• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

সিএনজি স্কুটার-কাভার্ডভ্যান চাপায় পিতা-পুত্রসহ নিহত ৩ ॥ ধেররায় বাস চাপায় পথচারী বৃদ্ধা নিহত

হাজীগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় লাশের মিছিল

প্রকাশ:  ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ০১:২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

হাজীগঞ্জে সিএনজি স্কুটার ও কাভার্ড ভ্যানের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পিতা-পুত্রসহ ৩ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই কয়েক ঘন্টার মাথায় একই উপজেলায় বাস চাপায় এক পথচারী বৃদ্ধা নিহত হন। একই ঘটনায় সিএনজি স্কুটার চালকসহ অপর ২ জন গুরুতর আহত হয়েছে। রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নস্থ চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের গোগরা নামক স্থানে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার সাথে সাথে সিএনজি স্কুটারের তিন যাত্রী সড়কের সাথে লেপ্টে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ঘটনার পর স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয় এবং আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। কিন্তু আটক বা সনাক্ত করা যায়নি সেই কথিত কাভার্ডভ্যানকে।
    এদিকে গোগরা এলাকার দুর্ঘটনার মাত্র কয়েক ঘন্টা পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একই উপজেলার একই সড়কের ধেররা এলাকায় চাঁদপুরগামী বোগদাদ বাসের চাপায় মারা যান ফাতেমা বেগম (৭০) নামে এক বৃদ্ধা। উভয় ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করার প্রেক্ষিতে লাশ ময়না তদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
    গোগরায় দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন : শাহরাস্তি উপজেলার টামটা দক্ষিণ ইউনিয়নের উয়ারুক গ্রামের পাটওয়ারী বাড়ির মৃত নাজির হোসেনের ছেলে এলেম হোসেন (৪৮), তার ছেলে ইকরাম হোসেন (২৫) ও একই ইউনিয়নের সুরসুই গ্রামের কাজী বাড়ির মোস্তফা সৈয়দের ছেলে আবু সুফিয়ান (৪০)। এরা সবাই ভোর রাতে নিজ বাড়ি থেকে মেঘনা নদীতে মাছ শিকারের জন্যে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে বের হন। আর পথিমধ্যেই তাদের মৃত্যু হয়। একই দুর্ঘটনায় আহতরা হলেন : শাহরাস্তি উপজেলার টামটা ইউনিয়নের উয়ারুক গ্রামের পাটওয়ারী বাড়ির সোলেমান পাটওয়ারীর ছেলে মোঃ বিল্লাল হোসেন পাটওয়ারী (৪৫) ও সিএনজি স্কুটার চালক মোঃ শাহজাহান (৩৮)। আশঙ্কাজনক অবস্থায় এরা চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আর ধেররায় বাস চাপায় নিহত ফাতেমা বেগম পৌর ৩নং ওয়ার্ডের ধেররা গ্রামের মৃত অলি উল্যাহর স্ত্রী।
    গোগরা এলাকার ইউপি সদস্য ফারুক হোসেনসহ স্থানীয়রা চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, রোববার দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে হাজীগঞ্জ থেকে চাঁদপুরগামী সিএনজি স্কুটারের সাথে চাঁদপুর থেকে হাজীগঞ্জমুখী একটি কাভার্ডভ্যানের সংঘর্ষ ঘটে। তখন সড়কের আশপাশের লোকজন বিকট শব্দ শুনে ও সড়কে চলাচলকারী অন্য পরিবহনের লাইটের আলোয় দুর্ঘটনা দেখে হতচকিত হয়ে পড়েন। তারা এগিয়ে এসে দেখতে পান দুর্ঘটনার সাথে সাথে সিএনজি স্কুটারযাত্রী ৩ জনের মাথা সড়কের সাথে লেপ্টে আছে। এর কিছু পরেই হাজীগঞ্জ থানার একদল পুলিশ ও দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে আসেন। পরে তারা নিহতদের লাশ উদ্ধার কাজ শুরু করেন। লাশ উদ্ধার করতে সকাল ৭টা বেজে যায়। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা দেখতে আশপাশের হাজার হাজার মানুষ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। তখন সড়কের দুপাশে কিছু সময়ের জন্যে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।  ঘটনাস্থলের পাশেই চাঁদপুর-থ ১১-৬৩০০ নং সিএনজি স্কুটারটি সড়কের উপর দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
    নিহত এলেম হোসেনের এলাকার ইউপি সদস্য মোঃ হোসেন জানান, নিহত এলেম হোসেনের ২ মেয়ে ১ ছেলে। আজ বাবা ছেলে একত্রে মারা যাওয়ায় ঐ পরিবারের ৩ সদস্যের জীবনে নেমে এসেছে চরম হতাশা আর দুর্দশা। কারণ, এ পরিবারে পুরুষ বলতে আর কেউ রইলো না। নিহত সকলের পরিবারের সাথে কথা বলে ময়না তদন্ত ছাড়াই নিহতদের লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাতেই নিহতদের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
    ধেররা এলাকার দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বলাখাল এলাকার মিজানুর রহমান জানান, চাঁদপুর কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের উক্ত এলাকা অতিক্রমকালে চাঁদপুরগামী বোগদাদ বাস ফাতেমা বেগমকে চাপা দেয়। বাসটিকে স্থানীয়রা আটকাতে পারলেও মারাত্মক আহত ফাতেমা বেগমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
    এদিকে ফাতেমার এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ফাতেমার স্বামী মারা গেছেন অনেক আগে। ছেলে গরিব বিধায় ফাতেমা বেগম নিজেই ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এদিন সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাড়ির সামনেই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে তিনি মারা যান। বিকেলে ফাতেমার লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। রাতেই পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।
    চাঁদপুর দমকল বাহিনীর উপ-পরিদর্শক ফরিদ আহমেদ জানান, সড়ক উন্নয়নের জন্যে সড়কের পাকা অংশে মাটি স্তূপাকৃতিভাবে রাখার কারণে সিএনজি স্কুটারটি পুরোপুরি পার হতে না পেরে পাশের কাভার্ডভ্যানের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটলো।
    লাশ উদ্ধারকারী হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জয়নাল আবেদীন জানান, ধারণা করা হচ্ছে কাভার্ডভ্যান বা ট্রাক সিএনজিকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে সিএনজির উপর দিয়ে চলে যায়। এতে করে সিএনজি স্কুটারের পেছনের সিটে বসা পিতা-পুত্রসহ ৩জন মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। অপর এক প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, ঘাতক কাভার্ডভ্যান কিংবা ট্রাককে সনাক্ত বা আটক করা সম্ভব হয়নি।
    হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, ভোর রাতেই আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার কাজ শুরু করি। উদ্ধার শেষে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করে দেয়া হয়। তবে ঘাতক মোটর যানটিকে আটকের বিষয়ে কাজ চলছে। নিহতদের পরিবারের কাছে ইতিমধ্যে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

 

সর্বাধিক পঠিত