• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

বিভিন্ন নৌরূটের যাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায়

বিগত ৩ বছর যাবৎ লঞ্চে কোনো আনসার নেই

প্রকাশ:  ০৬ মে ২০১৯, ১৫:২৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুর থেকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লঞ্চ যাত্রীরা দিনে ও রাতে নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। লঞ্চগুলোতে বিগত ৩ বছর যাবৎ লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্যে কোনো প্রকার অস্ত্রধারী আনসার নিয়োগ দিচ্ছেন না। এতে করে যাত্রীরা মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে জীবনবাজি রেখে বিগত ৩টি বছর যাতায়াত করতে হচ্ছে।
যাত্রীদের নিরাপত্তায় চাঁদপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোতে অস্ত্রধারী আনসার নিয়োগ দেয়ার জন্যে শত শত যাত্রীর চাহিদা এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাতায়াতকালে লঞ্চে ছিনতাই, নেশা জাতীয় দ্রব্য কৌশলে পান করিয়ে, মলম লাগিয়ে অজ্ঞান করে, প্রতারণা করে যাত্রীদের মালামাল লুট, মাদক পাচার এবং বিভিন্ন সময় দিনে ও রাতে লঞ্চে ডাকাতি সংঘটিত হয়ে  আসছে। এসব থেকে রক্ষা ও লঞ্চ যাত্রীদের নিরাপত্তায় বিগত বছরগুলোতে যাত্রীবাহী লঞ্চে অস্ত্রধারী আনসার বাহিনীর সদস্যদের নিয়োজিত করা হয়েছিল। এতে করে যাত্রীরা নিরাপদে নৌপথে যাতায়াত করতো। বিগত ৩ বছর যাবৎ চাঁদপুর থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও দক্ষিণাঞ্চলীয় নৌপথে ও দেশের বিভিন্ন স্থানের নৌপথে কোনো প্রকার আনসার রাখা হচ্ছে না। যাত্রীরা দিনের চাইতে রাতে তাদের পরিবার পরিজন, শিশু ও যুব বয়সী মেয়েদের নিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। এ ছাড়া যাত্রীরা তাদের মূল্যবান মালামাল ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যাতায়াতকালে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়। এজন্যে লঞ্চে আনসার নিয়োগ দেয়ার বিষয়টিতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। আনসার নিয়োগ দিলে যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি শত শত বেকার যুবকের আনসার হিসেবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এসব আনসার লঞ্চ মালিকদের বেতনের পাশাপাশি সরকার থেকে পোশাক, রেশন ও চিকিৎসা সুবিধা পাবে। অপরদিকে এসব আনসার সদস্য কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তার পরিবার সরকার থেকে এককালীন ৫ লাখ টাকা পাবে।
আনসার ভিডিপি অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকার বেতন ভাতা বৃদ্ধি করার ফলে লঞ্চ মালিকরা একত্রিত হয়ে নৌ-পথে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চ থেকে আনসার সদস্যদের প্রত্যাহার করে নেয়। আর এ সুযোগে নৌপথে বিভিন্ন প্রকার অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে নৌপথে মাদক পাচার বেশি হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর ও ঢাকা নদীবন্দরে কর্মরত সুপারভাইজার পদবীধারী লঞ্চ মালিকের প্রতিনিধিরা জানান, স্বাধীনতার পূর্বে ও পরে নৌ-পথে যাত্রীবাহী লঞ্চে যাত্রীদের নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে অস্ত্রধারী আনসার দায়িত্ব পালন করতো। এ সময় অনেক আনসার ডাকাতি প্রতিরোধ করে ডাকাতি বন্ধ ও ডাকাতদের আটক করতে সক্ষম হয়েছিল। আবার কিছু বিপথগামী আনসার সদস্য ডাকাতির সাথে  জড়িত থাকার ঘটনাও ঘটে। আনসার সদস্যদের বেতন পূর্বে ছিল ৮ হাজার ৭শ’ টাকা। বর্তমান সরকার বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করায় এই বেতন ১৩ হাজার ৫০ টাকা হওয়ায় লঞ্চ মালিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আনসার প্রত্যাহার করে নেন। লঞ্চ মালিক প্রতিনিধিরা আরো জানান, বর্তমানে আনসার না থাকায় যাত্রীরা পূর্বের চাইতে ভালো নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছে। প্রতিটি লঞ্চের মালিক নিজস্ব সিকিউরিটি নিয়োগ দিয়ে যাত্রীদের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে অনেক যাত্রীর সাথে আলাপকালে তারা জানান, লঞ্চে অস্ত্রধারী আনসার থাকার প্রয়োজন রয়েছে। লাঠি ব্যবহার করা সিকিউরিটি দিয়ে তেমন কাজ হচ্ছে না এবং নৌপথে যাত্রীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না।
ইদানীংকালে কিছু দুর্বৃত্ত লঞ্চে যাত্রীদের মালামাল চুরি, ছিনতাই, মলম দিয়ে অজ্ঞান করে মালামাল নিয়ে যাওয়াসহ যাত্রীদের বিভিন্ন ভাবে উত্ত্যক্ত, কেবিনে হত্যা ও ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটিয়ে চলছে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় আনসার বাহিনী নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকলে ও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে যাত্রীরা যেমন নিরাপত্তা পাবে, তার পাশাপাশি লঞ্চে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না ও মাদক পাচার বন্ধ হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর সদর উপজেলা আনসার ও ভিডিপি অফিসার (পরিদর্শক) মোঃ মজিবুর রহমান জানান, লঞ্চ মালিকরা তাদের লঞ্চে যাত্রীদের নিরাপত্তায় যদি আনসার চান, তাহলে জেলা অ্যাডজুটেন্ট অফিস থেকে আনসার দেয়া যেতে পারে। তারা সরকারের সাথে চুক্তি করে অগ্রিম টাকা দিলে আনসার পাবে। গত ৩ বছর যাবৎ লঞ্চ মালিকরা সরকারি বেতন বৃদ্ধি পাবার পর থেকে আনসার প্রত্যাহার করে নেয়। তবে নৌপথের উপর যেভাবে মানুষের আস্থা বেড়েছে, সেই আস্থা টিকিয়ে রাখতে লঞ্চে আনসারের ডিউটি থাকা একান্ত প্রয়োজন।