উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে হাইমচর জগন্নাথ মন্দির কমিটি গঠন স্থগিত
উপদেষ্টা কমিটির নিকট দায়িত্ব অর্পণ
হাইমচর উপজেলার সার্বজনীন শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির কমিটি গঠন প্রক্রিয়া উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে স্থগিত করা হয়েছে। নতুন কমিটি গঠন না হওয়া পর্যন্ত উপদেষ্টা কমিটি মন্দির পরিচালনা করবে বলে জানা যায়।
হাইমচর উপজেলার তেলির মোড় সংলগ্ন সার্বজনীন শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দিরটি অত্র এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে ঐতিহ্যবাহী একটি জাগ্রত মন্দির হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আসছে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে নিত্য সেবা পূজা থেকে শুরু করে দুর্গোৎসবসহ সকল সময়ই ধর্মীয় কার্যক্রম ভক্তদের আর্থিক সহযোগিতায় পরিচালিত হয়ে আসছে। আর এ সকল কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে রয়েছে একটি মন্দির পরিচালনা কমিটি। কমিটির সভাপতি হলেন অজয় কৃষ্ণ মজুমদার, আর সাধারণ সম্পাদক দীনেশ চন্দ্র দেওয়ান। তাদের সুদক্ষ পরিচালনায় মন্দিরের উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে চললেও স্থানীয় কিছু ভক্ত তাদের দায়িত্বকালীন সময়ের মেয়াদ ও অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তোলায় কমিটির কার্যক্রম নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। এ নিয়ে গত কয়েক মাস পূর্বে কমিটির কর্তা ব্যক্তিসহ ভক্ত সাধারণদের নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় কমিটি বিলুপ্ত করে পূর্বের কমিটির সভাপতিকে আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদককে সদস্য সচিব করে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠনসহ ৫ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটিও গঠন করা হয়। সেই অনুযায়ী নতুনভাবে কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গত ৯ নভেম্বর শুক্রবার বিকেলে মন্দির প্রাঙ্গণে সকল ভক্ত সাধারণের উপস্থিতিতে সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরুতে আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক অজয় কৃষ্ণ মজুমদার তার বক্তব্য প্রদান শেষে নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে আহ্বায়ক কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে উপদেষ্টা কমিটর নিকট দায়িত্ব অর্পণ করেন। সে মতে উপদেষ্টা কমিটির সুবোধ চন্দ্র দাসকে সভাপ্রধান করে কমিটি গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় কমিটি গঠনকল্পে বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য হাইমচর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সন্তোষ চন্দ্র মজুমদার, মুক্তিযোদ্ধা সুনীল কৃষ্ণ মাঝি, জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিমল চৌধুরী, হাইমচর উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বিবেক লাল মজুমদার, মন্দির কমিটির অনিল কৃষ্ণ মাঝি, সুশীতল সাহা, সুজন মাঝি, যুগল কৃষ্ণ দেবনাথ, লক্ষ্মণ চন্দ্র সরকার, মিলন মাঝি, নিখিল সরকার, রাজীব মাঝি, অরুণ চন্দ্র দেওয়ান, সুজন সরকারসহ অনেকেই বক্তব্য রাখেন। আলোচনার এক পর্যায়ে কমিটি গঠনকল্পে নতুন সভাপতির নাম প্রস্তাব করা হলে উপস্থিত ভক্তদের মাঝে দ্বিধা বিভক্তি সৃষ্টি হয়। এ সময় অনেকেই মারমুখী হয়ে পড়েন। নেতৃবৃন্দ উত্তেজিত ভক্তদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি শান্ত রাখার লক্ষ্যে হাইমচর থানার অফিসার ইনচার্জ সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন এবং কাউকে উত্তেজিত না হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে কমিটি গঠন করার জন্যে অনুরোধ জানিয়ে তিনি চলে যান। পরবর্তী সময়ে আবারো পরিস্থিতি মারমুখী হলে উপদেষ্টা কমিটির নেতৃবৃন্দ পরিস্থিতি সামাল না দিতে পেরে সভাস্থল ত্যাগ করেন। ফলে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে কথা হয় উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য হাইমচর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সন্তোষ চন্দ্র মজুমদারের সাথে। তিনি জানান, সভার শুরুতেই আহ্বায়ক কমিটি তাদের দায়িত্বভার উপদেষ্টা কমিটির নিকট অর্পণ করেছেন। সেইমতে আমরা চেষ্টা করেছি সকলের মতামতের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য কমিটি করতে। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। যতোদিন পর্যন্ত নতুন কমিটি গঠন না হবে, ততোদিন পর্যন্ত উপদেষ্টা কমিটি মন্দির পরিচালনার ক্ষেত্রে সকল দায় দায়িত্ব পালন করবে। আমরা আসন্ন জাতীয় নির্বাচন শেষে, হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ তথা মন্দিরের উন্নয়ন কল্পে যাদের অবদান রয়েছে, সেই সকল গণ্যমান্য ব্যক্তির সাথে আলোচনাক্রমে একটি কমিটি গঠন করে তাদের নিকট দায়িত্বভার প্রদান করবো। তাই সকল ভক্তের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, মন্দিরটি আমাদের সকলের। কোনোক্রমেই যেন মন্দিরের উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত না হয় সেই দিকে সকল ভক্ত লক্ষ্য রাখবেন।