সরকারের পাশাপাশি রোটারিয়ানরা তাদের সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করলে দেশ এগিয়ে যাবে
চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের ৪৪তম অভিষেক অনুষ্ঠান-২০১৮ গতকাল শুক্রবার ২৭ জুলাই রাতে চাঁদপুর ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব, চাঁদপুরের কৃতী সন্তান মোঃ নূরুল আমিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রোটাঃ আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদ। প্রধান অতিথির সহধর্মিণী মিসেস চাঁদ সুলতানা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন রোটারীর ডেপুটি গভর্নর অধ্যাপক জাকির হোসেন, অ্যাসিসটেন্ট গভর্নর মোমিনুল হক চৌধুরী, চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম, লায়ন্স ক্লাব অব চাঁদপুর রূপালীর সাবেক সভাপতি অ্যাডঃ সেলিম আকবর, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ। চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের বিদায়ী সভাপতি রোটাঃ দেওয়ান আরশাদ আলীর সভাপ্রধানে ও অনুষ্ঠান চেয়ারম্যান রোটাঃ পিপি কাজী শাহাদাতের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিদায়ী সেক্রেটারী রোটাঃ শাহেদুল হক মোর্শেদ, রোটারী ক্লাবের ২০১৮-১৯ রোটারী বর্ষের সভাপতি রোটাঃ অ্যাডঃ সাইয়েদুল ইসলাম বাবু ও সেক্রেটারী রোটাঃ খোরশেদ আলম পাটওয়ারী কাঞ্চন। আরো বক্তব্য রাখেন জীবনদীপের প্রতিষ্ঠাতা রোটারিয়ান পিপি অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদার ও ব্রেইভের পরিচালক রূপক রায়। অনুষ্ঠানে রোটারী আন্তর্জাতিক জেলার নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তাবৃন্দ, চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের সকল পর্যায়ের সদস্যবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত অন্যান্য অতিথিগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নূরুল আমিন বলেন, সালাম-বরকত রফিক-জব্বার ১৯৫২ সালে শহীদ হয়েছেন। তাঁরা তাঁদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের মাতৃভাষা এনে দিয়েছেন। সেই মাতৃভাষা আজ আন্তর্জাতিক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত। একুশে ফেব্রুয়ারি আসলে শহীদ মিনারে আমরা এতো ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাই যা চিন্তা করা যায় না। পৃথিবীর মধ্যে যতো কিছু শ্রদ্ধা করার জন্যে আছে সবগুলো একত্রে করলেও বাংলাদেশে যতো শহীদ মিনার আছে তাঁর শ্রদ্ধার সমান হবে না_এটাই বাস্তবতা। সেজন্যে বাংলাদেশে বীরের জন্ম হচ্ছে। আমরা কী দেখলাম, ১৯৭১ সালে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা পেয়েছি। আমরা দেশের জন্যে রক্ত দিতে পারি, মানুষের জন্যে সেবা দিতে পারবো না কেনো। রোটারী ক্লাব ১শ' ১৩ বছর যাবৎ শুধু বাংলাদেশে নয়, আন্তর্জাতিকভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। পোলিওমুক্ত করার জন্যে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে কাজ শুরু করেছে এই রোটারী ক্লাব।
ভারপ্রাপ্ত সচিব নূরুল আমিন তাঁর বক্তব্যের শুরুতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। রোটারিয়ানরা তাদের সেবার মনোভাব নিয়ে দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, আমাদেরকে স্বপ্ন দেখতে হবে। স্বপ্ন না থাকলে কোনো জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। যেটা ঘুমিয়ে দেখা হয়, সেটা স্বপ্ন নয়। যেটার জন্যে আমি ঘুমাতে পারি না, সেটাই হলো স্বপ্ন। নারী নির্যাতন, দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধেও রোটারিয়ানরা কাজ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, রোটারী ক্লাব একটি আন্তর্জাতিক সেবা সংগঠন। পৃথিবীজুড়ে তারা আর্তমানবতার সেবায় কাজ করেন। এই ধারাবাহিকতায় চাঁদপুরেও রোটারী ক্লাব অনেক জনহিতকর কাজ করে আসছে। মানুষের সেবায় এবং সমাজ উন্নয়নে অনেক কাজ তারা করেছেন। আমাদের চক্ষু হাসপাতাল, ডায়াবেটিস হাসপাতালসহ আরো অনেক জনহিতকর প্রতিষ্ঠান এই রোটারী ক্লাবের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য সেবার এই মনোভাব নিয়ে চাঁদপুর রোটারী ক্লাব আরো এগিয়ে যাবে-অভিষেক অনুষ্ঠানে এই কামনা করছি।
