• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুরগামী লঞ্চে দিনের আলোতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, আটক ১

প্রকাশ:  ২২ ডিসেম্বর ২০২০, ১৬:৩৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া ও সুরেশ্বর থেকে ছেড়ে আসা চাঁদপুরগামী এমএল শাহ আলী-৪ লঞ্চে দুর্ধর্ষ ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। তবে এই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। এ ঘটনায় বিল্লাল হোসেন (৪৫) নামে এক ডাকাতকে যাত্রীদের সহায়তায় আটক করেছে পুলিশ। ২১ ডিসেম্বর সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পদ্মা-মেঘনা নদীর চাঁদপুর সীমান্তবর্তী এলাকার সখীপুর থানার কাচিকাটা নামক স্থানে ডাকাতির এ ঘটনা ঘটে।

শরীয়তপুরের ভোজেশ্বর থানার পাঁচক গ্রামের কোহিনুর বেগম (৫০) নামে এক যাত্রী জানান, তারা একই পরিবারের ৪জন লঞ্চে ছিলেন। ডাকাত সদস্যরা তাদেরকে জিম্মি করে স্বর্ণ-গহনা নিয়ে যায়। নড়িয়া থানার উত্তর নড়িয়া গ্রামের আরেক যাত্রী আব্দুল জাব্বার মাঝি বলেন, তিনি চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে আসছিলেন। ডাকাত সদস্যরা তার নগদ ২০ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। আরেক যাত্রী সুমন মিয়া বলেন, ডাকাতরা তার নগদ ৭ হাজার টাকা ও মোবাইল নিয়ে গেছে।

চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, তার ভাবী আফরোজা আক্তার শিল্পী ও তার বাবা লঞ্চে চাঁদপুর আসছিলেন। এ সময় ডাকাতিকালে তাদের কাছ থেকে ২৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও তার বাবার কাছ থেকে মালামাল কেনার ৫ লাখ টাকা নিয়ে যায়।

চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার নিতাইগঞ্জ নতুন রাস্তা এলাকার জনৈক কাঁচামাল ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন মিয়ার দুই মেয়ে সাথী ও পান্না শ্বশুরবাড়ি নড়িয়া থেকে বাপের বাড়িতে আসছিলেন। তারা দুজনও ডাকাতের কবলে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছে বলে চাঁদপুর পৌর ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সরদার জানিয়েছেন। ডাকাতিকালে লঞ্চে থাকা সকল যাত্রীর মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে ২০ মিনিটের মধ্যে ডাকাত দল স্পীডবোট নিয়ে চলে যায়।

লঞ্চের মাস্টার হেলাল হোসেন বলেন, সকাল ৮টায় নড়িয়া থেকে লঞ্চটি ছেড়ে আসে। সাড়ে ৯টার দিকে কাচিকাটার দিকে আসলে দুটি স্পীড বোট দিয়ে আসা ১৮ জনের সংঘবদ্ধ ডাকাত দল লঞ্চে উঠে। প্রথমে তারা লঞ্চের ড্রাইভারকে মারধর করে এবং লঞ্চের গ্ল্লাস ভাংচুর করে। পরবর্তীতে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে লঞ্চে থাকা ৫০জন যাত্রীকে জিম্মি করে নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার, গহনা ও মূূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়।

চাঁদপুর নৌ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম বলেন, শাহ আলী লঞ্চটি সকাল ১১টার দিকে চাঁদপুর ঘাটে এসে পেঁৗছায়। পরে এসআই জয়নাল ডাকাত সদস্যকে থানায় হস্তান্তর করে। ডাকাতির ঘটনায় লঞ্চের ম্যানেজার আক্তার হোসেন মামলা করেছেন। আটক ডাকাত সদস্য থানা হেফাজতে রয়েছে।

আক্তার হোসেন বলেন, ডাকাতরা যখন লঞ্চে উঠে সেই সাথে আটক ডাকাতটিকে তিনি লঞ্চে উঠতে দেখেছেন। আটক ডাকাত মোঃ বিল্লাল হোসেন, তার বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার বাহেরগাঁও, খুরুম খালি। সে থাকে নারায়ণগঞ্জ। সে বিআইডাবিস্নউটিএ'র মাস্টার রোলের কর্মচারী। সে কাচিকাটা পন্টুনের দায়িত্বে রয়েছে। সে জানায়, তার সাথে আরেকজন ছিলো, তাদের দুজনকে ২০ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ডাকাতরা মারধর করে ডাকাতদের স্পীডবোটে উঠিয়ে নিয়ে যায়। তার পাশেরজনকে কী করেছে সে বলতে পারে না। ডাকাতরা লঞ্চে ডাকাতি করার সময় তাকে লঞ্চে উঠিয়ে দেয়। সে জানায়, তিনজন ডাকাতকে সে চিনতে পেরেছে। তারা হলো মেঘনা নদীতে বালু কাটার গডফাদার কিবরিয়া, জামাল ও রনি। দুটি স্পীডবোটে ১৮ জন ডাকাত ছিলো। ডাকাতির শিকার লঞ্চযাত্রী নিলুফা বেগম, মাকছুদা, জুবায়ের, রোনি, মাধবসহ অন্য যাত্রীদের অভিযোগ, আটক মোঃ বিল্লাল হোসেন ডাকাত দলের সাথে ছিলো। ডাকাত দলের সাথে যেতে না পেরে যাত্রীদের সাথে মিশে গিয়েছিল। ভাগ্য খারাপ ধরা পড়ে। এখন সাধু সাজার নাটক করছে।

চাঁদপুর নৌপুলিশ সুপার বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে নদীপথে ডাকাতরা সক্রিয় হয়ে উঠছে। আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রতিটি লঞ্চে সাদা পোশাকধারী পুলিশ মোতায়েন করবো এবং ডাকাতদের আস্তানা চিহ্নিত করে ডাকাতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবো। ডাকাত সন্দহে আটক মোঃ বিল্লাল হোসেন আসলে ডাকাত কিনা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।

নৌ পুলিশ সুপার (এসপি) কামরুজ্জামান বলেন, লঞ্চে থাকা নৌ পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জয়নাল মোঃ বিল্লাল খান (৪৫) নামে এক ডাকাতকে আটক করতে সক্ষম হয়। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পাইন্দি নতুন মহল্লায়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং ডাকাতির সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

উল্লেখ্য, গত এক মাসে মতলব উত্তর উপজেলা ও মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া মেঘনা নদীতে দেড় তলা বিশিষ্ট একই ধরনের লঞ্চে দুটি ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। এসব ঘটনায় থানায় মামলা হয়। সোমবার চাঁদপুর-শরীয়তপুর পদ্মা ও মেঘনা নৌ সীমানায় ঘটে গেল আরেকটি লঞ্চ ডাকাতির ঘটনা। এসব নৌ ডাকাতির ঘটনায় পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

সর্বাধিক পঠিত