ইলিশ উৎপাদনে মারাত্মক ধস নামার আশঙ্কা
চাঁদপুরে অবাধে চলছে জাটকা নিধন
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে অবাধে চলছে জাটকা নিধনের মহোৎসব। ইলিশের ভরা মৌসুমে স্থানীয় অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জোট বেঁধে দ্রুতগামী ইঞ্জিনচালিত নৌকার সাহায্যে চলছে রুপালি ইলিশ ধ্বংস করছেন। এ কাজে হরহামেশা ব্যবহৃত হচ্ছে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল। জাটকা ধরাকে উৎসাহিত করার পেছনে রয়েছেন নদীর পাড় সংলগ্ন আড়ত সংশ্লিষ্ট চিহ্নিত কিছু মৎস্য আড়তদার। তাদের বড় পরিচয় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মি। সরকার দলের হলে তো কথাই নেই। এর প্রভাব থাকে বেশি। তাদের টাকা ইনকামের বড় আয়ের উৎস নদীতে মাছের অভিযান। এরা মা ইলিশ ও জাটকার সময় এলেই এরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। এক শ্রেণির জেলেদের নদীতে পাঠিয়ে জাটকা ধরাচ্ছে। মূল্যে কম হওয়ায় কেনাবেচা চলে নদীর পাড়েই। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর রাত ১০ টা- ১১ টার মধ্য নিধন করা হয় অধিকাংশ জাটকা। এ সময় নদীতে প্রশাসনের টহল থাকে না সময়ই ব্যাপক জাটকা নিধন করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়। এবার জাটকার মওসুমের শুরুতেই প্রচুর জাটকা ধবংস করায় ইলিশ উৎপাদনে মারাত্মক ধস নামতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞ ও সচেতন মহল। এতে চলতি বছর সরকারের কাংখিত ইলিশ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, চাঁদপুর শহরের যমুনা রোড, টিলা বাড়ি, পুরাণবাজারের হরিসভা বালুর মাঠ, রনাগোয়াল খালের দক্ষিণ পাশ, দোকানঘরের রামদাসদী খাল, বহরিয়ার টিপরা বাড়ি নদীরপাড়, রাজরাজেশ্বরের লক্ষ্মীরচর, মিনি কক্সবাজারের আশপাশ, ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রাম, হরিণা ফেরিঘাটের নন্দেশ খার খাল, গোবিন্দিয়া পুরাতন বেড়িবাঁধ, নন্দীগো খাল, চান্দ্রার আখনের হাট চর, হাইমচরের মনিপুর চর, মাঝের চর, মতলব উত্তরের আমিরাবাদ, এখলাশপুর, পশ্চিমের চর এলাকার কয়েক'শ জেলে জাটকা ধরছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী বলেছেন, সোমবার ২৩ মার্চ পর্যন্ত তেইশ দিনে ২৬৭টি অভিযান, মোবাইল কোর্ট ৪০টি, জাল জব্দ করা হয়েছে ১৪৯.১৩ লক্ষ মিটার কারেন্টজাল, মামলা হয় ১৩টি, জরিমানা আদায় করা হয়েছে এক লাখ ১৮ হাজার টাকা, ৪৩ জেলেকে আটক করা হয়েছে। