• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

করোনাভাইরাসের কারণে স্থবির সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড

মানবেতর জীবনযাপন করছেন চাঁদপুরের সাংস্কৃতিক শিল্পীরা

প্রকাশ:  ২১ এপ্রিল ২০২০, ১৬:৫৮ | আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২০, ১৭:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে চাঁদপুর জেলা শহরের সাংস্কৃতিক কর্মকা- গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বন্ধ রয়েছে। যার কারণে চাঁদপুর জেলা শহরের ৪০টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের ২ সহস্রাধিক সাংস্কৃতিক কর্মী নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন সাংস্কৃতিক সংগঠক, নাট্যশিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী ও আবৃত্তি শিল্পী। এরা বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য। এরা কারো কাছে মুখ খুলে বা হাত পেতে খাদ্যসামগ্রী ও আর্থিক সহযোগিতা চাইতে পারেনি। সে কারণে এ সকল শিল্পী মানবেতর জীবনযাপন করছে। কেউই তাদের খোঁজখবরটুকুও এখন পর্যন্ত নেয়নি। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো হচ্ছে : অনন্যা নাট্যগোষ্ঠী, বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠী, চাঁদপুর ড্রামা, অনুপম নাট্যগোষ্ঠী, বর্ণমালা থিয়েটার, মেঘনা থিয়েটার, স্বরলিপি নাট্যদল, নবরূপা নাট্য সংগঠন, অরূপ নাট্য সংগঠন, শিশু থিয়েটার, সংগীত নিকেতন, চাঁদপুর ললিতকলা, সপ্তসুর সঙ্গীত একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমি, সুরধ্বনি সঙ্গীত একাডেমি, উদয়ন সঙ্গীত বিদ্যালয়, আনন্দধ্বনি সঙ্গীত শিক্ষায়তন, নৃত্যাঙ্গন, নৃত্যধারা, সপ্তরূপা নৃত্য শিক্ষালয়, চতুরঙ্গ সাংস্কৃতিক সংগঠন, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী চাঁদপুর, রংধনু সৃজনশীল নৃত্য সংগঠন, রঙ্ িমিউজিক্যাল গ্রুপ, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলা, নতুনকুঁড়ি সাংস্কৃতিক সংগঠন, স্বদেশ সাংস্কৃতিক সংগঠন, স্বপ্নকুঁড়ি নৃত্য শিক্ষালয়, রঙ্গের ঢোল সাংস্কৃতিক সংগঠন, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক ফোরাম, বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ, খেলাঘর আসর, কচি-কাঁচার মেলা, চাঁদের হাট, মোহনবাঁশি স্মৃতি সংসদ, বিশ্ববঙ্গ সাংস্কৃতিক সংগঠন চাঁদপুর শাখা।


চাঁদপুরের সাংস্কৃতিক শিল্পীদের এমন মানবেতর জীবন-যাপন দেখে থিয়েটার ফোরাম চাঁদপুরের সভাপতি ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির নির্বাহী সদস্য শহীদ পাটোয়ারী চাঁদপুরের জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবহিত করেন। অবহিত হওয়ার পর তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান ১শ' শিল্পীর সহায়তায় যৎসামান্য (১ টন) চাল দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন। যা মধ্যবিত্ত পরিবারের ১শ' শিল্পীর জন্যে অত্যন্ত অপ্রতুল।


জানা গেছে, জেলা প্রশাসক কর্তৃক বরাদ্দ দেয়া চালগুলো ছিলো জিআর ফান্ডের। শিল্পীদের হাতে এ চাল তুলে দেয়াও ছিলো অনেকটা লজ্জাস্কর বিষয়। অনেক কিছু ভেবে-চিন্তে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা-২০১৯-এর স্টিয়ারিং কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ ওয়াদুদ, চেয়ারম্যান অ্যাডঃ বদিউজ্জামান কিরণ ও মহাসচিব হারুন আল রশীদের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়। যদিও মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলার ঊর্ধ্বতন কমিটির বেশিরভাগ কর্মকর্তা সরাসরি সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সাথে জড়িয়ে আছেন। আলোচনার পর চাঁদপুরের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা-২০১৯ কর্তৃপক্ষ চালের পাশাপাশি কিছু সামগ্রী নিয়ে এগিয়ে আসলেন। তারা অর্ধ লাখ টাকার সামগ্রী প্রদান করেন। অবশেষে শতাধিক শিল্পীর মাঝে চালের পাশাপাশি ডাল, তেল, আটা, চিনি, ময়দা ও লবণসহ কিছু খাদ্যসামগ্রী দেয়া হয়েছে। যা গত ৮ এপ্রিল জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তন থেকে এ ১শ' শিল্পীর বাসা-বাড়িতে পেঁৗছে দেয়া হয়। এ কাজে সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন থিয়েটার ফোরামের সভাপতি শহীদ পাটোয়ারী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তপন সরকার ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ বদিউজ্জামান কিরণ, চতুরঙ্গের মহাসচিব হারুন আল রশীদ ও চাঁদপুর সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্রের সদস্য সচিব ইয়াহিয়া কিরণ। এটাই ছিলো বছরব্যাপী চাঁদপুরে জাতীয়, রাষ্ট্রীয় ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনকৃত শিল্পীদের সান্ত্বনা। বলাবাহুল্য, চাঁদপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের এ সকল মধ্যবিত্ত শিল্পীদের পরিবার-পরিজন কীভাবে চলছে তা কেউই খবর রাখেনি। এরা না পারছে কাউকে কিছু বলতে, না পারছে কারো কাছে হাত পাততে। ওই ১শ' শিল্পীর বাইরেও হাজারো মধ্যবিত্ত পরিবারের শিল্পী এখনো করোনাভাইরাসের কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কয়েকটি ভিডিও কনফারেন্সে বলেছেন, মধ্যবিত্ত পরিবারের কেউ যেনো না খেয়ে না থাকে। তিনি এও বলেছেন, প্রয়োজনে এ সকল মধ্যবিত্ত পরিবারের তালিকা করে তাদের কাছে যেনো খাদ্য সহায়তা পেঁৗছে দেয়া হয়। অপ্রিয় হলেও সত্য, এতো বড় দুর্যোগে চাঁদপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গন নিয়ে কোনো সরকারি বিভাগ, জনপ্রতিনিধি এমনকি এ শহরের বিত্তবানদের কোনো মাথাব্যথা নেই।

সর্বাধিক পঠিত