এদিন শ্রাবণ সন্ধ্যায় আনন্দধ্বনি সংগীত শিক্ষায়তনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। সাংস্কৃতিক এই পর্বটি পরিচালনা করেন রোটাঃ ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। কোরআন তেলাওয়াত করেন রোটাঃ পিপি আবুল কাশেম গাজী ও গীতা থেকে পাঠ করেন রোটাঃ অ্যাডঃ পলাশ মজুমদার। এরপর অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেয়া হয়। শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে রোটারী আন্দোলন ও চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের ইতিহাস তুলে ধরা হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় রোটারীর সাপ্তাহিক সভা এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য। রোটারী প্রত্যয় পাঠ করেন রোটাঃ পিপি তমাল কুমার ঘোষ। এরপর রোটারীর নিয়মানুযায়ী রোটারী পিন ও কলার পরিয়ে দায়িত্বভার হস্তান্তর করা হয়। পরে ২০১৮-১৯ রোটারী বর্ষের বোর্ড সদস্যদের অনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। চাঁদপুরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখায় ৫টি সংগঠনকে চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এগুলো হচ্ছে চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন (সিকেডিএফ), ব্রেইভ, জীবনদীপ, তারুণ্যের অগ্রদূত ও চাঁদপুর পরিবেশ সংরক্ষণ আন্দোলন। সবশেষে অনুষ্ঠিত হয় আকর্ষণীয় ইভেন্ট র্যাফেল ড্র। এ প্রথম চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের কোনো অনুষ্ঠান বড় ডিজিটাল মনিটরে অডিও ভিডিও ভিজ্যুয়ালে বর্ণিল এবং জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়।
২০১৮-১৯ রোটারী বর্ষে চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের অভিষিক্ত বোর্ড সদস্যরা হলেন : প্রেসিডেন্ট রোটাঃ অ্যাডঃ সাইয়েদুল ইসলাম বাবু পিএইচএফ, ক্লাব ট্রেইনার রোটাঃ পিপি কাজী শাহাদাত পিএইচএফ, আইপিপি রোটাঃ দেওয়ান আরশাদ আলী আরএফএসএম, প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট রোটাঃ শেখ মঞ্জুরুল কাদের সোহেল, ভাইস প্রেসিডেন্ট রোটাঃ মোঃ নাছির উদ্দিন খান পিএইচএফ, রোটাঃ সূর্য কুমার নাথ আরএফএসএম ও শাহেদুল হক মোর্শেদ আরএফএসএম, সেক্রেটারী রোটাঃ খোরশেদ আলম পাটওয়ারী কাঞ্চন আরএফএসএম, জয়েন্ট সেক্রেটারী রোটাঃ অ্যাডঃ শরীফ মাহমুদ ফেরদৌস শাহীন পিএইচএফ, রোটাঃ অ্যাডঃ নজরুল ইসলাম পিএইচএফ, রোটাঃ অ্যাডঃ পলাশ মজুমদার আরএফএসএম ও রোটাঃ মোঃ মোস্তফা পিএইচএফ, কোষাধ্যক্ষ রোটাঃ হযরত আলী আরএফএসএম, ডিরেক্টর (ক্লাব সার্ভিস) রোটাঃ ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া আরএফএসএম, ডিরেক্টর (ভোকেশনাল সার্ভিস) রোটাঃ উজ্জ্বল হোসাইন আরএফএসএম, ডিরেক্টর (কমিউনিটি সার্ভিস) রোটাঃ মাহবুবুর রহমান সুমন এমপিএইচএফ, ডিরেক্টর (ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস) রোটাঃ নাজিমুল ইসলাম এমিল, ডিরেক্টর (ইয়ূথ সার্ভিস) রোটাঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম, বুলেটিন এডিটর রোটাঃ কুমার গৌরব, সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস্ রোটাঃ গোপাল সাহা, অ্যাডিশনাল সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস্ রোটাঃ শাহানা ইসলাম ও রোটাঃ সাবি্বর আজম।
চাঁদপুর কন্ঠের সৌজন্যে