• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

এক মাস চিকিৎসার পর মৃত্যুর কাছে পরাজিত জল্পনা ভট্টাচার্য ॥ থানায় হত্যা মামলা

স্বামীর পরিবারের নির্যাতনে গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগ ॥ ঘটনা ধামাচাপা দিতে প্রভাবশালী মহলের দৌড়ঝাঁপ

প্রকাশ:  ৩১ আগস্ট ২০১৮, ০১:১১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

শাহরাস্তিতে স্বামীর পরিবারের নির্যাতনে জল্পনা ভট্টাচার্য (৪০) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গৃহবধূর ভাই প্রবীর চন্দ্র চক্রবর্তী (৪৫) শাহরাস্তি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
    নিহত গৃহবধূর পরিবার, স্থানীয় এলাকাবাসী, মামলার এজাহার ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শাহরাস্তি ঠাকুর বাজারস্থ নিজমেহার সর্বানন্দ ঠাকুর বাড়ির ধীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের পুত্র বিমল ভট্টাচার্য প্রকাশ পিন্টু’র (৪৫) সাথে ২০০৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সনাতন ধর্মানুসারে মানিকগঞ্জ জেলাধীন মানিকগঞ্জ সদর থানার হিজলী গ্রামের শিববাড়ির বিমলেন্দু চক্রবর্তীর কন্যা জল্পনা চক্রবর্তীর বিবাহ হয়। তাদের সাংসারিক জীবনে জয়শ্রী ভট্টাচার্য (১২) নামে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। ১৪ বছর সাংসারিক জীবনে কন্যা সন্তান ব্যতিত কোনো পুত্র সন্তান জন্ম দিতে না পারায় স্বামী বিমল ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রায়শঃ জল্পনাকে মানসিক নির্যাতন করতো। এরই মাঝে বিমল ভট্টাচার্য ব্যক্তিগত মুঠোফোনে বিভিন্ন মেয়েদের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করে। যা তার স্ত্রী জল্পনার দৃষ্টিগোচর হয়। জল্পনা বিষয়টি নিয়ে বিমলের সাথে ব্যক্তিগতভাবে ও পরিবারের সদস্যদের অবগত করে। এতেই শুরু হয় তার উপর অমানুষিক নির্যাতন। দিনের পর দিন নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সে ওই বিষয়গুলো তার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন সময়ে মুঠোফোনে অবগত করে।
    ঘটনার দিন গত ২৪ জুলাই ২০১৮ সকালে মুঠোফোনে দীর্ঘসময় কথোপকথনের বিষয়টি নিয়ে বিমলের সাথে জল্পনার বাগ্বিত-া হয়। সকালে নাস্তার সময় বাগ্বিত-ার কারণে উত্তেজিত বিমল নাস্তা না খেয়েই বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। পরে তার খোঁজে স্ত্রী জল্পনা পিছু নিলে তাকে না পেয়ে প্রতিবেশী লেয়াকত হোসেন পাটোয়ারীর নিকট পুরো বিষয়টি জানায়। কিছুক্ষণ পর বিমল বাড়িতে ফিরে এসে প্রতিবেশীকে কেনো তাদের পারিবারিক বিষয়টি জানানো হলো এ নিয়ে জল্পনাকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে পুনরায় বাগ্বিত-া শুরু হয়। একপর্যায়ে বিমলের পক্ষ নিয়ে তার বোন মিনা ভট্টাচার্য ও বড় ভাই অমল ভট্টাচার্য জল্পনাকে মারধর করে আহত করে। জল্পনাকে গুরুতর আহতাবস্থায় শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হলে তার অবস্থার অবনতি দেখে প্রথমে কুমিল্লায় পরে ঢাকা স্কয়ার হাসপাতালে ওইদিন রাত ১০টায় ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ ১ মাস স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় গত ২৪ আগস্ট ২০১৮ সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করে জল্পনা ভট্টাচার্য। পরে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ লাশের সুরতহাল করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৬ আগস্ট নিহতের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়না তদন্ত শেষে ওইদিনই নিহতের স্বামীর পরিবার লাশ গ্রহণ করে রাতের আঁধারে পাশর্^বর্তী হাজীগঞ্জ উপজেলার মহাশ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন করে। পরদিন ২৭ আগস্ট নিহতের ভাই প্রবীর চন্দ্র চক্রবর্তী বাদী হয়ে শাহরাস্তি মডেল থানায় ভগ্নিপতি বিমল ভট্টাচার্য প্রকাশ পিন্টু, পিন্টুর বোন মিনা ভট্টাচার্য (৬০) ও ভাই অমল ভট্টাচার্যকে (৫২) আসামী করে একটি হত্যা মামলা রুজু করেন। যার নং-১৫।
    নিহতের ভাই মামলার বাদী প্রবীর চন্দ্র চক্রবর্তী মুঠোফোনে জানান, আমার বোন জল্পনা গুরুতর অসুস্থ জানিয়ে ভগ্নিপতি বিমল আমাদের দ্রুত কুমিল্লায় আসতে বলে। আমি ও আমার অন্য ভাই প্রদ্যুৎ চক্রবর্তী, প্রনব চক্রবর্তী ও প্রহল্লাদ চক্রবর্তী কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে পুনরায় বিমল আমাদের জানায় তাকে কুমিল্লা মুন হসপিটাল থেকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে আমাদেরকে ঢাকায় অবস্থান করার জন্যে বলে। পরবর্তীতে তাকে ঢাকা স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ওই সময় আমার বোন জল্পনা ঘটনার বিস্তারিত আমাদের বলে। ওই সময় জল্পনা জানায়, ঘটনার সময় বিমল ভট্টাচার্য তার বোন মিনা ও ভাই অমলের সহযোগিতায় মারধর করে জোরপূর্বক ফ্লোর ক্লিনার ভিক্সল তাকে খাইয়ে দেয়। আমরা অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারিনি।
    তিনি আরো জানান, লাশের ময়না তদন্ত শেষে বিমলের পরিবারের লোকজন লাশ গ্রহণ করে নিজ এলাকা শাহরাস্তিতে দাহ না করে পাশর্^বর্তী হাজীগঞ্জ উপজেলায় মহাশ্মশানে রাতের আঁধারে দাহ কার্য সম্পন্ন করে। বিষয়টি অধিক সন্দেহের সৃষ্টি করে। এছাড়া থানায় মামলা দায়েরের পর আমার মুঠোফোনে বিভিন্ন নাম্বার থেকে ফোন করে মামলাটি তুলে নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। আমরা বোনের মৃত্যুর সঠিক কারণ ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
    সরজমিনে বিমলের বাড়িতে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে বেশ ক’বার চেষ্টা করেও তাদের কোনো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
    এদিকে ঘটনাটি নিয়ে পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকায় কথিত রয়েছে জনৈক নার্সের (সেবিকা) সাথে বিমলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জেরে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহ চলে আসছে। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে এলাকার কতেক ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী মিলে দৌড়ঝাঁপ দিচ্ছেন। ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নানামুখি গালগল্প ও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

সূতত্র : চাঁদপুর কণ্ঠ

সর্বাধিক পঠিত