সাত কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে ঢাবি উপাচার্য
পরীক্ষার ফল প্রকাশসহ পাঁচ দফা দাবি নিয়ে রাজধানীর নীলক্ষেতে অবস্থানরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করেছেন ঢাবি উপাচার্য ড. মো. অধ্যাপক আকতারুজ্জামান। রোববার বেলা সোয়া ১২টার দিকে তিনি নীলক্ষেতে আসেন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, দুঃখ প্রকাশ করছি। তোমাদের ওপর যে দুর্ভোগ তা তোমাদের ওপর বর্তায় না, তা আমাদের ওপরও বর্তায়। আগামী নভেম্বরের মধ্যে রেজাল্ট দেয়া হবে। সম্ভব হলে নভেম্বরের আগেই।
তিনি বলেন, যখন ঢাবির ওপর দায়িত্ব পড়েছে তখন অনেক ব্যবস্থাপনা আমাদের ছিল না। আমি তখন দায়িত্বে ছিলাম না। আগেও টের পেয়েছি। এখন বেশি টের পাচ্ছি। আমাদের সক্ষমতা ছিল না। ঢাবি উপাচার্য বলেন, ঢাবির শিক্ষার্থী ৩০ হাজার, কিন্তু আমাদের অধীনস্ত ৭ কলেজের শিক্ষার্থী ৩ লাখ। মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, লোকবলের অভাব, সার্বিক ব্যবস্থাপনার অভাবে সে মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। তোমাদের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের জন্য যা যা করণীয় তা গ্রহণ করেছি। আমরা একটু সময় চেয়েছি।
তবে শিক্ষার্থীদের দাবি এ মাসেই রেজাল্ট দিতে হবে। আর কোনো প্রহসন নয়, আর কোনো তালবাহানা সহ্য করা হবে না। ভিসির বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে চলছে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের বিক্ষোভ শ্লোগান। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ভিসি স্যার আসায় আমরা খুশি কিন্তু রেজাল্ট না দেয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
এর আগে, পাঁচ দফা দাবিতে রোববার সকাল ৯টা থেকে নীলক্ষেতে রাস্তা অবরোধ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, ঢাবি প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় নীলক্ষেতে অবস্থান নিয়েছেন তারা। শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবি হলো- এক হাজার ২০০ ছাত্রের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার, চতুর্থ ও দ্বিতীয় বর্ষের ফল দ্রুত প্রকাশ, একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ, তৃতীয় বর্ষের রুটিন প্রকাশ ও অধিভুক্ত সাত কলেজের জন্য স্বতন্ত্র ওয়েবসাইট খোলা।
আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থী সুমন মিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন আন্দোলন ছাড়া কোনো পথ নেই, প্রয়োজনে আরও কঠোর আন্দোলন করব। ঢাকা কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জহির বলেন, শেষবর্ষের লিখিত পরীক্ষা গত ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হয়। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই সাত কলেজ ঢাবির অধিভুক্ত হয়। কিন্তু নয় মাস পার হলেও এখনো ফল প্রকাশ করা হয়নি।
তিনি বলেন, অন্য কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা আরও চার মাস আগে রেজাল্ট পেয়েছে। কিন্তু আমরা এখনো পায়নি। ফলে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছি না আমরা।
আব্দুর রহমান নামে তিতুমীর কলেজের আরেক শিক্ষার্থী জানান, ঢাবি বিশ্ববিদ্যালয় ঠিকই তাদের শিক্ষার্থীদের খাতাপত্র সময় অনুযায়ী দেখছে, রেজাল্টও দিচ্ছে। আমাদের বেলা কেন এমন আচরণ! আমাদের পরীক্ষার রুটিন বের হচ্ছে না, আবার বড় ভাইদের পরীক্ষা হলেও রেজাল্ট দিচ্ছে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
এ ব্যাপারে ডিএমপির রমনা বিভাগের ধানমন্ডি জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) আব্দুল্লাহ আল কাফি জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোনো ধরনের অপতৎপরতা যাতে না ঘটে সে জন্য আন্দোলন ঘিরে পুলিশ সতর্কাবস্থানে রয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার শাহবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে অনার্স চতুর্থ বর্ষের ২০১১-১২ সেশনের ফল প্রকাশসহ পাঁচদফা দাবিতে রোববার শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
তবে ওইদিনই ‘শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও ক্যাম্পাসের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার সূচি ঘোষণার দাবিতে চলতি বছরের জুলাই মাসে আন্দোলনে নামে। ২০ জুলাই বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের টিয়ার শেলের আঘাতে দুই চোখ হারান তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান।
উল্লেখ্য, ২০১১-২০১২ সেশনের অনার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষা গত ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা চলাকালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা হয়ে এই সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। যার কারণে ফল প্রকাশের দায়িত্ব পায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। কিন্তু পরীক্ষার নয় মাস পার হলেও এখনও ফল প্রকাশ করা হয়নি।