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে আরও জানা গেছে, জেলায় প্রায় ৫৩ হাজার জেলে রয়েছে। এর মধ্য নিবন্ধিত জেলেদের মাঝে দুই মাসের জন্য প্রতি জেলেকে ৪০ কেজি হারে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে মার্চ মাসের জাটকা চাল জেলেরা পেয়ে গেছে। উল্লেখ্য, মার্চ, এপ্রিল দু’মাস নদীতে সকল ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ সময়ে জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দু’মাস সকল ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। নিষেধাজ্ঞা সময়ের দুই সপ্তাহ যেতেই প্রতিদিন চাঁদপুর হাইমচর থেকে মতলবের ষাটনাল এলাকার ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত মেঘনা নদীর ইলিশের অভয়াশ্রমে দিনে ও রাতে নির্বিচারে চলছে জাটকা নিধন এবং ইলিশ শিকার। কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ, থানা, ফাঁড়ি পুলিশ তথা টাস্কফোর্সের চোখকে ফাঁকি দিয়ে চাঁদপুর মেঘনার প্রতিটি জেলে ঘাট থেকে জেলেরা নদীতে নামছে এবং জাটকা ও ইলিশ ধরছে।
সরজমিনে অনেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, কিসের অভিযান, কিসের নিষেধাজ্ঞা_মাছতো ধরছেই। নদীর মাছ ধরা দৃশ্য দেখলে যে কাউর মনে হবে, নৌ পুলিশ, থানা- ফাঁড়ি পুলিশের সাথে মিল না থাকলে জাটকা নিধন ও আড়তদাররা দেশের জাতীয় স্বার্থ বিরোধী এ-অপতৎপরতা করতে সাহস পায় না। তবে এরা প্রকৃত জেলে না সরকারের বদনাম করার জন্য এলাকা ভিত্তিক কিছু পাতি নেতা অবৈধ টাকা কামানোর ধান্দা হিসেবে জাটকা মওসুম বেছে নিয়েছে।
ফজর নামাজ শেষে মুসল্লিরা নদীর পাড় ঘুরতে গিয়ে দেখেন নৌকা আর জাটকা। নৌ-পুলিশ কোস্টগার্ডের তেমন দেখা নেই।থানা ও ফাঁড়ি পুলিশেরও তৎপরতা কম। হাজার হাজার কেজি জাটকা মেঘনার পড়ে ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে। ভোর থেকে শহরের অলি গলি,গ্রামের বাড়ি বাড়ি চলে ফেরি করে ১০০ টাকা দরে জাটকা বিক্রি। এই লাগবে জাটকা, হাকডাক শুনে অনেকের ঘুম ভাংগে বলে জানান বহু মানুষ। জাটকা নিধন ও আড়তদারির সাথে চিহ্নিত কিছুলোক জড়িত। রাজরাজেশ্বর ইউপির ১ নং ওয়ার্ডের লক্ষ্মীরচর খালে প্রায় দেড় নৌকা নদীতে নামছে। ২ নং ওয়ার্ডের মুকবুল মেম্বার ও ৩ নং ওয়ার্ডের রনি মেম্বারের মদদে নুর মোহাম্মদ বকাউল, শরাফত আলী গাজী, পুরাণবাজার হরিসভা বালুর মাঠে ২ নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি শাহাদাত পাটওয়ারির আড়তের ১০/১৫টি নৌকা ইলিশ ও জাটকা শিকার করে। চুল্লা কাদির, বদু,হারুন কবিরাজের ছেলে সোহেল ও স্প্রীড বোট ড্রাইভার সেলিম হরিসভা বালুর মাঠে জাটকা বিক্রি করে।
এছাড়া, রনাগোয়াল খালের আড়তদার যুবলীগ নেতা রফিক শেখ, বিএনপির শাহজাহান গাজী, লাটন গাজী ও স্থানিয় মরু এখানে পাইকারি জাটকা বিক্রি করে। দোকানঘর গুচ্ছগ্রামের রামদাসদী খালে আসলাম মাঝি, আবুল বরকান্দাজ, নান্টুসহ আরো অনেকে এবং বহরিয়া টিপরা বাড়ির পিছনে ছলেমান মাঝি ইলিশের আড়তদারি করছেন। হরিণায় হাবু ছৈয়ালের ছেলের মদদে ইলিশ ও জাটকা ধরা হচ্ছে। এসব তথ্য স্থানিয় সূত্রে জানা যায়।
এদের আইনের আওতায় আনা না গেলে ইলিশের সর্বনাশ তারা করেই যাবে। এ ব্যাপারে জেলা টাস্কফোর্সের সঙ্গে রাজনীতির নেতাদের কঠোর নির্দেশনা অপরিহার্য বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন।