• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

শতবর্ষী জিন্নাতের পাশে এসে দাঁড়ালো চাঁদপুর জেলা প্রশাসন

প্রকাশ:  ২৭ আগস্ট ২০১৮, ১৩:৫১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 শতবর্ষী জিন্নাতের নেছার মুখে হাসি ফোটলো চাঁদপুর জেলা ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন।  ৬ সন্তানের জননী জিন্নাতের নেছার স্বামী ইউসুফ আলী খানের মৃত্যুর পর সন্তানদের কোলেপিঠে মানুষ করেছিলেন। কিন্তু সেই বুকের ধন সন্তানরা বড় হওয়ার পর তাদের মায়ের কোনো খবর নিচ্ছেন না। ফলে অন্য বছরের মতো এই ঈদেও প্রতিবেশীদের দেয়া খাবার জুটেছিল তার ভাগ্যে। শত কষ্ট নিয়ে নির্মম এমন নিয়তিকে সঙ্গী করে বেঁচে আছেন ফরিদগঞ্জের জয়শ্রী গ্রামের একশ’ পাঁচ বছরের এ বৃদ্ধা। এ ধরনের তথ্যসম্বলিত সংবাদ একটি জাতীয় দৈনিকে ও সোস্যাল মিডিয়ার কল্যাণে জেলা প্রশাসনের নজরে আসে। ফলাফল তাৎক্ষণিক। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে রোববার দুপুরে ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন নগদ অর্থ, বয়স্ক ভাতার কার্ড, নতুন শাড়ি এবং খাবারের চাল তুলে দেয় তার হাতে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মোঃ ইমরান হোসেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ আওরঙ্গজেব, ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি নূরুন্নবী নোমান, উপজেলা সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুল গণি, প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজল প্রমুখ।
    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জিন্নাতের নেছার স্বামী ইউসুফ আলী খান পেশায় কৃষক ছিলেন। বেশ সহায়-সম্পদের মালিকও ছিলেন তিনি। তিন ছেলে, তিন মেয়ে নিয়ে তাদের ছিলো সুখের সংসার। সন্তানদের সবার বিয়ে হলে পৃথকভাবে বসবাস শুরু করেন তারা। গত ৩০ বছর আগে স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তানদের গলার কাঁটা হন বৃদ্ধা মা জিন্নাতের নেছা। এ ৬ সন্তান হচ্ছে তফুরেন্নেছা, শাহানারা বেগম, রহিমা বেগম, আব্দুল জলিল, আব্দুল মজিদ এবং ইব্রাহীম খলিল। এক সময় ছেলেরা মায়ের কাছ থেকে দূরে সরে গেলেও মেয়েরা মায়ের খোঁজ খবর নিতো। কিন্তু গত কয়েক বছর তাও সীমিত হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে বয়সের ভারে নুয়ে পড়া বৃদ্ধা জিন্নাতের নেছা ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে জানান, বেঁচে থেকে আর কী লাভ হবে! কেউ তো আমার খবর নেয় না। বৃদ্ধার পাশের ঘরের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য শহীদ খান বলেন, প্রতিবেশীরা যা কিছু খেতে দেন, তা নিয়েই দিন চলে যায় জিন্নাতের নেছার। স্থানীয় যুবলীগ নেতা মাজহারুল ইসলাম আক্রাম বলেন, ছেলে-মেয়েরা এ বৃদ্ধা মায়ের খোঁজখবর না নিলেও আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি তার পাশে থাকার জন্যে। কিন্তু দুধের স্বাদ তো আর ঘোলে মেটে না। কারণ, যে সন্তানদের তিনি পেটে নিয়েছেন, তারা তো কেউ পাশে নেই।
    এদিকে শতায়ু বৃদ্ধার এমন অবস্থা নিয়ে চাঁদপুরের সামাজিক সংগঠন ‘চাঁদমুখে’র এইচএম জাকির সোস্যাল মিডিয়ায় (ফেসবুকে) একটি মানবিক আবেদন জানান। তারপরই জিন্নাতের নেছার করুণ কাহিনী সবার নজরে আসে।  
    চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খানের নজরে বিষয়টি এলে তাঁর নির্দেশে রোববার দুপুরে এই বৃদ্ধার হাতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিভিন্ন সামগ্রী তুলে দেয়া হয়।

সর্বাধিক পঠিত