• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

৭ মাসেও উন্মোচিত হয়নি ঈশানবালায় শিশু মারজানা হত্যার রহস্য

ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িত তিন বখাটে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে

মেয়ে হত্যার বিচার সুবিচার চান অসহায় বাবা

প্রকাশ:  ২৫ জুলাই ২০১৮, ১০:২৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 হাইমচর উপজেলার ৪নং নীলকমল ইউনিয়নের মেঘনার পশ্চিমপাড় নদী বেষ্টিত দুর্গম চর এলাকা ঈশানবালা গ্রাম। এ গ্রামেরই ৩২নং চর কোড়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী মারজানা আক্তার (বয়স ৯ বছর)। এ বয়সেই তার উপর কুদৃষ্টি পড়ে স্থানীয় কিছু বখাটে তরুণের। বিষয়টি অসহায় দরিদ্র বাবা-মা জানলেও সাহস করে প্রতিবাদ করেননি। ফলে ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ধর্ষণের পর শিশু মারজানাকে হত্যা করা হয়। খবর পেয়ে স্থানীয় হাইমচর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল ঈশানবালা বাজারে খলিল মাতাব্বর কান্দি পরির্দশন করেন। দুষ্ট মানুষের ভুল পরামর্শে মারজানাকে ভূতে মেরেছে বলে ঘটনা রটানোর পর লাশ ময়না তদন্ত ছাড়াই দাফনের অনুমতি চায় তার পরিবার। অসহায় বাবা-মায়ের কথায় প্রশাসনও তার লাশ ময়না তদন্ত ছাড়াই দাফনের অনুমতি দেয়। ঘটনার একদিন পরে মারজানার লাশ গোসল করানোর মহিলা মারজানার পিতা মোকশেদ হাওলাদারকে জানান, শিশুটির গোপন অঙ্গসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিলো। মারজানার মা সেলিনা বেগম মেয়েকে খুঁজতে গিয়ে প্রতিবেশী এক যুবককে দৌড়ে যেতে দেখেছেন। এরপর মারজানার মা-বাবার সন্দেহ হয়, তার মেয়েকে ধর্ষণের পর মেরে ফেলা হয়েছে। এমন কথাগুলো প্রকাশ হতেই পুরো ঘটনা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। শোকে পাগল মেয়ে হারানো পিতা মোকশেদ হাওলাদার ছুটে যান বাজারের রাস্তার ধারে বিলের পাশে সেই বাঁশঝাড়ের কাছে, যেখানে মারজানার লাশ পড়ে ছিলো। খোঁজ নিয়ে দেখেন, ওই স্থানের পাশেই স্থানীয় সেলিম সর্দারের পরিত্যক্ত একটি ঘরের মাটিতে রক্ত লেগে আছে।
    পরবর্তীতে মারজানাকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে চলতি ২০১৮ সালের ১৯ জানুয়ারি মেয়েটির বাবা মোকশেদ হাওলাদার বাদী হয়ে চাঁদপুর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হাইমচর কোর্টে স্থানীয় ৩ যুবককে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং সিআর ০৪/১৮। ধারা ৩০২/৩৭৬/২০১/৩৪ ও ১০৯। আসামীরা হলো : ওই গ্রামের সুরুজকান্দী এলাকার দ্বিন ইসলামের ছেলে জালাল মিয়া (২০), কাদির বেপারীর ছেলে সিদ্দিক (২১) এবং মোঃ সফি উল্যাহর ছেলে সেলিম (২১)। ওই মামলার সূত্র ধরেই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে ২৫ জানুয়ারি কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত।
    হত্যার ঘটনার প্রায় পৌনে দুই মাস পর ১২ ফেব্রুয়ারি সোমবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে হাবিবা মীরা ও হাইমচর থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ মুকবুলসহ সঙ্গীয় ফোর্সের উপস্থিতিতে কবর থেকে মারজানা (৯)-এর লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্ত করা হয়। লাশ চাঁদপুরের মর্গে এনে সেখানে সরকারি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক দিয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল টিম গঠনের মাধ্যমে ময়না তদন্ত করা হয়। এরপর ওই রাতে পুনরায় তাকে কবরে দাফন করা হয়।
    মারজানার মা সেলিনা বেগম জানান, সন্ধ্যার কিছু আগ মুহূর্তে সদাইয়ের জন্য প্লাস্টিকের ব্যাগ হাতে দিয়ে মারজানাকে বাজারে তার বাবার দোকানে পাঠাই। এরপর রাত ৮টা বাজলেও মেয়ে বাড়িতে না ফেরায় বাবা মা দু’জনে মেয়েকে খুঁজতে বের হই। পরে বাজার থেকে বাদীর বাড়ির রাস্তার মাঝখানে একটি বাঁশ ঝাড়ের বিলের পাড়ে তার লাশ পাওয়া যায়।
    মারজানার পিতা মোকশেদ জানান, যখন মারজানার লাশ পাওয়া যায় তখন তার গায়ের কামিজটি উল্টানো ছিলো এবং নাকে-মুখে এবং চোখে জখমের চিহ্ন ছিলো। ওই সময়ে সেখান থেকে পুলিশ একটি টর্চ লাইট উদ্ধার করেছে। প্রথমে এলাকাবাসী বলে, মারজানাকে ভূতে মেরেছে। তাই আমরা লাশ ময়না তদন্ত না করে দাফন করেছিলাম। পরে লাশ গোসল করানো মহিলা যখন বললো, মারজানার গোপনস্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিলো, তারপরে আমরা নিশ্চিত হলাম আমার মেয়েকে খারাপ কাজ করে হত্যা করা হয়েছে।
    তিনি আরো জানান, যাদের আসামী করা হয়েছে তারা প্রায় স্কুলে যাওয়ার সময় মারজানাসহ অন্যান্য স্কুল ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতো। এই ঘটনার পরে আসামীদের পরিবারের পক্ষ থেকে আপোষ করারও প্রস্তাব দেয়া হয়।
    নিহত মারজানার বাবা আরো জানান, এই ঘটনার কয়েক মাস পরে গত মে মাসে হাইমচর থানা পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহভাজন হিসেবে আওলাদ (২১) নামে একজনকে আটক করে। পরবর্তীতে আদালত তাকে তিন দিনের রিমান্ড দেয়। কিন্তু আইনের ফাঁক গলে ১৫ জুলাই আওলাদ জামিনে বেরিয়ে আসে। মোকশেদ হাওলাদার বলেন, আমাদের দেশ এতো উন্নত হয়েছে, অথচ পুলিশ মামলার এজাহারভুক্ত তিন আসামীকে ঘটনার ৭ মাসেও আটক করতে পারেনি। আর কতদিন অপেক্ষা করলে আমি আমার মেয়ের হত্যার বিচার পাবো।
    এদিকে ১৮ জুলাই ঈশানবালায় মাদক ও বাল্যবিবাহবিরোধী সমাবেশে যোগ দিতে এসে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার পিপিএম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং মারজানার পরিবার ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেন। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, অপরাধী যে হোক, অপরাধ প্রমাণিত হলে শাস্তি তাদের পেতে হবে।
    এ বিষয়ে হাইমচর থানার অফিসার ইনচার্জ রনজিত জানান, আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। তদন্তের স্বার্থে এখনো সব কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে অপরাধীদের ছাড় পাবার কোনো সুযোগ নেই।

সূত্র : চাঁদপুর কণ্ঠ

সর্বাধিক পঠিত