ মিলে বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাট করার নাম রাজনীতি না, এগুলো ডাকাতি৷'
তবে হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ বা সহযোগী সংগঠনের কেউ জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন মতলব উত্তর  উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূঁইয়া৷ তিনি বলেন, 'হামলার কোনো ঘটনা শুনিনি৷ এমন কোনো ঘটনায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কেউ জড়িত না৷'
এদিকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান বলেন, 'গত বিশ দিনে অন্তত ১৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে মতলব উত্তর ৷ এসব হামলায় আওয়ামী লীগের দলের নেতা-কর্মীরা ও বিভিন্ন গুরুপ অংশ নিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়৷ সবকিছু জানার পরও পুলিশ-প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয় না৷'
এ বিষয়ে মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও তার সংযোগ পাওয়া যায়নি৷ তবে জেলা পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) আবীর হোসেন বলেন, 'গতরাতে দুই পক্ষেরই অবস্থানে কিছুটা উত্তেজনা ছিল৷ পুলিশও যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয় সে বিষয়ে তৎপর ছিল৷ তবে হামলার মতো কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে কেউ অভিযোগ করেনি৷ লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷'