হাজীগঞ্জে কলেজ ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু
গতকাল শুক্রবার দুপুরে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ নাসরিন আক্তার রিভা (২০) নামে এক প্রবাসীর স্ত্রী ও কলেজ ছাত্রীর লাশ তার বাবার বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে। এর আগে গত ৯ অক্টোবর ওই ছাত্রীকে হাজীগঞ্জের একটি বে-সরকারি হাসপাতালে এবং পরে কুমিল্লায় আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই ছাত্রী কুমিল্লার সেই হাসপাতালে মারা যায়। নাসরিন হাজীগঞ্জ উপজেলার হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নের পূর্ব হাটিলা গ্রামের বেপারী বাড়ির প্রবাসী আঃ রহিমের মেয়ে। একই ঘটনায় নাসরিন আক্তারের ছোট বোন আইরিন আক্তার অসুস্থ হলে তাকেও হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গতকাল শুক্রবার বিকেলে নাসরিনের লাশ ময়না তদন্তের জন্যে মর্গে পাঠিয়েছে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ। নাসরিনের মৃত্যু এবং ছোট বোনের অসুস্থ হওয়ার ঘটনা রহস্যজনক বলে অনেকেই ধারণা করছেন।
নিহত নাসরিন বেপারী বাড়ির প্রবাসী আব্দুর রহিমের দ্বিতীয় মেয়ে এবং হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পাস করেছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে থানা পুলিশের পরামর্শক্রমে জ¦রে আক্রান্ত নিহতের ছোট বোন আইরিন আক্তারকে ফের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পূর্ব থেকে অর্থাৎ ৮ অক্টোবর থেকে আইরিন জ¦রে আক্রান্ত বলে তার পরিবার দাবি করেছে। আইরিন স্থানীয় হাটিলা টঙ্গিরপাড় উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গতকাল শুক্রবার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্যে চাঁদপুর মর্গে পাঠিয়েছে। এদিকে নাসরিনের মৃত্যুর খবর শুনে এলাকায় কয়েকশ’ নারী-পুরুষ ঘটনার কারণ জানার জন্যে বেপারী বাড়িতে ভিড় করে।
এলাকাবাসী ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার সকালে নাসরিনের মা নিলুফা ইয়াসমিন দুই মেয়েকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসার জন্যে ঢাকা যান। সে দিন রাত অনুমান সাড়ে দশটার দিকে ক’জন দুর্বৃত্ত তাদের ঘরে প্রবেশ করে। তাদের ডাক-চিৎকার শুনে বাড়ির মানুষ এগিয়ে আসলে দুর্বৃত্তরা ঘরের দরজা খুলে পালিয়ে যায়। বাড়ির লোকজন এসে নাসরিন ও তার ছোট বোন আইরিন আক্তার রেখাকে অচেতন হয়ে পড়ে থাকতে দেখে। পরে আত্মীয়-স্বজন এসে বাড়ির লোকজনসহ দু বোনকে উদ্ধার করে হাজীগঞ্জ বাজারস্থ বিসমিল্লাহ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে রাতভর তাদের চিকিৎসা করা হয়।
অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় এবং নাসরিনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকায় বিসমিল্লাহ হাসপাতাল থেকে দু’ বোনকে চাঁদপুর সদর অথবা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। কিন্তু তার মা ও আত্মীয়-স্বজন দু বোনকে কুমিল্লা সিডিপ্যাথ নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করায়। বৃহস্পতিবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাসরিন মারা যায়। পরে তার লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জলিলুর রহমান মির্জা ও ইউপি সদস্য হানিফ মোল্লা জানান, মঙ্গলবার রাতে ক’জন দুর্বৃত্ত চুরি করতে অথবা অসৎ উদ্দেশ্যে তাদের ঘরে প্রবেশ করে। এলাকার মানুষের মাঝে গুঞ্জন রয়েছে নাসরিনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এক পর্যায়ে দু’ বোনের ডাক-চিৎকার শুনে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যাওয়ার সময় বাড়ির মানুষ তাদের দেখেছে। তবে কেউ তাদের চিনতে পারেনি। বেপারী বাড়ির বাসিন্দা মাসুদ হোসেন জানান, ডাক-চিৎকার শুনে ঘর থেকে বের হলে কাউকে তিনি দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখেছেন।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, নাসরিনের মৃত্যুর বিষয়টি রহস্যজনক। স্থানীয় একটি মহল এটিকে ধর্ষণ বলে গুঞ্জন ছড়ানোর চেষ্টা করলেও এমন কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তবে কুমিল্লা সিডিপ্যাথ হাসপাতালের চিকিৎসকের প্রতিবেদনে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে নাসরিন মারা গেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা মৃত্যুর কারণ জানার জন্যে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্যে মর্গে পাঠিয়েছি। ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসার পরেই বিষয়টি পরিস্কারভাবে জানা যাবে।
উল্লেখ্য, নাসরিনের গত ছয় মাস আগে চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের মনিহার গ্রামের বাসিন্দা দুবাই প্রবাসী হযরত আলীর সাথে বিয়ে হয়। তার মৃত্যুর খবর শুনে তার পিতা আব্দুর রহিম ও স্বামী হযরত আলী গতকাল শুক্রবার দুপুরে দেশে ফিরে এসেছেন।