প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধ না হলে পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে : জেলা প্রশাসক
পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হলো পলিথিনের ব্যবহার। প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ না হলে এবং জনগণকে সচেতন করা না হলে পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান। গতকাল ৫ জুন পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রতি বছর সারা বিশে^ ৮০ লাখ টন পলিথিন সমুদ্রে গিয়ে পড়ে এবং বাংলাদেশে ৩ হাজার টন পলিথিন প্রতি বছর ব্যবহার হচ্ছে। প্লাস্টিকের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ রোধ করার জন্য আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, শুধু পলিথিন নয়, আমরা বিভিন্নভাবে পরিবেশ দূষণ করে থাকি। যার মধ্যে অন্যতম হলো শব্দ দূষণ। শব্দ দূষণ হলো একটা নীরব ঘাতক। জেলা প্রশাসক পলিথিনের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলারও আহ্বান জানান। সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও টিআইবি এবং অন্যান্য সংগঠনকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে জনসচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করার আহ্বান তিনি।
‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’ প্রতিপাদ্যে ‘সবাই মিলে করি পণ, বন্ধ হবে প্লাস্টিক দূষণ’ শ্লোগানে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর, চাঁদপুরের আয়োজনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে গতকাল ৫ জুন বিশ^ পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে র্যালি ও আলোচনা সভা এবং চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। র্যালি শেষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বশির আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) পলাশ কান্তি নাথ।
প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে চাই আইনের কঠোর প্রয়োগ ও সকল অংশীজনের ভূমিকাসহ টিআইবির দাবিসমূহ উপস্থাপন করেন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), চাঁদপুরের সভাপতি ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া। দাবিসমূহ হলো : পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর সংশ্লিষ্ট ধারা সংশোধনীর মাধ্যমে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ও লেমিনেটেড প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করতে হবে; প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহার হ্রাস এবং প্লাস্টিক বর্জ্যরে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য প্লাস্টিক দূষণসংক্রান্ত একটি ‘বিধিমালা’ প্রণয়ন করতে হবে; সম্ভাব্য ক্ষেত্রসমূহে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ বা সীমিত করার পাশাপাশি বায়েডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহারকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে; প্লাস্টিকের বেআইনি উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার রোধে দূষণ-কর আরোপ এবং প্লাস্টিক দূষণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনের স্বাধীন ও কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা কর্তৃক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে প্লাস্টিক বর্জ্য আলাদা করে সংগ্রহ, পৃথককরণ, পরিবহন, পরিশোধন করতে হবে এবং প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে; প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করে উৎপাদিত প্লাস্টিক পুর্নব্যবহার ও পুনঃচক্রায়ন নিশ্চিতে সরকার ও বেসরকারি খাত কর্তৃক বিভিন্ন প্রণোদনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে; টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-১৪-এর অর্জন নিশ্চিতে প্লাস্টিক পণ্য হতে নদী ও সমুদ্র দূষণ রোধের পাশাপাশি সমুদ্র সম্পদের সংরক্ষণ নিশ্চিতে সমুদ্র অধিদপ্তর, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত তদারকি কার্যক্রম জোরদার করতে হবে; দূষণ রোধে ব্যবহৃত তহবিলসহ সার্বিকভাবে পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং আর্থিক লেনদেন ও কর্মসম্পাদন প্রতিবেদন স্বপ্রণোদিতভাবে প্রকাশ করতে হবে; প্লাস্টিক দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সাধারণ জনগণসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক সুদীপ্ত চাঁদপুরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এমআর ইসলাম বাবুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ মাসুদ হোসেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ।
অনুষ্ঠানের শুরতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন হাফেজ ইব্রাহীম খলিল। পবিত্র গীতা পাঠ করেন চন্দনা রাণী শীল। উপস্থিত ছিলেন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীবৃন্দ, সনাক-চাঁদপুরের সদস্য, অ্যাকটিভ সিটিজেন গ্রুপ (এসিজি) ও ইয়েস গ্রুপের সদস্যবৃন্দ। আলোচনা সভা শেষে পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।