জুমার নামাজের সময় মসজিদে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় ওলামা-মাশায়েখের নিন্দা ও প্রতিবাদ

গত ১৯ এপ্রিল শুক্রবার চাঁদপুর শহরের পূর্ব নাজির পাড়াস্থ এলাহী জামে মসজিদে লা-মাযহাবী উগ্রবাদী তথাকথিত আহলে হাদীস মতাবলম্বী বাংলা শিক্ষিত জনৈক ড. কর্তৃক নতুন নিয়মে জুমার নামাজ পড়ানোর কারণে মুসল্লিদের মধ্যে মারামারি ও আহত হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ চাঁদপুর জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ ও চাঁদপুরের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম।
গত ২২ এপ্রিল সোমবার সকাল ১০টায় জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ে সংগঠনের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ চাঁদপুর জেলার সভাপতি মাওলানা নূরুল আমিন। সভায় উপস্থিত ছিলেন জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি ও চাঁদপুর জেলা কওমি সংগঠনের সহ-সভাপতি মুফতি সিরাজুল ইসলাম, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ, চাঁদপুর জেলার উপদেষ্টা মুফতি ত্বহা খান, সহ-সভাপতি মুফতি আমিনুল্লাহ বিন নুরী, তালতলা পাটওয়ারী বাড়ি জামে মসজিদের খতিব আলহাজ্ব মাওলানা আব্দুস সালাম, বিপণীবাগস্থ মাদরাসা আলী ইবনে আবি তালিব এর পরিচালক মাওলানা মোস্তফা আল-হাসান, শেখ মোঃ জয়নাল আবেদিন, মাওলানা নূর উদ্দিন, মাওলানা জামাল উদ্দিন, আবুল বাসার, ইয়াছিন খান প্রমুখ।
সভাপতির বক্তৃতায় মাওলানা নুরুল আমিন বলেন, রাসুল (স.)-এর সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যে নিয়ম অনুসরণ করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ নামাজ পড়ে আসছেন, সেই সহীহ এবং নির্ভুল নিয়ম উপেক্ষা করে ইহুদী খ্রিস্টানদের এজেন্ট উগ্রবাদী লা-মাযহাবী তথাকথিত আহলে হাদীস নামধারী ইংরেজি ও বাংলা শিক্ষিত ড. মুজাফ্ফর বিন মুহসিন নতুন নিয়মে ৪ রাকআত কাবলাল জুমা এর পরিবর্তে ২ রাকাত, আরবি খুৎবার পরিবর্তে বাংলা ভাষায় খুৎবা প্রদান, ছানি আযান না দেয়া, খুৎবার সময়ে নীরবতা পালনের পরিবর্তে হৈচৈ শব্দ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে মুসল্লিদের মাঝে মারামারির ঘটনা ঘটিয়ে মুসল্লিদের আহত করেছে। আল্লাহ তায়ালার ঘর মসজিদের সাথে বেয়াদবি করেছে। তিনি বলেন, যাদের সহযোগিতায় এহেন জঘন্য ঘটনা ঘটেছে অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনার জন্যে জেলা প্রশাসকের নিকট জোর দাবি করছি।
তিনি আরও বলেন, ড. মুজাফ্ফর বিন মুহসিন, চাঁদপুর আল-আমিন একাডেমির শিক্ষক তাফাজ্জল হোসেন, গুণরাজদী শাখার শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান, চাঁদপুর ইসলামিক কালচারাল একাডেমির পরিচালক সাহাবুদ্দিনসহ কথিত আহলে হাদিসের উগ্রবাদী কর্মীদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলেই এলাহী মসজিদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্টকরণসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার খতিয়ান বেরিয়ে আসবে। তিনি আরও বলেন, অনতিবিলম্বে কথিত আহলে হাদীসদের সকল কর্মকা- অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। চাঁদপুর শহরের কুমিল্লা রোডে অবস্থিত লা-মাযহাবী কথিত আহলে হাদীস মতাবলম্বীদের প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক কালচারাল একাডেমি ও চাঁদপুর স্টেডিয়াম মার্কেটের তৃতীয় তলায় অবস্থিত ইসলামী পাঠাগার বন্ধ করতে হবে।
মুফতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, এলাহী জামে মসজিদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে নষ্ট করে মুসল্লিদের জুমার নামাজ আদায়ে প্রতারণা করে মারামারি ঘটনায় আমরা মর্মাহত ও ব্যথিত। এহেন নির্লজ্জ ঘটনায় দলমত নির্বিশেষে সকল মুসলমানকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চাঁদপুর জেলা শহরসহ সমগ্র বাংলাদেশ থেকে ইহুদীদের এই এজেন্টদের উৎখাত করতে হবে। এলাহী জামে মসজিদের বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে এলাকাবাসী ও ওলামা মাশায়েখগণের সুচিন্তিত পরামর্শ অনুযায়ী নতুন কমিটি গঠন করতে হবে।
মুফতি ত্বোহা খান বলেন, ইহুদী-খ্রিস্টানরা যুগ যুগ ধরে ইসলাম ও মুসলমানদের ঐক্য বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র করে আসছে। কিন্তু তারা মসজিদের মুসল্লিদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটাতে না পেরে কথিত আহলে হাদিস নামে লা-মাযহাবী উগ্রবাদী একটি চক্র সৃষ্টি করেছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড. জাকির নায়েক, বাংলাদেশে তার মিশন পরিচালনা করছে ড. মুজাফফর বিন মুহসিন। চাঁদপুরে উক্ত মিশন পরিচালনা করছেন ডাক্তার মাহবুবুর রহমান, তাফাজ্জল হোসেন, সাহাবুদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমানসহ অন্যরা। এদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, এলাহী জামে মসজিদসহ চাঁদপুর জেলার সকল মসজিদের মুসল্লিদের চাঁদপুর জেলার নামাজ আদায়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ কায়েম করার জন্যে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
মাওলানা আলহাজ্ব আব্দুস সালাম বলেন, এরা আহলে হাদিস নয় এরা হলো শায়েখ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই নিষিদ্ধ জঙ্গিদের এজেন্ট। শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে অশান্ত করাই তাদের প্রধান কাজ। এরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নাম ধারণ করে ইসলাম ও মুসলমানদের ক্ষতিসাধন করে আসছে। সকল মসজিদের ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ও কমিটির দায়িত্বশীলদের এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, আগামী ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। স্মারকলিপি প্রদানের পূর্বে জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত সমাবেশে সর্বস্তরের ওলামা মাশায়েখ, আইম্মা-ই মাসাজিদ ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণকে উপস্থিত থাকার জন্য দ্বীনি দাওয়াত রইলো।