• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

যে কারণে চট্টগ্রামে দুবছরে ছাত্রলীগের ১০ নেতাকর্মী খুন

প্রকাশ:  ০৮ অক্টোবর ২০১৭, ১৫:১৮
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতাদের আধিপত্যের লড়াই ও ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে গত দুবছরে অন্তত ১০ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। এসব ঘটনার পেছনে জ্যেষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতাদের ইন্ধন থাকায় পুলিশ অপরাধীদের ধরতে বেশি সক্রিয় নয়। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশকে দিয়েই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতাদের।

ছাত্রলীগে সর্বশেষ খুনের ঘটনাটি ঘটে গত শুক্রবার। এর শিকার হন মহানগর ছাত্রলীগের সহসম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাস। নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত এলাকা নিউমার্কেট এবং রেলস্টেশনের নিয়ন্ত্রণ করে সরকারি সিটি কলেজ। সিটি কলেজের নিয়ন্ত্রণ নিতে ওই কলেজেরই কয়েকজন সাবেক নেতার ইন্ধনে সুদীপ্ত বিশ্বাসকে খুন করা হয়েছে। পুলিশ এমন ধারণা নিয়েই মামলার তদন্ত ও আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।

চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের সাবেক নেতারা এখন নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুই ভাগে ভাগ হয়ে আছেন। এর মধ্যে নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন এবং পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান আছেন সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে। আর লালখানবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. আফসারুল আমীন ও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। এর বাইরে ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেক সুলেমান সেলিম ও সাবেক কাউন্সিলর জালাল উদ্দিন ইকবাল স্বতন্ত্র অবস্থানে আছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন নেতা নতুন করে সিটি কলেজে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। সুদীপ্ত বিশ্বাস এ নিয়ে ফেসবুকে নানাভাবে তাদের কটাক্ষ করেন। তারই জের ধরে তিনি খুন হন বলে পরিবারের বিশ্বাস।

সুদীপ্তর বাবা বাবুল বিশ্বাস বলেন, ছেলেকে বারবার রাজনীতি না করার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু সে কথা শোনেনি।

সদরঘাট থানার ওসি মর্জিনা বেগম বলেন, সুদীপ্ত বিশ্বাসকে হত্যার ঘটনায় কিছু প্রযুক্তিগত অগ্রগতি আছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই সব কিছু প্রকাশ করছি না। গতকাল শনিবার নিহত সুদীপ্ত বিশ্বাসের বাবা বাবুল বিশ্বাস বাদী হয়ে সদরঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় তিনি কাউকে সুনির্দিষ্টভাবে আসামি করেননি।

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের লাশের মিছিল শুরু হয়েছিল শিবির নেতাদের হাত ধরে। বর্তমানে শিবিরের দায়িত্ব পালন করছে ভাড়াটে খুনিরা। এর নেপথ্যের নায়করা অদৃশ্য আওয়ামী শক্তি। গত দুবছরের পরিসংখ্যান তাই ইঙ্গিত করছে।

জানা যায়, চট্টগ্রামের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ নাসিম আহমেদ সোহেলকে হত্যা করা হয়। এ সংক্রান্ত মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, নাকি সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী উপস্থিত থাকবেন, তা নিয়ে সৃষ্ট কোন্দলের জের ধরে খুন হন নাসিম আহমেদ সোহেল।

২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসের দুই নম্বর গেট এলাকায় খুন হন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরী। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) ফরেনসিক বিভাগ থেকে এটি আত্মহত্যা বলে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। কিন্তু দিয়াজের পরিবার এতে আপত্তি দিলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) থেকে অপর একটি দল এসে তদন্ত করে। ওই দল এ ঘটনাকে হত্যাকা- হিসেবে প্রতিবেদন দেয়। এর পর আদালত দিয়াজ হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন। কিন্তু কেউ এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। দিয়াজ হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে আছেন চবির সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন এবং চবি ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু। নিহত দিয়াজ ইরফান চৌধুরী ও চবি ছাত্রলীগের সভাপতি টিপু দুজনই চট্টগ্রামের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।

২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দলীয় কোন্দলে খুন হন যুবলীগ নেতা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান বাদল। তিনিও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। মেহেদী হাসানের পরিবারের অভিযোগ, তার সাবেক দুই সহযোগী শফিকুল ইসলাম শফি ও আবদুল কুদ্দুস এ হত্যাকা- ঘটিয়েছেন।

গত ১৮ এপ্রিল নগরীর আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিংপুল নির্মাণের বিরোধিতা করে মানববন্ধন করে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ। ওই ঘটনায় পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে। তখন লালখানবাজার এলাকায় একদল দুর্বৃত্তের হামলায় মোহাম্মদ শরীফ নামে এক যুবক খুন হন। ওই ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। 

অভিযোগ রয়েছে, ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা লালখানবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমের অনুসারী। মাসুম সিটি সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির দাবি, পুলিশের হামলার মাঝখানে একদল যুবক ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করেছিল আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের ওপর। তাদেরই এক অংশের হামলায় খুন হন শরীফ।