• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

যেভাবে সম্পন্ন হলো ‘অপারেশন মেল্টেড আইস’ (ভিডিও)

প্রকাশ:  ০৯ অক্টোবর ২০১৭, ২৩:০২ | আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০১৭, ২৩:১৭
যশোর প্রতিনিধি
প্রিন্ট

যশোরে ‘জঙ্গি আস্তানায়’ শ্বাসরুদ্ধকর ১৫ ঘণ্টার অভিযান ‘অপারেশন মেল্টেড আইস’ শেষ হয়েছে। যশোর শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোড এলাকার একটি বাড়িতে ওই আস্তানায় রোববার রাত ২টা থেকে শুরু হওয়া এ অভিযান সোমবার বিকেল ৫টায় শেষ হয়। অভিযানে সন্দেহভাজন জঙ্গি হাফিজুর রহমান সাগর ওরফে মশিউর রহমানের স্ত্রী খোদেজা আক্তার খাদিজা তিন সন্তান নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। পরে ওই বাড়ি থেকে তিনটি সুইসাইডাল ভেস্ট উদ্ধার করা হয়। 

এর আগে খাদিজার শর্ত অনুযায়ী তার বাবা-মাকে ওই বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। খাদিজা নিহত নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা নুরুল ইসলাম মারজানের বোন। আর অভিযানের দু’দিন আগে পালিয়ে যাওয়া খাদিজার স্বামী হাফিজুর রহমান সাগর ওরফে মশিউর রহমান নবগঠিত জেএমবি’র খুলনা অঞ্চলের নেতা বলে দাবি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযান শেষে সোমবার বিকেল সোয়া ৫টায় ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের ওই বাড়ির সামনে ব্রিফিং করেন খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ইকরামুল হাবিব। 

তিনি জানান, গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পর পুলিশ, র‌্যাবসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রোববার রাত ২টার দিকে ওই বাড়িটি ঘিরে ফেলে। এরপর সোয়াট, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট, বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই অভিযানে অংশ নেয়। ইকরামুল হাবিব বলেন, অভিযানে সন্দেহভাজন শীর্ষ জঙ্গি হাফিজুর রহমান সাগর ওরফে মশিউর রহমানের স্ত্রী খোদেজা আক্তার খাদিজা তিন সন্তান নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। সন্তানরা হলো- দুই মেয়ে সুমাইয়া (৫) ও সুরাইয়া (৩) ছেলে রাজু (২)। ‘এরপর ওই বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে তিনটি সুইসাইডাল ভেস্ট উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি নকশা পাওয়া গেছে। এগুলো কোনো প্রতিষ্ঠানের নকশা কিনা বা এ নিয়ে কোনো হামলা পরিকল্পনা ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে’ যোগ করেন তিনি। 

পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক অভিযান শেষ হয়েছে। এখন পুরো বাড়ি তল্লাশি করে আর কোনো অস্ত্র-বিস্ফোরক আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, আত্মসমর্পণ করা খাদিজাকে তিন সন্তানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাদের ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তবে জঙ্গি সাগর দু’দিন আগে ওই বাড়ি থেকে চলে গেছে। প্রসঙ্গত, রোববার দিবাগত রাত ২টা থেকে যশোরের শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া সড়কে জিলা স্কুলের শিক্ষক হায়দার আলীর বাড়ি ঘিরে ফেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ওই বাড়িতে নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা নুরুল ইসলাম মারজানের বোন খাদিজা ও তার পরিবারের সদস্যরা এক বছর ধরে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছিলেন। খাদিজার স্বামী মশিউর রহমান একটি হারবাল কোম্পানিতে চাকরির কথা বলে বাড়িটি ভাড়া নেন বলে মালিক জানিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কড়া নজরদারিতে রাখা হয় ভবনটি। সকালে ঢাকা থেকে সোয়াট, কাউন্টার ট্যারোরিজম ইউনিট ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। 

এরপর পুলিশ, র‌্যাব যৌথভাবে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়। বেলা ১১টা ১৫ মিনিটের দিকে বাড়ির সামনে হ্যান্ড মাইকে খাদিজাকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়েছে। সাড়া না দিলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এক পর্যায়ে খাদিজা ভবনের ব্যালকনিতে এসে পুলিশকে জানায়, তার বাবা-মাকে আনলে পুলিশের সঙ্গে কথা বলবে। একই সঙ্গে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবে। বিকাল পৌনে ৩টার দিকে খাদিজার বাবা-মাকে ঘটনাস্থলে হাজির করা হয়। 

খাদিজা তার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলার পর বেলা ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে তিন শিশু সন্তানসহ আত্মসমর্পণ করেন। খাদিজা ও তার তিন সন্তান এবং তার বাবা-মাকে পুলিশ হেফাজতে বের করে নেওয়া হয়। বিকাল ৪টার দিকে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ওই ভবনের মধ্যে প্রবেশ করে। সেখানে তল্লাশির সময় বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে একটি সুইসাইডাল ভেস্ট বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়। দ্বিতীয়টি বেলা ৪টা ৪৩ মিনিটে আর বিকেল ৪টা ৫৪ মিনেটের দিকে তৃতীয় সুইসাইডাল ভেস্ট বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়। 

বিকেল ৫টা ১০ মিনিটের দিকে ওই ভবনের প্রায় একশ’ গজ দূরে খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি একরামুল হাবিব প্রেস ব্রিফ্রিং করে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘অপারেশন মেল্টেড আইস’র সমাপ্তি ঘোষণা করেন।