• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

১০ম চতুরঙ্গ ইলিশ উৎসবের সফল সমাপ্তি

উৎসবটি যাতে জাতীয় উৎসবের স্বীকৃতি পায় তার জন্যে আমি চেষ্টা করবো : ডাঃ দীপু মনি এমপি

প্রকাশ:  ০২ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:৫৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চতুরঙ্গ সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে ১০ম প্রাণ ফ্রুটিক্স ইলিশ উৎসবের সফল সমাপ্তি হয়েছে। গতকাল ১ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও গুণী ব্যক্তিদের সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে ৮ দিনব্যাপী ইলিশ উৎসবের সফল সমাপ্তি ঘটে।
    সমাপনী দিনে উৎসবের প্রধান উপদেষ্টা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলালের সভাপ্রধানে ও চতুরঙ্গের মহাসচিব হারুন আল রশীদের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডাঃ দীপু মনি এমপি। তিনি বলেন, এ উৎসবের তারিখ বর্ধিত করা হয়েছে আমার জন্যে। আমি তাই কৃতজ্ঞ। আগরতলার মানুষদেরকে ভুলে যাওয়া কষ্টকর। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিপুরা রাজ্যের মানুষের সংখ্যা ছিলো ১৪ লাখ। আর বাংলাদেশের ১৭ লাখ মানুষকে তারা সেদিন আশ্রয় দিয়েছিলো। ২০১০ সাল পর্যন্ত এ দেশের কোনো মন্ত্রী-এমপি আগরতলায় যায়নি। তারপর প্রথম আমি গিয়েছি। আমি যখন সেখানে গিয়েছি, মনে হয়েছে বাংলাদেশেই এসেছি। চাঁদপুর-কুমিল্লা এক সময় ত্রিপুরার অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেই হিসেবে ত্রিপুরার মানুষ আমাকে কাছে পেয়ে তাদের মেয়ে হিসেবে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিল। আমি ত্রিপুরা গেলে এখনও গাড়ির জানালা খুলে রাখি। ত্রিপুরাবাসী আমাকে দেখলে বলে, দীপু মনি যাচ্ছে। এ কথা শুনে গর্বে বুক ভরে যায়। তিনি বলেন, যারা চাঁদপুরে ইলিশ উৎসব করছে তারা চাঁদপুরের ২৭ বছরের বিজয় মেলার সাথে জড়িত। এরাই চাঁদপুরের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক জগতে সক্রিয় আছে। বিজয় মেলা এ বছর ২৭ বছরে পা রেখেছে। মুক্ত দিবসে বিজয় মেলা উদ্বোধন করতে আসলে আমার অনেক স্মৃতি মনে পড়ে। সেদিন আমার জন্ম হয়েছে। চাঁদপুরের কন্যা হিসেবে মানুষের সেবা করার জন্যেই আমার জন্ম হয়েছিল।
    তিনি বলেন, ইলিশ মানে চাঁদপুরবাসীর গর্বের বিষয়। মা ইলিশ ও জাটকা নিধন রোধে ইলিশ উৎসব সচেতনতার উৎসব। নদীর পাড় ঘেঁষা মানুষদের সচেতন করতে পারাতেই ইলিশ সম্পদ রক্ষা পেয়েছে। আর চাঁদপুরকে ‘ইলিশের বাড়ি’ নামে ব্র্যান্ডিং করা সম্ভব হয়েছে। উৎসব স্মরণিকায় ইলিশের উপর ১১টি কবিতা দেখেছি। তাতে মনে হয়েছে ইলিশ উৎসবের মাধ্যমে সাহিত্য চর্চাও করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ভিন্ন ভিন্নভাবে গবেষণা করে ইলিশের জন্ম রহস্য উদ্ঘাটন করেছে। গবেষকরা যা করেছেন তা চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাথে সম্পৃক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা মা ইলিশ রক্ষায় আন্দোলন গড়ে তুলেছি। চতুরঙ্গের ইলিশ উৎসবটি জাতীয় উৎসব হিসেবে যাতে স্বীকৃতি পায়, তার জন্যে আমি চেষ্টা করবো।
    ডাঃ দীপু মনি বলেন, ’৭১-এর হত্যাকারী, ধর্ষণকারী, ’৭৫-এর হত্যাকারী, ২০০৪ সালের গ্রেনেড মেরে মানুষ হত্যাকারীরা এখন আবার নতুনভাবে ষড়যন্ত্র করছে। এদেরকে সোনার বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ প্রতিহত করতে হবে। স্বাধীন দেশকে নিশ্চিহ্ন করতে আবারও ওই অসাধু চক্র মাথাচাড়া দিতে চাইছে। আসুন ঐক্যবদ্ধভাবে তাদেরকে সোনার বাংলাদেশ থেকে প্রতিহত করি।
    অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ইলিশ উৎসবের আহ্বায়ক কাজী শাহাদাত, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন পাটওয়ারী এসডু, চতুরঙ্গের চেয়ারম্যান অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদার, আগরতলা ত্রিপুরার সাংস্কৃতিক সংগঠক ও সাংবাদিক অমিত ভৌমিক ও চিত্রসংগ্রাহক মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন মজুমদার। এই অনুষ্ঠানে অমিত ভৌমিক, আগরতলার আবৃত্তিশিল্পী শাওলী রায়, কণ্ঠশিল্পী সর্বানী দাস দত্ত, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মির্জা জাকির, মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুদ্দিন মজুমদারকে চতুরঙ্গ পদক ২০১৮ প্রদান করা হয়। একই সাথে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয় পরিবেশ আন্দোলনের আশিক খানকে।
    বিকেলে শিশু-কিশোরদের খুদে গানরাজদের ও সেরা গানবাজদের ফাইনাল রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৭ জন শিশু শিল্পীকে বিজয়ী করা হয় ও ২ জন শিশু শিল্পীকে বিশেষ বিবেচনায় সনদ ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়। একই সময় চতুরঙ্গ সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পী রাজিব চৌধুরী, এমএইচ বাতেন, মামুন, শুভ্র রক্ষিত, সাদ্দাম হোসেন, শিবা দাস, প্লাবন ভট্টাচার্য সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
    প্রধান অতিথির আগমন ঘটলে আগরতলার কবি কিঙ্কর নারায়ণ দত্তের কবিতা আবৃত্তি করেন বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদের শিল্পীরা। পীযূষ কান্তি রায় চৌধুরীর পরিচালনায় আবৃত্তি করেন অথৈ, পায়েল, নিলয় দাস, আবৃতি, হাসি ও আছিয়া আক্তার মিথিলা। এ কবিতাটি এবারে উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে। সেজন্যে তাকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়েছে। পরে রাত্রিকালীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন তারকা শিল্পী এফএ সুমন ও এলিজা। এদের পূর্বে কবিতা আবৃত্তি করেন আগরতলার সংবর্ধিত আবৃত্তি শিল্পী শাওলী রায় ও সঙ্গীত পরিবেশন করেন সর্বানী দাস দত্ত। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ডাঃ দীপু মনির কাছ থেক সেরা রাঁধুনী, মেঘনা পাড়ের রমণী, ইলিশ ঘুড্ডি, সেরা ও খুদে গানবাজ বিজয়ীরা সনদ ও পুরস্কার গ্রহণ করেন।