শেষের পথে শহীদ রাজু চত্বর নির্মাণ কাজ
১৯৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে চাঁদপুরে একমাত্র শহীদ জিয়াউর রহমান রাজু পাটওয়ারীর স্মরণে রাজু চত্বর নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। চাঁদপুর পৌরসভার অর্থায়নে শহরের প্রাণকেন্দ্র মরহুম করিম পাটওয়ারী সড়কে এ চত্বরটি নির্মিত হচ্ছে।
১৯৯০ সালের ২৮ নভেম্বর স্বৈরচার বিরোধী আন্দোলনে সকাল থেকে চাঁদপুর শহর ছাত্রদের আন্দোলনে মুখরিত হয়ে ওঠে। তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান হুসেইন মোঃ এরশাদকে রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে হটানোর জন্যে ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে নেমে পড়ে। ওই দিন সকাল থেকে চাঁদপুর শহর মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে ছাত্ররা মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমে আসে। ওই মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন মরহুম আব্দুল করিম পাটওয়ারী বাড়ির সন্তান ছাত্রলীগ নেতা জিয়াউর রহমান রাজু পাটওয়ারী। মিছিলটি বর্তমান চিত্রলেখার মোড় এলে তৎকালীন চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ খবির উদ্দিনের নির্দেশে মিছিলের উপর পুলিশের গুলি বর্ষণ শুরু হয়। এ সময় শহীদ জিয়াউর রহমান রাজু গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজপথে লুটিয়ে পড়েন। ছাত্ররা রাজুকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। ২৮ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। যে স্থানে রাজুকে গুলি করা হয়েছিল সেই তিন রাস্তার মোড়েই চাঁদপুর পৌরসভার অর্থায়নে রাজুর স্মৃতি ধরে রাখতে নির্মাণ করা হচ্ছে রাজু চত্বর। চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদের নির্দেশেই এই চত্বরটি প্রায় ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। রাজু চত্বরটির নকশা তৈরি করেন চাঁদপুর পৌরসভার নগর পরিকল্পনাবিদ মোঃ সাজ্জাদ হোসেন। তিনি জানান, আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৩ বছর পূর্বে পৌর মেয়র আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদের নির্দেশে এই রাজু চত্বর নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। পরবর্তীতে শংকর ও শ্যামল নামের ঠিকাদার এটি নির্মাণ কাজ শুরু করেন। কিন্তু এই ঠিকাদাররা রাজু চত্বর নির্মাণে লসের পাল্লায় পড়বে ভেবে দু’বছর আগে এর কাজ ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে এর নকশা তৈরি করার জন্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী আবুল কালাম আজাদকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনিও প্রায় দেড় বছরেও কাজটি করতে পারেননি। যার ফলে এই দুইটি ভাগে সাড়ে তিন বছর অতিক্রম করেও তা শেষ করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে শহীদ জিয়াউর রহমান রাজুর ছোট ভাই অ্যাডঃ আতাউর রহমান পাটওয়ারীর সাথে আলাপ করলে সে জানায়, এই চত্বরটি নির্মাণে আমি প্রথম চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ¦ নাছির উদ্দিন আহমেদকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। আর সেই থেকেই চাঁদপুর পৌরসভা এই চত্বরটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। তাই আমি ও আমার পরিবার চাঁদপুর পৌরসভার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
এখন চাঁদপুর পৌরসভার উদ্যোগেই এর নির্মাণ কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। আবুল কালাম আজাদের মাধ্যমে শহীদ রাজুর প্রতিমূর্তি পোড়ামাটির মাধ্যমে তৈরি করে এই চত্বরে স্থাপন করা হয়েছে। রাজু চত্বরটিতে ১৯৯০ সালের ২৮ নভেম্বর চাঁদপুর শহরের ছাত্রদের উপর পুলিশের গুলি করার দৃশ্যাবলিও তুলে ধরা হয়েছে। আমরা আশা করি অল্প কিছুদিনের মধ্যে এই রাজু চত্বর নির্মাণ কাজটি সমাপ্ত হবে। এতে করে চাঁদপুর শহরের সৌন্দর্য অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।