• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের উদ্যোগে ‘স্কুল শিক্ষকদের অংশগ্রহনে চক্ষু স্বাস্থ্য পরিচর্যা শীর্ষক কর্মশালা’ অনুষ্ঠিত

প্রকাশ:  ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:২২
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল, চাঁদপুরের আয়োজনে আর্ন্তজাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর সহায়তায় ন্যাশনাল চাইল্ডহুড ব্লাইন্ডনেস প্রজেক্ট (এনসিবিপি) এর আওতায় গতকাল মঙ্গলবার ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে “ওরিয়েন্টশন অন পেডিয়াট্রিক প্রাইমারী আই কেয়ার ফর স্কুল টিচার্স” শীর্ষক দিনব্যাপী একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা হাসপাতালের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত কর্মশালায় হাসপাতালের চীফ কনসালটেন্ট ডাঃ মোঃ আনোয়ার হোসেন শেখ এর সভাপতিত্বে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার ২৫টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫০ জন শিক্ষক শিক্ষিকা অংশগ্রহণ করেছেন। দুই পর্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ফরিদগঞ্জ উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্দুল মোতালেব। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা অফিসার মহোদয় প্রান্তিক পর্যায়ে চক্ষু চিকিৎসা সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের এই ধরনের মহতী উদ্যোগের প্রসংশা করেন। তিনি বলেন, বিশেষায়িত চক্ষু হাসপাতালগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম একটি হাসপাতাল যেখানে উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে দাতা সংস্থাসমূহের সহযোগীতায় বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন করা হয় এবং যথোপযুক্ত সুবিধাভোগীদের চিহিৃত করে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠানটি বদ্ধপরিকর। তিনি এ ধরনের কর্মশালা আয়োজনের জন্য হাসপাতালের কার্যনির্বাহী পরিষদকে এবং অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশকে শিশুদের চক্ষু চিকিৎসার ক্ষেত্রে যুগোপোযুগী সহযোগীতা প্রদান করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

পবিত্র কোরআন তেলায়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে হাসপাতালের ম্যানেজার এডমিনিষ্ট্রেশন শামীম খান এর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাসপাতালের সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা মোঃ আবু জাফর। তিনি হাসপাতালের সার্বিক কার্যক্রমের বিষয়ে সকলকে অবগত করেন। তিনি বলেন, হাসপাতালটি অন্ধত্ব নিবারনে বিশেষ করে শিশু অন্ধত্ব নিরসনে অত্র অঞ্চলে বিনামূল্যে স্কুল সাইট টেস্টিং প্রোগ্রাম, ভ্রাম্যমান চক্ষু চিকিৎসা শিবির এবং প্রাথমিক চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্র (স্থায়ী চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্র) স্থাপনসহ যেভাবে সেবার ধরন প্রসার করে আসছে এবং শিক্ষক-শিক্ষিকা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের  কার্যকর প্রশিক্ষণ প্রদানসহ দক্ষ জনবল সমৃদ্ধ হাসপাতাল সেবা নিশ্চিত করে আসছে, তার ফলে আগামী অল্প সময়ে অত্র অঞ্চলে অন্ধত্বের হার শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। উক্ত কর্মশালায় সভাপতি মহোদয় ভবিষ্যতে অত্র অঞ্চলের প্রতিটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসায় ছাত্র-ছাত্রীদের দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচী বাস্তবায়ন করার আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি উক্ত প্রশিক্ষনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নে প্রশিক্ষনার্থীদের সহযোগীতা কামনা করেন এবং দাতা সংস্থা অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও হাসপাতালের কার্যনির্বাহী পরিষদের সকল সদস্য, কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে ধন্যবাদ জানান।

প্রাক মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সময় হতেই চাঁদপুর ও আশে-পাশের জেলাসমূহে অন্ধত্ব নিবারন, দূরীকরন এবং চক্ষু রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময় বিষয়ে জনসাধারনের মধ্যে সচেতনতা একটি অন্যতম সমস্যা হিসেবে পরিগনিত ছিল। মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল ১৯৮২ সনে প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমের পাশাপাশি চাঁদপুর জেলাসহ এর পাশ্ববর্তী জেলা সমূহে ভ্রাম্যমান চক্ষু চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছে। হাসপাতালটি জুন ২০২০ পর্যন্ত স্বল্পমূল্যে ১১,৭৪,৫৮৮ জন রোগীকে বহিঃবিভাগ এবং ৯২,৫০৭ জন রোগীকে অন্তঃবিভাগে অপারেশন সেবা প্রদান করেছে। অন্ধত্ব নিবারনে সহায়তাদানকারী আর্ন্তজাতিক দাতা সংস্থা আন্ধেরী হিলফি জার্মানী, অরবিস ইন্টারন্যাশনাল, দি ফ্রেড হলোজ ফাউন্ডেশন, ডাচ বাংলা ব্যাংক ফাউন্ডেশন, রোটারী ইন্টারন্যাশনাল ও অন্যান্য সহযোগী সংস্থার সহযোগীতায় জুন ২০২০ পর্যন্ত সম্পূর্ন বিনামূল্যে ১,১২২ টি ভ্রাম্যমান চক্ষু শিবিরের মাধ্যমে ১১,৪০,১২২ জন রোগীকে বহিঃবিভাগ চিকিৎসা এবং ১,২০,৫৩৮ জন চক্ষুরোগীকে ছানি অপারেশন সেবা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া বিনামূল্যে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা কার্যক্রমের আওতায় জুন ২০২০ ইং পর্যন্ত ১,১৮৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫,৪১,৯৭৯ জন ছাত্র-ছাত্রীর দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ঔষধ ও চশমা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে এবং টিচার্স ডেমোনেষ্টশন পোগ্রামের মাধ্যমে ১,১১৫ টি বিদ্যালয়ের ২,২৩০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে প্রশিক্ষণ উপকরনসহ প্রাথমিক চক্ষু স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। উলে−খ্য যে, প্রত্যান্ত অঞ্চলের রোগীদের দোরগোড়ায় চক্ষু চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে লক্ষীপুর জেলার সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ ও কমলনগনর উপজেলায় এবং চাঁদপুর জেলার মতলব (দঃ) উপজেলার নারায়নপুর এবং কচুয়া উপজেলার সাচারে সর্বমোট ০৬ টি প্রাথমিক চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্র তথা ভিশন সেন্টার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

কর্মশালার দ্বিতীয় অধিবেশনে চোখের গঠন ও কাজ এবং চোখের বিভিন্ন রোগ এবং দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা ও চক্ষু স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে অংশগ্রহনকারীদের ভূমিকা শীর্ষক মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনাসহ বিভিন্ন গ্র“প ওয়ার্কের মাধ্যমে বিস্তারিত আলোচনা করেন হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডাঃ মোঃ রাশেদুর রহমান তালুকদার। কর্মশালায় অংশগ্রহনকারী প্রত্যেক প্রশিক্ষণাথী কে ব্যাগ, স্বাস্থ্য সহায়িকা, ফ্লীপ চার্ট, ভিশন চার্ট ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ উপকরণ প্রদান করা হয়েছে এবং ভিশন চার্ট ব্যবহারের মাধ্যমে দৃষ্টিত্রুটি সনাক্তকরনের বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষন প্রদান করা হয়েছে।