• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

মরণ ফাঁদ ‘ব্লু হোয়েল’, যেভাবে বাঁচাবেন আপনার সন্তানকে

প্রকাশ:  ০৭ অক্টোবর ২০১৭, ১৯:৫৯
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক
প্রিন্ট

মৃত্যুর আগে নীল তিমিরা ডাঙ্গা ওঠে আত্মহত্যার জন্য; প্রচলিত এমন ধারণা থেকেই রাশিয়ার এক তরুণ নতুন একটি গেমস তৈরি করেন। যার নাম দেন ‘ব্লু হোয়েল’ বা নীল তিমি। ইন্টারনেটে 'মরণ নেশার' এ গেম খেলে ২০১৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সারা বিশ্বে ১৩০ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে রাশিয়ার পুলিশ। সাম্প্রতিক সময়ে এই গেমসটির  জনপ্রিয়তা বাড়ছে দক্ষিণ এশিয়ার কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে।

ভারতে এই গেম খেলে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর শোনা গেলেও বাংলাদেশে এমন ঘটনা শোনা গেলো এই প্রথম। শনিবার ঢাকার নিউ মার্কেট থানা এলাকার অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণা নামের ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরী এই গেম খেলেই আত্মহত্যা করেছেন। এমনটাই দাবি তার বাবা অ্যাডভোকেট সুব্রত বর্মনের।

অভিভাবকদের বাড়তি নজরদারির পাশাপাশি ইন্টারনেট গেইটওয়ে থেকে গেমটির লিঙ্ক মুছে ফেলার মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের এ মৃত্যু ফাঁদ থেকে রক্ষা করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

আত্মহত্যার আগে 'ব্লু  হোয়েল'র কিউরেটরের নির্দেশ মতো লিখে যাওয়া একটি চিরকুট পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। সুব্রত জানান, ওই চিঠিতে লেখা ছিল, ‘আমার আত্মহত্যার জন্য কেউ দায়ী নয়।’ এমনকি গেমসের নির্দেশনা মতো একটি হাসির চিহ্নও আঁকা ছিল।

এই গেম একজন কীভাবে আসক্ত হয়ে পড়েন সে বিষয়টি জানাতে গিয়ে মারণ ফাঁদ থেকে বেঁচে যাওয়া ভারতের আলেকজান্ডার নামের এক তরুণ বলেন, এটা কোনও অ্যাপ নয়। নয় কোনও গেমও। এটা জাস্ট একটা লিঙ্ক। আর সেটা চালান এক জন অ্যাডমিন। ওই গেম খেলতে যিনিই ঢোকেন, তাকে কয়েকটি টাস্ক দেন অ্যাডমিন। প্রত্যেক দিন সেই টাস্কগুলো শেষ করতে হয়। ওই গেম খেলতে ঢোকার পর কয়েকটা দিন কাটে মোটামুটি স্বাভাবিক ভাবেই। তখন অ্যাডমিন সকলের ব্যক্তিগত পরিচিতি ও ফটোগ্রাফ সংগ্রহ করতে শুরু করেন। তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন অ্যাডমিন।

তিনি আরো জানান, এরপর থেকে অ্যাডমিন বিভিন্ন নির্দেশনা দিতে শুরু করেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী খেলোয়াড়কে কবরস্থানে ঘুরে আসা থেকে শুরু করে নিজের হাত কাঁটতে হয়। ভয়ংকর সিনেমা দেখা, নিজেকে ক্ষত-বিক্ষত করতে করতে এক পর্যায়ে গিয়ে তাকে আত্মহত্যা করতে হয়।

গেমটির বিভিন্ন স্টেজ দেখতে গিয়ে দেখা যায়, ৪৯তম পর্বে গেইমারকে নির্দেশনা দেওয়া হয় সকাল চারটা ২০ মিনিটে ঘুম থেকে উঠতে, হরর ভিডিও দেখতে, অ্যাডমিনের পাঠানো গান শুনতে ও প্রতিদিন নিজের শরীরে একটা ক্ষত করতে। ৫০তম পর্বের নির্দেশনায় বলা হয়, উঁচু ভবনের ছাঁদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করতে।

গেমটির এক নির্মাতাকে আটক করেছিল রাশিয়ার পুলিশ। এ ধরনের মরণ গেম তৈরির কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে ফিলিপ বোডিকিন নামের মনোবিজ্ঞানের ওই শিক্ষার্থী বলেন, যারা মারা যেতে চায় তাদের আত্মহত্যার পথকে সহজ করে দিতেই তৈরি করা হয়েছে এ গেম।

গেমটির আসক্তদের মানসিকতার সঙ্গে নির্মাতার এমন বক্তব্যের মিল রয়েছে বলে মনে করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই গেমটি যারা তৈরি করেছেন তারা নিজেরই মানসিকভাবে অসুস্থ। তারা বেঁছে বেঁছে মানসিকভাবে অসুস্থ কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের টার্গেট করার মাধ্যমেই নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করেন। 

তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি হিপনোটাইস হতে না চায় তবে তাকে হিপনোটাইস করা যায় না। সুতরাং যে এই গেম দ্বারা প্রভাবিত হতে চায় বা যার জীবনের প্রতি ভালোবাসা কম সেই এ গেমের মাধ্যমে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হবে।

এ গেমের মাধ্যমে সন্তানকে মৃত্যুর পথ থেকে রক্ষা করতে হলে অভিভাবকদের নজরদারি আরও বাড়াতে হবে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সকল গেমের মধ্যেই দুটি দিক থাকে। একটি হচ্ছে অ্যাগ্রেসিভ ও অন্যটি অ্যাডিকশন। শিশুদের এসব বিজ্ঞান বর্হিভূত বিনোদনের দিকে ধাবিত হতে না দিয়ে তাদের সুস্থ ধারারা বিনোদন মাধ্যম দিতে হবে। আর কেউ যদি এই গেমে আসক্ত হয়ে পড়ে তবে তার আচরণে আগে থেকেই কিছু আঁচ করা সম্ভব হবে। এক দিনেই কোনো মানুষ আত্মহত্যাকে বেঁছে নিতে পারে না। তাই শিশুর আচরণে কোনো ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করলে সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতি নজরদারি বাড়িয়ে তাকে বিপথগামী হওয়ার পথ থেকে রক্ষা করতে হবে।

এই গেমসের প্রভাবে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটায় গেমটি বন্ধ করতে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত সরকার। গুগল, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, মাইক্রোসফট এবং ইয়াহুর মতো জনপ্রিয় সোশাল সাইটগুলি থেকে ব্লু  হোয়েল চ্যালেঞ্জ গেমটির লিঙ্ক মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে ভারতের তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।

দেশের কিশোর-কিশোরীদের রক্ষা করতে বাংলাদেশ সরকারকেও এমন পদক্ষেপই নিতে হবে বলে মনে করেন তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ রেজা সেলিম। 

তিনি বলেন, সরকারকে প্রথমে এই গেমসের ওয়েব লিঙ্কটি বন্ধ করে দিতে হবে। অভিভাবকদের সচেতনতায় সরকারকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্যদিকে অভিভাবকদের উচিত হবে তার সন্তান প্রযুক্তি কিভাবে ব্যবহার করছে সেদিকে লক্ষ্য রাখা। সে যাতে কোনোভাবেই এ ধরনের খারাপ কিছুতে যুক্ত হতে না পারে সেজন্য প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতনতা জরুরি।

গেমটি ইন্টারনেট থেকে মুছে ফেলতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্যোগ নিতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

সর্বাধিক পঠিত