• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী আয়েশার সুখ কেড়ে নিয়েছে লোভী সন্তানরা

প্রকাশ:  ০৯ অক্টোবর ২০১৭, ০১:৫৮ | আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০১৭, ০২:০৪
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক
প্রিন্ট

সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ আয়েশা বেগম। স্বামীর নাম জহিরুল ইসলাম। সুন্দর আগামীর স্বপ্নে বিভোর হয়ে জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন জহিরুল ইসলাম। সেই স্বামীর মৃত্যুর পর যে এমন অসহায় অবস্থায় পড়তে হবে, তা ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি আয়েশা বেগম। 

গত বছরের ১৭ অক্টোবর মারা যান জহিরুল ইসলাম। স্বামীর মৃত্যুর পর সরকারের দেওয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ যাবতীয় সুবিধা পাওয়ার কথা তার স্ত্রী আয়েশা বেগমের। অথচ তারই গর্ভজাত সন্তান বৃদ্ধ মাকে বঞ্চিত করে নিজেই সে ভাতা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই ভাতার লোভে নিজের মায়ের বিষয়ে অভিযোগ তোলে বলছে, তার মা নাকি তার বাবার স্ত্রী নয়। এখানেই শেষ নয়; বৃদ্ধার মাথা গোজার জন্য যে বাড়িটি ছিল নিজ নামে, তারই বিত্তলোভী সন্তানরা তাকে সেই বাড়ি থেকেও বের করে দিয়েছে। অথচ সন্তানরা কিন্তু অভাবগ্রস্ত নয়। তার আট সন্তানের মধ্যে সাতজনই অবস্থাসম্পন্ন। আর যে সন্তানের অবস্থা খুবই সঙ্গীন, সেই সন্তানসহ তিনি এখন বাস করছেন একটি ভাড়াবাড়িতে। দুঃখজনক এ ঘটনা রাজধানী ঢাকার কদমতলী থানার দক্ষিণ দনিয়া এলাকায়।

মৃত মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলামের ছোট ছেলে জিয়াউল হক। তার সঙ্গেই থাকেন বৃদ্ধ মা। জিয়াউল বলেন, আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলাম গত বছরের ১৭ অক্টোবর মারা যান। বাবা মারা যাওয়ার পর আমার বোন সাবিনা বাবার ভাতা তুলে নিচ্ছে, মাকে দিচ্ছে না, তার কোনো খোঁজখবরও নিচ্ছে না। আমার মা আমার বোনের কাছে বাবার মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বইটি চাইলে সে দিতে অস্বীকার করে। বাবার ভাতার টাকায় মায়ের ভালোভাবে চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা না পাওয়ায় মা খুবই কষ্টে আছেন। 

জিয়াউল আরও বলেন, আমি ছোটখাটো ব্যবসা করতাম। ব্যবসায় লোকসানের কারণে আমার অবস্থা এখন খারাপ। তবু আমি মাকে আমার সঙ্গেই রেখেছি।

এ বিষয়ে সাবিনার সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, আমার বাবা তার ভাতা আমাকে লিখে দিয়ে গেছেন। ফলে সেটি আমি তুলে নিচ্ছি। লিখে দিয়ে যাওয়ার কোনো প্রমাণ আছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি সেটি দেখাবেন বলে জানালেও পরে আর সেটি দেখাতে পারেননি। 

তিনি বলেন, আমার মা আমার বাবার স্ত্রী নয়। পরে তিনি ওই এলাকারই আ. রব নামে একজনকে দিয়ে ফোন করান। আ. রব নিজেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে অনুরোধ করেন এ নিয়ে কোনো রিপোর্ট না করতে। তিনি বলেন, জহিরুল ইসলাম ছিল আমার বন্ধু। আমি যতটুকু জানি, তার বাবা অসুস্থ ছিল বলে তাকে ভাতাটা উত্তোলন করার জন্য প্রত্যয়ন করেছিল। কিন্তু ভাতা আজীবন তুলে নেওয়ার অধিকার দেয়নি। সাবিনা সাময়িক ভাতা উত্তোলনের প্রত্যয়নকে ভুল ব্যাখ্যা করছে।

আয়শা বেগম জানান, তার ৯ ছেলেমেয়ে। রিয়াজুল হক নামে তার এক ছেলে ইংল্যান্ডে এবং ময়নুল হক নামে এক ছেলে ইতালি থাকে। ইমামুল হক নামে একজন গুলিস্তানে কাপড়ের ব্যবসা করে। রেহানা বেগম নামে এক মেয়ে টঙ্গী থাকে। মুশি নামে এক মেয়ে মগবাজার থাকে। শাবানা নামে এক মেয়ে ইতালি থাকে। আরেক ছেলে মারা গেছে। সবাই অবস্থা সম্পন্ন; কিন্তু কেউ তার খোঁজ নেয় না। তারা সবাই ব্যস্ত নিজেদের জীবন নিয়ে।

বৃদ্ধা বলেন, দনিয়ায় আমাদের একটি বাড়ি আছে। ছেলেমেয়েরা চেয়েছিল সেই বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে টাকা-পয়সা ভাগাভাগি করে নিতে। আমি রাজি না হওয়ায় তারা আমার সঙ্গে অভিমান করে খোঁজ নিচ্ছে না। আমার মেয়ে সাবিনা আমার ভাতাবই কেড়ে নিয়ে টাকা তুলে খাচ্ছে।

আয়শা বেগম এ প্রতিবেদকের কাছে আকুতি-মিনতি করে বলেন, বাবা, আমার স্বামীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতাবইটি উদ্ধার করে দেন। আমি খুব কষ্টে আছি। আমার প্রাপ্য টাকা আপন মেয়ে তুলে খাচ্ছে, আমার খোঁজও রাখছে না।

জিয়াউল হক বলেন, আমি এখন বেকার। এমতাবস্থায় বৃদ্ধ মায়ের চিকিৎসাও করাতে পারছি না। মায়ের বাড়ি থাকতেও তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমার ভাড়া করা বাড়িতে থাকছেন মা।

জিয়াউল হক বলে চলেন অসহায় বৃদ্ধ মায়ের কথা। পাশে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন আয়েশা বেগম, ধূসর চোখজোড়া তার অশ্রুসজল।

সূত্র: আমাদের সময়

সর্বাধিক পঠিত