• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

মুখোমুখি যুক্তরাষ্ট্র–তুরস্ক

প্রকাশ:  ১০ অক্টোবর ২০১৭, ০৯:২২ | আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০১৭, ০৯:২৭
আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট

কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের জেরে যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্ক একে অন্যের নাগরিকদের ভিসা দেওয়া স্থগিত করেছে। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র এবং এরপরই তুরস্ক এই ঘোষণা দেয়। আঙ্কারায় মার্কিন দূতাবাসে কর্মরত এক ব্যক্তিকে গত বুধবার গ্রেপ্তারের জেরে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে তুর্কি কর্তৃপক্ষ গতকাল আরেক মার্কিন কূটনীতিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে বলে জানায় স্থানীয় গণমাধ্যম।

আঙ্কারায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী ছাড়া সব ধরনের ভিসা দেওয়া স্থগিত করা হলো। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের নিরাপত্তায় তুরস্কের প্রতিশ্রুতি ‘পর্যালোচনা’ করার সময় এসেছে। এর কয়েক ঘণ্টা পরই গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত তুর্কি দূতাবাসের পক্ষ থেকে ঠিক একই রকম ঘোষণা আসে।

ন্যাটো জোটের সদস্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক মাসেরও কম সময় আগে তুরস্কের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে আগের মতো ইতিবাচক পরিবর্তনের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু তুরস্কে গত বছরের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে অভিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত ফেতুল্লা গুলেনের সঙ্গে যোগসূত্র থাকার সন্দেহে মার্কিন দূতাবাসে কর্মরত এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের জেরে আকস্মিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটল।

ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে ‘হতাশাজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেন সফররত তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে তুরস্কের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন।

তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদোলুর খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন দূতাবাসের গ্রেপ্তার হওয়া ওই ব্যক্তি তুর্কি নাগরিক। মেতিন তপুজ নামের ওই লোককে গত বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়।
ওয়াশিংটন এই গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এতে কূটনৈতিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ল।

রয়টার্স জানায়, তুরস্কের কর্তৃপক্ষ গতকাল সোমবার আরও এক মার্কিন কূটনীতিকের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছে। দেশটির প্রচারমাধ্যম এনটিভি এক খবরে জানায়, যাঁর বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হয়েছে, তিনি পলাতক রয়েছেন। তবে তুর্কি সংবাদপত্র হুরিয়েত জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি বর্তমানে ইস্তাম্বুলে মার্কিন কনস্যুলেট অফিসে অবস্থান করছেন।

তুরস্কের পুলিশ নিশ্চিত করেছে, ওই ব্যক্তির স্ত্রী ও সন্তানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় পুলিশ। তিনি কূটনৈতিক দায়মুক্তির সুবিধা পাবেন না।
গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের আদলে ভিসা দেওয়া স্থগিত করে তুর্কি দূতাবাস বলেছে, পর্যালোচনাকাজ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত তুর্কি দূতাবাস ও কনস্যুলেটে দর্শনার্থী কমাতে, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী ছাড়া দেশটির সবার ভিসা দেওয়া অবিলম্বে স্থগিত করা হলো। প্রথমে পাসপোর্ট ভিসা স্থগিতের কথা বলা হলেও পরে আঙ্কারা জানায়, ই-ভিসা ও বর্ডার ভিসাও স্থগিত করা হচ্ছে।

গত বছরের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর থেকে আঙ্কারা বরাবরই এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লা গুলেনকে দায়ী করছে। এ ছাড়া সিরিয়ায় কুর্দি ওয়াইপিজি যোদ্ধাদের ওয়াশিংটন মদদ দিচ্ছে। আঙ্কারা মনে করে, তুরস্কে নিষিদ্ধঘোষিত পিকেকের মতাদর্শে চলে ওয়াইপিজি। এসব মিলিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক নেতিবাচক রূপ নিয়েছে।

তুরস্কে গত বছরের জুলাইয়ে ব্যর্থ অভ্যুত্থান হয়। এর ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে ফেতুল্লা গুলেনকে ফেরত দেওয়ার জন্য ওয়াশিংটনকে কয়েক মাস ধরে আঙ্কারা চাপ দিয়ে আসছে। যদিও গুলেন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ওই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর তুরস্কে ৪০ হাজার লোককে গ্রেপ্তার এবং ১ লাখ ২০ হাজার লোককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।