• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুরে তরমুজের বাজার সরগরম

দক্ষিণাঞ্চল থেকে তরমুজ আনতে গিয়ে মেঘনায় নৌ ডাকাতের হামলার শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

প্রকাশ:  ০৮ এপ্রিল ২০১৯, ১৬:২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুর শহরের ফলের আড়ত হিসেবে খ্যাত চৌধুরীঘাট এলাকা এখন রসালো ফল তরমুজে ভরপুর। এই ঘাট এলাকার প্রতিটি ঘরে এখন তরমুজের সমাহার। প্রতিদিন কয়েক লাখ পিচ তরমুজ চাঁদপুরে আসছে এবং প্রতিদিন এই পরিমাণ বিক্রিও হচ্ছে। বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চল থেকে চাঁদপুরের বাজারে তরমুজের চাহিদা যোগান দেয়া হচ্ছে। আর চাঁদপুরের এই ফলের আড়ত থেকে চাঁদপুর জেলার চাহিদা মিটিয়ে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ আরো কয়েকটি জেলায় যাচ্ছে এই তরমুজ। প্রতিদিন ১০/১২ ট্রাক তরমুজ যাচ্ছে চাঁদপুর জেলার বাইরে। এসব তথ্য জানালেন ১০নং ঘাট ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হারুনুর রশিদ হাওলাদার এবং চৌধুরীঘাট ফলের আড়ত ব্যবসায়ী মাসুদ বেপারী। তবে দক্ষিণাঞ্চল থেকে তরমুজ আনতে গিয়ে চাঁদপুরের তরমুজ ব্যবসায়ীরা প্রায়ই নৌ ডাকাতির শিকার হচ্ছেন। সুদূর বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী থেকে পদ্মা-মেঘনা পাড়ি দিয়ে আসার পথে নদীতেই দুর্বৃত্তদের কবলে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের। জেলের বেশ ধরে ডাকাতদল মেঘনায় তরমুজ বোঝাই ট্রলারের উপর হামলা চালিয়ে ব্যবসায়ীদের রক্তাক্ত জখম করছে এবং তরমুজ ও টাকা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। গত ২১ মার্চ এবং গত ৪ এপ্রিল এমন দু’টি ঘটনা ঘটেছে। ব্যবসায়ীরা এমন নৌ ডাকাতির শিকার হচ্ছে বরিশাল জেলার হিজলা থানা এবং চাঁদপুরের হাইমচরের চরভৈরবী এলাকার বর্ডারে কালীখোলা নামক স্থানে মেঘনা নদীতে।
গত ২১ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় নৌ ডাকাতের হামলার শিকার চাঁদপুর চৌধুরীঘাট এলাকার ফলের আড়ত ব্যবসায়ী মাসুদ বেপারী (৩৬) জানান, তিনি গত ২১ মার্চ পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা থানাধীন চরবিশ^াস এলাকার কৃষকদের থেকে এক ট্রলার তরমুজ ক্রয় করে চাঁদপুরের দিকে রওয়ানা হন। ওই ট্রলারে তরমুজের সংখ্যা ছিলো ৮ হাজার। তিনি জানান, তরমুজ নিয়ে তাদের ট্রলারটি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ মেঘনা নদীর হিজলা থানা এলাকার বর্ডার এবং হাইমচরের চরভৈরবীর বর্ডার সংযোগ কালীখোলা নামক স্থানে আসলে প্রথমে ৭/৮ জনের একটি দল স্পিডবোট নিয়ে এসে আমাদের উপর চড়াও হয় এবং বেশ কিছু তরমুজ নিয়ে যায়। এর ১০ মিনিটের মাথায় ১০/১২ জনের অপর এক দুর্বৃত্ত দল বড় বড় ধারালো অস্ত্র ও বাঁশ নিয়ে ট্রলারযোগে এসে আমাদের উপর হামলা চালায়। তারা আমাদের এলোপাতাড়ি কুপিয়ে প্রায় সব মাল ছিনিয়ে নেয় এবং সাথে থাকা মোবাইল ও টাকা নিয়ে যায়। মাসুদ জানান, তার বাম হাত ভেঙ্গে যায়। পরে আহত অবস্থায় রাত ১০টায় তারা চাঁদপুর এসে পৌঁছে। চাঁদপুর এসে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন এবং মডেল থানাকে বিষয়টি জানান।
একই ঘটনার শিকার হন মোঃ আঃ হক বেপারী (৫৫) নামে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা থানাধীন চরবিশ^াস এলাকার কৃষক। তিনি হামলার শিকার হন গত ৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার। তিনিও একই এলাকায় একইভাবে হামলার শিকার হন। তিনি জানান, আমি সেদিন ১১ হাজার পিচ তরমুজ নিয়ে ট্রলারসহ চাঁদপুরে আসছিলাম বিক্রির উদ্দেশ্যে। বিকেল ৩টায় পথিমধ্যে হিজলা থেকে বের হয়ে চাঁদপুর নৌ সীমানায় পৌঁছার পূর্ব মুহূর্তে আমার উপর হামলা চালিয়ে অনেক তরমুজ ও টাকা মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায় দুবর্ৃৃত্তরা।
তারা জানান, এভাবে প্রতিদিন ৭০/৮০ ভাগ ব্যবসায়ী মেঘনা নদীতে নৌ ডাকাতের হামলার শিকার হচ্ছে। হিজলা থেকে চাঁদপুর নৌ সীমানা এইটুকু এলাকায় মেঘনা নদীতে কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ, এমনকি প্রয়োজনে নৌ বাহিনী মোতায়েন করা হলে হয়ত দুর্বৃত্তদের হামলা থেকে তারা রক্ষা পাবেন। তারা আরো জানান, চাঁদপুরে তরমুজ আসে বরিশাল, ভোলা, চরফ্যাশন, গলাচিপা, পটুয়াখালী ও রাঙ্গাবালী থেকে। তাই এই নদী পথটি সুরক্ষিত তথা দুর্বৃত্ত মুক্ত থাকা প্রয়োজন।