• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষিত

চাঁদপুর-ঢাকা নৌরূটে লঞ্চের ভাড়া বৃদ্ধি

প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ, অতিরিক্ত ভাড়া ফেরত দিল কর্তৃপক্ষ

প্রকাশ:  ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:২০ | আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:২৪
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রিন্ট

দেশের সকল গনপরিবহরের ভাড়া  ১ সেপ্টেম্বর থেকে সরকার কমিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিলেও চাঁদপুরে সরকারের নির্দেশনা না মেনে চাঁদপুর- ঢাকা-চাঁদপুরের মধ্যে নিয়মিত ২৪টি লঞ্চ চলাচল করছে। এদের মধ্যে বেশীর ভাগ লঞ্চ যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া বৃদ্বি করে প্রতিদিন হাজার-হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিচেছ লঞ্চ কর্তৃপক্ষ । এতে করে এ পথে প্রতিদিন চলাচলকারী সাধারন যাত্রীরা লঞ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে জিম্মি হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচেছ। যাত্রীদের অভিমত নদী পথে চলাচলের সময় মধ্য নদীতে লঞ্চ মালিকদের নির্দেশে লঞ্চের ভিতরে দায়িত্বে থাকা কেরানী ও  স্টাফরা যাত্রীদের সাথে খারাপ আচরন, তাদেরকে এক প্রকার জিম্মি ও তাদের সাথে প্রতারনা করে তাদেরকে চাপ প্রয়োগ করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে নিচেছ বলে যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কয়েকজন যাত্রী জানান,সোনারতরী লঞ্চ মালিক সাবেক পুলিশ সুপার হওয়ায় ও বর্মমানে লঞ্চ সমিতির সভাপতি হওয়ায় এ লঞ্চের কর্মকর্তা ও কর্মচার্রীরা যাত্রীদেরকে যাত্রীর মর্যাদা নাদিয়ে তাদের সাথে নিজেদের ইচছামত ব্যবহার করছে এবং যাত্রীদেরকে জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে নিচেছ। অনেকের প্রশ্ন মালিক নিজে বিষয়টি আজো যানেন কিনা? রিপোটিংয়ের মাধ্যমে মালিককে যাত্রীদের বিষয়ে অবগত করা হলে হয়তো যাত্রীদের এ হওরানি থেকে রক্ষা করবেন।
এদিকে গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় ঢাকা নৌ-টার্মিনাল থেকে এমভি- দেশান্তর প্রস্তাবিত সোনার তরী নামক লঞ্চটি ছেড়ে চাঁদপুর নৌ-টার্মিনালে এসে পৌছে রাত সাড়ে ৯টায়। এ লঞ্চটিতে বিভিন্œ শ্রেনীর প্রায় ৩শ’যাত্রী ছিল। দেখা যায় সৌখিন শ্রেনীর যাত্রীদের টিকেটের মূল্য ২৫০ টাকা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও প্রতিজন যাত্রীর কাছ থেকে ২৮০টাকা,নীচে চেয়ার সিটের যাত্রীদের কাছ থেকে ১৫০টার স্থলে ১৮০টাকা,কেবিনের ভাড়া ৫০০টাকার স্থলে ৬০০টাকা,ডাবল কেবিনের ৮০০ টাকার স্থলে ১হাজার টাকা ও ডেক শ্রনীর যাত্রীদের কাছ থেকে ১শ’টাকার স্থলে ১৩০টাকা,এ ভাবে প্রতিটি যাতীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার ফলে যাত্রীরা প্রতিবাদ ও  বিক্ষোভ করে। তখন তাদেরকে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিবে বলে লঞ্চের সুপার ভাইজার আশ্বাস্ত করে। পরে চাঁদপুর নৌ-টার্মিনালে লঞ্চটি ভিড়লে যাত্রীদের মধ্যে ২জন সংবাদ কর্মীসহ প্রায় ২০/২৫জন যাত্রীকে ৫০টাকা ও ১শ’টাকা করে দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে এবং প্রায় ৩শ’ যাত্রীকে  টাকা ফেরত নাদিয়ে তাদের সাথে রিতিমত প্রতারনা করে তাদের কাছে থেকে নেওয়া হাজার-হাজার টাকা অতিরিক্ত ভাড়া ফেরত দেওয়া হয়নি। লঞ্চে আসা ২জন সাংবাদিক যাত্রীকে ব্যাপক আপ্যায়ন করে রিপোট না করার জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ করা হয় চাঁদপুর ঘাটের সুপার ভাইজারের পক্ষ থেকে।
 
এ লঞ্চটি গত শুক্রবার একই সময় ঢাকা থেকে প্রায় ৪শ’যাত্রীনিয়ে ছেড়ে রাত সাড়ে ৯টায় চাঁদপুর এসে পৌছে।  তখন শত-শত যাত্রী এক হয়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করলে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ নিজেদের প্রতারনা ও পরিস্থিতি শান্ত করতে বাধ্য হয়ে তাদের প্রতিজনের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত ভাড়া বাবদ প্রায় ৩০ হাজার টাকা ফেরত দেয় বলে চাঁদপুর নৌ-টার্মিনালে দায়িত্বে থাকা সুপার ভাইজার মো: শওকত আলী বেপারী ্এ প্রতিনিধির কাছে সত্যতা স্বীকার করে  বিষয়টি অবগত করে জানান।

লঞ্চ কর্তৃপক্ষের এ ধরনের প্রতারনায় এতে করে সরকারের নির্দেশনা ভেস্তে যাচেছ। এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহন করাএকান্ত প্রয়োজন বলে ভুক্তভোগী যাত্রীরা তাদের মত প্রকাশ করতে গিয়ে  এ প্রতিনিধিকে জানান। চাঁদপুর বন্দর কর্মকর্তা এ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে আশ্বাস্ত করেন।
বৈশিক মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে কয়েকমাস ঢাকা-চাঁদপুর এর মধ্যে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে সরকারি নির্দেশনায় চলাচল শুরু হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব লঞ্চগুলোতে যাত্রী নেয়ার নির্দেশনা থাকলেও অধিকাংশ লঞ্চ কর্তৃপক্ষ তা না মেনে পরিপূর্ন যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর থেকে যাত্রা করতে দেখা যায়। এতে করোনা মহামারি কমবে দূরের কথা আরও বৃদ্বি পাচেছ বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এ অবস্থার কারনে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন কয়েকটি লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে জরিমানা করেন ও হুশিয়ার করে দেয়। তবে তারা অনির্ধারিতভাবে কিংবা কোন প্রকার নির্দেশনা ছাড়াই লঞ্চে সকল শ্রেণীর যাত্রীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে যাচেছ,বলে অসংখ্য যাত্রীর পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়। আজ মঙ্গলবার সরোজমিনে নৌ-টার্মিনালে গিয়ে এই ধারা ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে বলে দেখা যায়।

সরকার ১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে গনপরিবহনে পূর্বের ভাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে নেয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন। যদি কেউ এই নির্দেশনা অমান্য করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

এদিকে চাঁদপুর-ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী লঞ্চগুলো নিজেদের ইচ্ছেমত যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করছেন। ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে তাদের  পক্ষ থেকে কোন নোটিশ কিংবা যাত্রীদের অবগতির বিষয়ে নির্দেশনাও নেই। তবু তারা পেশীশক্তি প্রয়োগ করে যাত্রীদেরকে বিপদে ফেলে ও জিম্মি করে ভাড়া বাড়িয়ে নিয়ে নিজেরা লাভবান হছেছ। প্রতিটি লঞ্চ কর্র্তৃপক্ষ প্রতিদিন লক্ষ-লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচেছ যাত্রী সাধারনের কাছ থেকে।


মঙ্গলবার,আবুল খায়ের,আলম,জিলান খান,তৌহিদ,মিজানুর রহমান ও শাওন নামে কয়েকজন যাত্রী সোনারতরী-২ লঞ্চের যাতায়াত কালের টিকিট দেখালেন, ওই টিকিটের গায়ে ছাপা অক্ষর চেয়ারের ভাড়া ১৫০টাকা। কিন্তু তারা সীল মেরে নিচেছ ১৮০ টাকা,সৌখিন শ্রেনীর ভাড়া ২৫০টাকা হলেও নেওয়া হচেছ,২৮০টাকা ভাড়া আদায় করছেন। এ ব্যাপারে জরুরী ভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য ভুক্তভোগী যাত্রীরা সরকারের সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর বন্দর কর্মকর্তা ও উপ-পরিচালক মো: কাউছার আহম্মেদ মঠো ফোনে জানান,প্রতিটি লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে ঢাকা ও চাঁদপুর থেকে লিখিত ভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারপর ও তারা সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ উঠেছে।  কোন যাত্রী যদি লিখিত অভিযোগ দেয় তা’হলে আমাদের পক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে। তার পর ও স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা গ্রহন করার চেস্টা করবো। আমাদের উধর্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে।