শেষ হল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার আলোচিত মামলায় আসামিদের সাফাই সাক্ষ্য শেষে যুক্তিতর্কের দিন ঠিক হয়েছে, এই শুনানি শেষ হলেও নির্ধারিত হবে রায়ের তারিখ। বুধবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন পুরান ঢাকার কারা অধিদপ্তরের মাঠে বিশেষ এজলাসে আগামী ২৩, ২৪, ২৫ অক্টোবর যুক্তিতর্ক শুনানির দিন ঠিক করে দেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আবু আবদুল্লাহ ভূইয়া বলেন, আজ বিচারের মূল একটি পর্ব অর্থাৎ সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়ে গেল। অতি শিগগিরই আমরা রায়ের মুখ দেখতে পাব। খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানকে আসামি করে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ফের সাক্ষ্যগ্রহণের পাঁচ বছর পর এই মামলা যুক্তিতর্ক শুনানির পর্যায়ে পৌঁছল।
বুধবার আদালতে কাশ্মিরি জঙ্গি মাজেদ ভাটের পক্ষে মামলার অন্য আসামি আবদুল মালেকের সাফাই সাক্ষ্য শেষ হয়। মামলায় মোট ২০ জন সাফাই সাক্ষ্য দেন। তার আগে গত ১২ জুন জামিনে ও কারাগারে থাকা ৩১ আসামির আত্মপক্ষ শুনানি হয়। এই ৩১ আসামির সবাই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ আসামি কারাগারে রয়েছেন। খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলার প্রথম দিককার তিন তদন্ত কর্মকর্তা সুপার রুহুল আমিন, মুন্সি আতিকুর রহমান ও আব্দুর রশীদ এবং সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম জামিনে রয়েছেন।
তারেক, সাবেক বিএনপি এমপি শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ ১৯ জন আসামি পলাতক থাকায় তারা আত্মপক্ষ শুনানির সুযোগ পাননি। আসামিদের মধ্যে জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান এবং সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মো. মুজাহিদের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। হামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ জন আহত হন।
সন্ত্রাসবিরোধী ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হওয়া মাত্র গ্রেনেড হামলা ও গুলিবর্ষণ শুরু হয়। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়।
এ ঘটনায় পরদিন মতিঝিল থানার তৎকালীন এসআই ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে এই মামলাটির তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠে, যা পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে।
থানা পুলিশ, ডিবির হাত ঘুরে সিআইডি এই মামলার তদন্তভার পায়। ঘটনার চার বছর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালের ১১ জুন হত্যাকাণ্ডের জন্য একটি এবং বিস্ফোরক আইনে আরেকটি মোট দুটি অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির।
দুই মামলায়ই মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। ২২ আসামির বিচার শুরুর পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটির অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে।
সিআইডির বিশেষ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৩ জুলাই আসামির তালিকায় তারেকসহ আরও ৩০ জনকে যোগ করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন।
২০১২ সালের ১৮ মার্চ তারিখে সম্পূরক অভিযোগপত্রের ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়। লন্ডনে থাকা তারেককে পলাতক দেখিয়ে অভিযোগ গঠন হয়। দুই মামলার বিচারই একসঙ্গে চলছে।