১০ম প্রাণ ফ্রুটিক্স চতুরঙ্গ ইলিশ উৎসবের ২য় দিনের আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান
জীবনে অনেক উৎসব দেখেছি, কিন্তু চাঁদপুরের ইলিশ উৎসব দেখে আমি সত্যি মুগ্ধ : পুলিশ সুপার মোঃ জিহাদুল কবির পিপিএম
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ জাহিদুল কবির পিপিএম বলেছেন, ছাত্র জীবন থেকে আজকের কর্ম জীবন পর্যন্ত অনেক উৎসব দেখেছি। চাঁদপুরে এসে ইলিশ উৎসব দেখে সত্যি অভিভূত ও মুগ্ধ। তিনি বলেন, আমি চাঁদপুরে আসার পর যখন এ উৎসব সম্পর্কে আমাকে বলা হলো তখন আমি ভাবছিলাম, এটা এরা কী বলে! এরপর থেকে আমি খোঁজ-খবর নিয়ে উৎসব সম্পর্কে জেনে সত্যি এটি দেখার অপেক্ষায় ছিলাম।
তিনি বলেন, আমাকে যখন চাঁদপুরে বদলি করা হলো, তখন আমার কাছের লোকজন সকলেই আমাকে বলেছে, যাও চাঁদপুরে যাও, নিজেও ইলিশ খেও, আমাদের জন্যে পাঠাইও। সত্যি আপনারা বিশ^াস করবেন কি না, এখনো ফোন করে এরা বলে, খাও, পেট ভরে ইলিশ খাও।
তিনি আরো বলেন, ইলিশ মানে চাঁদপুর, চাঁদপুর মানে ইলিশ। আর এই ইলিশের কারণে এ জেলাকে ব্র্যান্ডিং জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু দেশবাসী নয়, বিশ^বাসী সবাই চিনে এ জেলাকে ইলিশের কারণে। তিনি আরো বলেন, চাঁদপুরের ইলিশের স্বাদ সত্যি মনে রাখার মতো। শুধু তাই নয়, ইলিশের ঘ্রাণও আলাদা। আমার মতে চাঁদপুরের ইলিশের মান আলাদা হওয়ায় এর মূল্য আলাদা হয়েছে। চাঁদপুরের ইলিশকে কীভাবে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়, সে ব্যাপারে উপায় বের করার বিষয়টি ভেবে দেখার জন্যে গবেষণা করার আহ্বান জানাই।
তিনি আরো বলেন, চতুরঙ্গ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে ইলিশ উৎসব করে ইলিশকে একটি অবস্থানে এনেছে। তাই এটি শুধু করলে হবে না, মাদক ও বাল্যবিবাহ বিষয়ে সামাজিক কাজটিও তাদের করতে হবে। চতুরঙ্গের সকল ভালো কাজের সাথে আমি আছি ও থাকবো এবং আমার পুলিশ প্রশাসনও আপনাদের সাথে আছে।
তিনি আগামী ৬ অক্টোবর থেকে ‘মা ইলিশ’ রক্ষায় সকলের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, আপনারা সহযোগিতা করলে সুফলভোগী আপনারাই হবেন।
পুলিশ সুপার মোঃ জিহাদুল কবির পিপিএম গতকাল সন্ধ্যায় চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমী মঞ্চে ১০ম প্রাণ ফ্রুটিক্স চতুরঙ্গ ইলিশ উৎসবের ২য় দিন সন্ধ্যার আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
উৎসব উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক, সাহিত্য একাডেমী চাঁদপুরের মহাপরিচালক, দৈনিক চাঁদপুর কন্ঠের প্রধান সম্পাদক রোটাঃ কাজী শাহাদাতের সভাপ্রধানে ও সংগঠনের মহাসচিব হারুন আল রশীদের উপস্থাপনায় উক্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ জামাল হোসেন।
আলোচনার শুরুতে সংগঠনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা রাখেন সংগঠনের চেয়ারম্যান অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদার। অনুষ্ঠানে সকল অতিথিকে উৎসবের ব্যাজ ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এ সময় মঞ্চে আরো উপবিষ্ট ছিলেন পৌর মহিলা কাউন্সিলর ফরিদা ইলিয়াস ও অ্যাডঃ মোঃ মনোয়ার হোসেন।
অনুষ্ঠানে চাঁদপুরের সাংস্কৃতিক সংগঠন সুরধ্বনি সংগীত একাডেমি এবং সপ্তরূপা নৃত্য শিক্ষালয়কে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এছাড়াও বিকেলে অনুষ্ঠিত প্রীতি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ২টি দলের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে ক্রেস্ট ও সনদ বিতরণ করা হয়।
বিকেল ৩টায় ইলিশ উৎসবের সেরা ও খুদে নাচিয়েদের অডিশন পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এই পর্ব শেষে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রীতি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। ‘ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে মা ইলিশ নিধন রোধের চেয়ে নদী দূষণ রোধ করা জরুরি।’ এই বিষয়ের উপর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ছিলো পক্ষদল। এ দলে বিতর্ক করেন আব্দুল্লাহ আল হাসিব, হোসাইন আহমেদ ও দলপ্রধান আনন্দ লোধ। বিপক্ষ দলে অবস্থান করে পুরাণবাজার মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয়। বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন তাসনুর আক্তার, উম্মে সায়মা ও দলপ্রধান পাপন ত্রিপুরা। সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোঃ হাবিবুর রহমান পাটওয়ারী, মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন টিআইবির ইয়েস গ্রুপের দলপ্রধান মোঃ আবু সালেহ। সবশেষে সুরধ্বনি সঙ্গীত একাডেমি ও সপ্তরূপা নৃত্য শিক্ষালয়ের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সুরধ্বনি সঙ্গীত একাডেমির অধ্যক্ষ অনিতা কর্মকারের পরিচালনায় যন্ত্র সঙ্গীতে ছিলেন পরিমল দাস নুপুর । সঙ্গীত পরিবেশন করে প্রগতি দত্ত, অর্পিতা দাস, পুষ্পিতা দাস, অনন্যা বণিক, মেহবুবা নিহা, অনুভব সাহা, নিহা, পৃথা, ইকরা ও সানজিদা আলম। সপ্তরূপা নৃত্য শিক্ষালয়ের অধ্যক্ষ অনিমা সেন চৌধুরীর পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করে দেবশ্রী সাহা, প্রান্তিকা সাহা, তাহরিমা হোসেন নোভা, মরিয়ম আক্তার আকিবা, তানজিলা হোসেন প্রতিভা, সম্পূর্ণা, আরাধ্যা, তমা সাহা, অকিতা, হৃদিতা।