সম্পত্তি না থাকায় ছেলেরা খোঁজ রাখে না আঃ রহমান দম্পতির
সম্পত্তি আর বসত ঘর না থাকার কারণে নিজের সস্তানরা খোঁজ রাখে না বয়োবৃদ্ধ আঃ রহমান (৮০) আর হজুনী বেগম (৬৮) দম্পতির। স্ত্রীকে নিয়ে যে ঘরে দীর্ঘদিন থাকতেন আঃ রহমান সেই ঘরটিও সহসা ছেড়ে দিতে হবে ঘরের মালিককে। বয়সের ভারে ভিক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। কেউ কিছু দিলে পেটে দানাপানি পড়ে, না দিলে উপোস থাকতে হয়। এমন হতভাগা এক দম্পতির খোঁজ মিললো হাজীগঞ্জের গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের স্থানীয় মৈশামুড়া গ্রামের বড় বাড়িতে। আঃ রহমান ঐ বাড়ির মৃত আকমত আলীর ছেলে।
সম্প্রতি বড় বাড়িতে গেলে স্ত্রী হজুনী বেগমের উপস্থিতিতে আঃ রহমান চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি বলতে তেমন কিছু ছিলো না। দাম্পত্য জীবনে ১১ সন্তানের মুখ দেখলেও বেঁচে আছেন খোকন (৫০) ও হাকিম (৪৫) নামের দুই সন্তান। এদের মধ্যে খোকন ভাংগারি মালামালের কাজ করেন হাজীগঞ্জ বাজারে আর হাকিম কাজ করেন কুমিল্লার বাগমারা এলাকার ফার্নিচারের দোকানে। দুজনই তাদের স্ব স্ব কর্মস্থলে থাকেন স্ত্রী আর সন্তানদের নিয়ে।
‘বাবা-মায়ের জন্যে তাদের সন্তানদের মায়া মহব্বত কিছু নেই কেনো’ এমন প্রশ্নে এই অভাগা দম্পতি বলেন, তারা বাড়িতে আসা দূরে থাক বাবা-মায়ের খোঁজ খবরের জন্যে ফোন পর্যন্ত করে না। এমন কি রমজান বা ঈদে কখনো কোনো খবরই রাখে না ছেলেগুলো। নিজের কোনো সম্পদ আর সম্পত্তি না থাকার কারণে ছেলেগুলো বাবা মায়ের খবর রাখেনি বলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন হজুনী বেগম।
এদিকে বড় বাড়ির লোকজন চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে আঃ রহমান দম্পতি যে ঘরে বসবাস করছেন, সেই ঘরের লোকজন চট্টগ্রামে থাকেন। আসছে জানুয়ারিতে ওই ঘরের লোকজন চট্টগ্রাম থেকে বাড়িতে চলে আসবেন। তাই আব্দুর রহমান দম্পতিকে ডিসেম্বরের মধ্যেই ঘরটি ছেড়ে দিতে হবে বলে দেয়া হয়েছে। সেই কারণে খেই হারিয়ে ফেলেছেন এই দম্পতি।
এ বিষয়ে ওই বাড়ির আব্দুল কাদের (৬৫) জানান, বাড়ির লোকদের সহযোগিতায় তাদের (আঃ রহমান ও হজুনী) খাওয়া, পরা এবং চিকিৎসা চলছে। এলাকার মানুষও সহযোগিতা করে আসছে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন। এখন সবচে’ বড় সমস্যা এদের থাকার। কেউ যদি একটি ঘর করে দেয়, তাহলে এই বুড়ো লোক দুইটার মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে।
একই বাড়ির শহীদুল্লাহ (৫৫) জানান, সরকার ভিজিএফের চাউল কত কিছু দেয়। ভালো ভালো মানুষে পায়, অথচ এই বৃদ্ধ অসহায় লোকটি (আঃ রহমান) পায় না। যারা চাউল দেয়, তাদের সাথে আমি ঝগড়া করেছি। তারপরও দেয়নি।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য রনজিৎ চৌধুরী বলেন, আঃ রহমান বয়স্ক ভাতা পায়। অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই সদস্য বলেন, সবাইকে চাউল দেয়া যায় না। কারণ চাহিদা ২০০জন, বরাদ্দ পাই ৫০ জনের। তাই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সবাইকে দিতে হয়। তাছাড়া যারা বয়স্ক ভাতা পায়, তাদের চাউল দেয়া যায় না।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। ওই ওয়ার্ডের মেম্বার (ইউপি সদস্য) ভালো বলতে পারবেন। যা করার মেম্বার করবে। তিনি কী দিবেন, না দিবেন সেটা প্রস্তাব করতে হবে। তারপর পরিষদ থেকে সাধ্যমতো দেয়ার চেষ্টা করা হবে।