• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
  • ||
  • আর্কাইভ

করোনার ঔষধ বনাম তথ্যের বিভ্রাট

প্রকাশ:  ১৮ মে ২০২০, ১২:৫০
অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার
প্রিন্ট
সরাবিশ্ব যখন করোনা নামক ভাইরাসের দখলে , বিশের পাঁচশত কোটি মানুষ যখন এই অদৃশ্য শক্তির কাছে এ মূহর্ত পর্যন্ত পরাজিত , পৃথিবীর তাবৎ শক্তিধর দেশগুলো যখন পযুদস্ত , পারমানবিক শক্তিধর দেশগুলো যখন তাদের মানুষকে যুদ্ধের ময়দান থেকে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছে , তাবৎ বিশ্বের মানুষ যখন আতঙ্কিত তখন নানা রকম তথ্যের বিভ্রাট মানুষের সাইকোলজির উপর ব্যপক প্রভাব ফেলছে। সারা বিশ্বের মানুষ যখন এই মহামারি ঠেকাতে এখন একমাত্র ঈশ্বরের উপরই ভরষা করছে , যখন যে যা বলছে হ্যামিলনের বংশিবাদকের মত সেদিকেই ছুটছে তখন কোন কোন চিকিৎসককে কোড করে কিছু মিডিয়ায় তথ্য বিভ্রাট হচ্ছে। মানুষও অসহায়ের মত সেই তথ্য বিভ্রাটের বলি হচ্ছে। যদি একটিু প্রাণে বাঁচা যায়। আমার মনে হয় বিগত ১০০ বছরে সারা বিশ্বের মানুষ এতটা অসহায়ত্ব বরণ করেনি আমরা টিভির পর্দা বা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম থেকে চোখ ফেরাই না কখন একটি সুখবর আসবে যে করোনার ভেকসিন আবিস্কার হয়েছে বা ঔষধ আবিস্কার হয়েছে। মানুষ এখন এতটাই অসহায় হয়ে পড়েছে যে মানুষ এখন ভেষজ সেবন করা শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহ থেকে করোনার একটি ঔষধ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। আমেরিকার একজন বাংলাদেশী চিকিৎসক ডা মাসুদ বলেই দিলেন করোন ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ভাল হয়ে যাবে যদি ২টি স্কেবো ৬ এবং টেট্রাসাইক্লিন গ্রুপের ডক্সাসাইক্লিন সেবন করা হয়। তিনি বাংলাদেশের সকলকে এ ঔষধটি সেবন করার জন্য বল্লেন। কোন কোন মিডিয়া সেটা লুফে নিয়ে ব্যপক প্রচারও করলো। মাত্র ৩০ টাকার ঔষধে করোনা জয়। মানে বিশ্বজয়ের আনন্দে দিশেহারা মানুষ ইউরেকা ইউরেকা বলে চিৎকার শুরু করলো। এমনকি ঔষধের দোকানে ছুটে গিয়ে এই ঐষধটি পরিবারের জন্য স্টক করা শুরু করলো। তার সাথে সুর মেলালেন বাংলাদেশ মেডিকেলের দুইজন ডাক্তারও। এটা শুনেই সর্বপ্রথম নিউইর্কের ডাক্তার Ferdous Khandker বল্লেন এ ঔষধটি করোনার জন্য প্রযোজ্য নয়। স্কেবো- ৬ কৃমি , উকুন এবং চুলকানীর ( স্ক্যাবিস ) জন্য প্রযোজ্য। তার এই মতকে সমর্থন করলে সম্প্রতিকালের আরেক জনপ্রিয় তরুন ডাক্তার Dr. Saklayen Russel । একে একে অনেক প্রতিথযশা চিকিৎসক তাদের সাথে একমত হয়ে বল্লেন করোনার জন্য এই ঔষধটি প্রযোজ্য নয়। কিন্তু মধ্যে যা হবার হয়ে গেছে। মিডিয়ার কল্যাণে দেশের সবাই জেনে গেছে করোনার ঔষধ স্কেবো ৬ ও ডক্সাসাইক্লিন। কোন কোন রোগির আত্মীয় স্বজন ডাক্তারের কাছে গিয়ে বল্লো আমার রোগীকে এই ঔষধটি লিখে দিন। বিড়ম্বনায় পড়েছে খ্যাতিমান ডাক্তাররা। মিডিয়ারও এ বিষয়ে একটা বিরাট ভূমিকা আছে। এ সংকটকালীন সময়ে মিডিয়াকে আরো সতর্ক হতে হবে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে। একেজন সংবাদিক হিসেবে আপিনি অসীম সাগরে ডুব দিয়ে মুক্তো সংগ্রহ করতে পারেন , সেই মুক্তো দিয়ে মালাও গাঁথতে পারেন মনের মত করে কিন্তু যখন সেটা বাজারে ছাড়বেন পাঠক বা দর্শকদের উদ্দেশ্যে তখন আপনাকে হাজারবার চিন্তা করবেন সেটা সমাজে কি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। তথ্যের সত্যতা যাচাই না করে মানুষের সামনে উপস্থাপন করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ এখন মানুষের জীবন মরন সমস্যা। ভুল তথ্য দিয়ে যে সমস্ত চিকিৎসকরা মানুষকে বিভ্রান্তি ফেলছেন তারাও সতর্ক হওয়া উচিত। ডাক্তার এবং সাংবাদিকতা দুটিরই ইথিকস আছে। যা মানুষের কল্যানের জন্য । অতএব ডাক্তার এবং সাংবাদিকরা তথ্য উপস্থাপনে আরো দায়িত্বশীল ও সতর্ক থাকবেন বলে বিশ্বাস।

সর্বাধিক পঠিত