বৃদ্ধকে ধাক্কা দেয়া ঘাতক স্কুটার সনাক্ত হয়নি
জেলায় পৃথক ৪টি দুর্ঘটনায় হতাহত ১২
চাঁদপুর জেলার ৪টি স্থানে পৃথক ৪টি দুর্ঘটনায় এক বৃদ্ধ নিহতসহ কমপক্ষে ১২ জন হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার সকালে হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ সড়কের হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় দুটি দুর্ঘটনায় ৮ জন আহতের ঘটনা ঘটে। একইদিন চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের দেবপুর এলাকায় অজ্ঞাত একটি সিএনজি স্কুটার এক বৃদ্ধকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কিছু পরেই রুহুল আমিন হাওলাদার (৭০) মারা যান। এছাড়া দুপুরের কিছু পরে একই সড়কের চাঁনখার দোকান এলাকার নুুরুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে সিএনজি স্কুটার আর প্রাইভেট কারের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ জন মারাত্মক আহত হয়।
জানা যায়, এদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ সড়কের হাজীগঞ্জ-নোয়াখালী রূটে চলাচলকারী জননী পরিবহনের একটি বাস রামগঞ্জ থেকে হাজীগঞ্জে আসার পথে হাজীগঞ্জ বাজারস্থ মকিমাবাদ এলাকার ওভারব্রীজ পার হয়ে সড়কের পশ্চিম পাশে নেমে পড়ে । এতে করে এক নারীসহ ঐ বাসের কমপক্ষে ৩ যাত্রী আহত হয়েছে।
এই দুর্ঘটনার শিকার আহত এক নারীর সন্তান বেলচোঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী প্রবাসী গাজী শরিফ আহম্মেদ চাঁদপুর কণ্ঠকে মুঠোফোনে জানান, জননী পরিবহনের বাসটি রামগঞ্জ থেকে হাজীগঞ্জে আসার পথে চালক বেলচোঁ বাজারে নেমে হেলপারকে গাড়ি চালিয়ে হাজীগঞ্জে নিয়ে যাবার জন্য চালকের আসনে বসিয়ে দেন। সেই হেলপারের কারণে গাড়িটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এ ঘটনায় গাজী শরীফ আহম্মেদের ভাই গাজী নাজমুল হকও আহত হন।
এর কিছু পরেই একই সড়কের হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের সামনের অংশে রামগঞ্জমুখী বালুবাহী পিকআপ ভ্যান হাজীগঞ্জগামী অটোরিক্সাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই অটোরিক্সা চালকসহ কমপক্ষে ৫ জন আহত হয়। এই ঘটনায় মারাত্মক আহত হন হাজীগঞ্জের বড়কুল গ্রামের হোাসেনের স্ত্রী পপি বেগম (৪০), একই গ্রামের নুরুল ইসলামের স্ত্রী মোবাশে^রা (৫০) ও মৃত সেকান্দর মিয়ার ছেলে ইসলাম (৭৯) এবং ফরিদগঞ্জের চালিয়াপাড়া গ্রামের মোজাম্মেলের স্ত্রী পারুল(৪৫)। এরা সবাই হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দুর্ঘটনার শিকার অটোরিক্সা চালক বড়কুল গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে হাবিব (৩০) মারাত্মক আহত হওয়ায় তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। এ বিষয়গুলো চাঁদপুর কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত চিকিৎসক।
এদিকে সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে হাজীগঞ্জের বাকিলা ইউনিয়নের চতন্তর গ্রামের হাওলাদার বাড়ির মৃত আফিজ উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে রুহুল আমিন হাওলাদার(৭০) অজ্ঞাত সিএনজি স্কুটারের ধাক্কায় নিহত হন। নিজের গরুর জন্যে ঘাস কেটে রুহুল আমিন হাওলাদার পাশর্^বর্তী চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক অতিক্রম করার সময় অজ্ঞাত একটি সিএনজি স্কুটার তাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। এর কিছু পরে স্থানীয়রা বিষয়টি টের পেয়ে আহতকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নেয়ার সময় পথিমধ্যে মারা যান রুহুল আমিন। এ ঘটনায় বাকিলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য চতন্তর গ্রামের মানিক মিয়া চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, নিহতের পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই একই দিন বাদ এশা পারিবারিক গোরস্থানে রুহুল আমিনকে দাফন করা হয়। তবে ঘাতক সিএনজি স্কুটার কিংবা তার চালককে সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
দুপুরের কিছু পরে চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কের চাঁদখাঁরপুল এলাকার নুরুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে হাজীগঞ্জগামী যাত্রী বোঝাই একটি সিএনজি স্কুটারকে চাঁদপুরগামী একটি প্রাইভেট কার সজোরে ধাক্কা দিলে সিএনজি স্কুটার যাত্রীরা মারাত্মক আহত হয়। আহতদের মধ্যে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন হাজীগঞ্জের পূর্ব মাতৈন গ্রামের মৃত মুসলিম সর্দারের ছেলে সফিক সর্দার(৩৪), সদর উপজেলার বড় সুন্দর গ্রামের ছেরাজল হকের ছেলে জসিম পাটোয়ারী(৬০), মতলব উপজেলার আমিরাবাদ এলাকার মজিবুর রহমানের স্ত্রী জায়েদা বেগম(৬৫)। দুঘটনার শিকার দুটো গাড়ি চাঁদপুর মডেল থানায় রয়েছে বলে একই থানার উপ-পরিদর্শক সফিকুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।
রুহুল আমিন হাওলাদার নিহতের ঘটনায় চাঁদপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ রাশেদ বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। নিহতের মরদেহ পরবর্তী ব্যবস্থার জন্যে হাজীগঞ্জ থানায় অবহিত করা হয়েছে। হাজীগঞ্জের দুটি দুর্ঘটনার বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) আঃ মান্নান চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, দুর্ঘটনার শিকার পিকআপ ভ্যান ও অটোরিক্সা দুটি আটক রয়েছে আর জননী পরিবহনের কেউ বড় ধরনের আহত হয়নি। এদিকে রুহুল আমিন হাওলাদার নিহতের ঘটনায় হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর হোসেন রনি বলেন, দুর্ঘটনার স্থানটি চাঁদপুর থানা এলাকায়, তাই বিষয়টি চাঁদপুর মডেল থানা দেখবে।