চাঁদপুর গণি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক দিবসে অনুষ্ঠান
দরিদ্রতাকে যে জয় করতে পারে সে মানুষ হতে বাধ্য
---পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ নূরুল আমিন
‘যদি বাবা-মা শুধরায় শিশুদের ভুল, প্রতিটি ঘর হবে এক একটি স্কুল’ এই শ্লোগানে পাঁচ শতাধিক অভিভাবকের উপস্থিতিতে অভিভাবক দিবস-২০১৮ উদ্যাপন করলো শতবর্ষী স্কুল গণি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। অভিভাবকদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলো শিক্ষার্থীর মা। শিক্ষক-অভিভাবকদের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নয়নের মধ্য দিয়ে ছাত্রদের শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটানোই ছিলো দিবসের মূল লক্ষ্য।
গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় গণি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আলহাজ¦ মোশতাক হায়দার চৌধুরীর সভাপ্রধানে ও সিনিয়র শিক্ষক ইসমাঈল প্রধানীয়ার পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব, চাঁদপুরের কৃতী সন্তান ও অত্র প্রতিষ্ঠানের কৃতী ছাত্র মোঃ নূরুল আমিন।
৪৩ বছর পর নিজ বিদ্যালয়ে কোনো অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন সচিব নূরুল আমিন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা অনেকেই দাবি করে দরিদ্রতার কারণে পড়ালেখা করতে পারে না। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমি নিজেও এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলাম। কিন্তু নিজের সততা, নিষ্ঠা ও অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়ে আজ এতদূর আসতে পেরেছি। দরিদ্রতাকে জয় করাটা কষ্টকর, তবে অসম্ভব নয়। দরিদ্রতাকে যে জয় করতে পারে সে মানুষ হতে বাধ্য।
প্রধান অতিথি নিজের ব্যক্তি জীবনের সততার উদাহরণ টানতে গিয়ে বলেন, জীবনে কোথাও থেকে ১ পয়সা ঘুষ নেইনি। অনেক কষ্টে পড়ালেখা শেষ করে যখন ম্যাজিস্ট্রেট হলাম তখন মনে ইচ্ছা জাগলো যদি ডিসি হতে পারতাম! নিজের সততা ও যোগ্যতা দিয়ে প্রথমে নেত্রকোনা ও পরে যশোরের ডিসি হয়েছি। ডিসি হওয়ার পর নিজের সততার স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসক নির্বাচিত হই। তখন থেকে আবার স্বপ্ন দেখি বিভাগীয় কমিশনার হওয়ার। একটা সময় তাও হই। অতঃপর এ বছর সচিব হিসেবে পদোন্নতি হয়। অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি যদি গণি মডেল স্কুলের ছাত্র হয়ে সচিব হতে পারি তবে আপনাদের সন্তান কেন এ স্কুলে পড়ে সচিব বা তার চেয়েও বড় হতে পারবে না? আপনারা শুধু একটু সজাগ থাকুন। সন্ধ্যার পর যেমনি গরু ঘরে তোলেন, হাঁস মুরগী তাদের ঘরে পাঠান, তেমনি সন্ধ্যার পর নিজের সন্তানকেও ঘরে তুলবেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র ও অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ছাত্র আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদ, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র অ্যাডঃ সেলিম আকবর এবং বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক জীবন কানাই চক্রবর্তী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্বাস উদ্দিন। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র শিক্ষক তাজুল ইসলাম ও রতœা রাণী সরকার। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রাঞ্জল বক্তব্য রাখে গণি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় বিতর্ক ক্লাবের সভাপতি জাহিদ হোসেন। তার সাবলীল বক্তব্যে খুশি হয়ে তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসক তাকে এক সেট বই উপহার দেন। অভিভাবকদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন মোহাম্মদ সোলাইমান।
আলোচনা পর্ব শেষে ২০১৬ সালে জেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হওয়ায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্বাস উদ্দিনকে অভিনন্দন স্মারক তুলে দেয়া হয় এবং স্কুলের সকল ক্লাসের মেধাবীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়। সবশেষে শিক্ষার মানোন্নয়নে অভিভাবকদের পরামর্শ লিখিত আকারে গ্রহণ করে তা আগামী দিনে পর্যায়ক্রমিক ভাবে কার্যকর করবে বলে জানান স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
সূত্র : চাঁদপুর কণ্ঠ