মাগুরায় জমজমাট ঐতিহ্যবাহী কাত্যায়নী উৎসব
মাগুরায় ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী কাত্যায়নী উৎসব। এ উৎসব ঘিরে মাগুরা শহর বর্ণিল সাজে সেজেছে। বৃহস্পতিবার ষষ্ঠিপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এই উৎসব শেষ হবে সোমবার (১১ নভেম্বর) বিজয়া দশমীর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে আরম্ভর পূর্ণ এই কাত্যায়নী উৎসব। এ উৎসব ঘিরে প্রতিবছর লাখো মানুষের ঢল নামে মাগুরায়। দেশের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশের ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয় পুরো শহর।
জানা যায়, দুর্গা পূজার ঠিক একমাস পর দুর্গা প্রতিমার আদলেই প্রতিমা তৈরি করে প্রতিবছর কাত্যায়নী পূজা পালন করা হয়। মূলত, দুর্গা পূজা বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলেও মাগুরায় এক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম। মাগুরায় কাত্যায়নী পূজাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পালন করে আসছেন এ অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। এ উপলক্ষে রাতভর লাখো মানুষের ঢল নামে মাগুরায়।
শহরের নিজনান্দুয়ালী নিতাই গৌর গোপাল সেবাশ্রম, নতুন বাজার সাহাপাড়া ছানাবাবুর বটতলা, জামরুলতলা পূজা মন্ডপ, নতুন বাজার স্মৃতিসংঘসহ প্রতিটি পূজামন্ডপকে ঘিরে তৈরি হয়েছে দৃষ্টিনন্দন গেট, প্যান্ডেল ও তোরণ। আধুনিক আলোকসজ্জা হয়েছে পূজামন্ডপগুলো। মেলা বসেছে শহরের ছানা বাবুর বটতলায়।
মাগুরা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্র জানিয়েছে, এ বছর মাগুরা জেলায় মোট ৮১টি মণ্ডপে কাত্যায়নী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শহরের প্রতিটি কাত্যায়নী মণ্ডপকে সাজানো হয়েছে আকর্ষণীয় সাজে। মণ্ডপ প্রাঙ্গণের সামনে থাকছে দৃষ্টিনন্দন তোরণ ও আলোকসজ্জা। তৈরি হয়েছে বিশাল বিশাল প্রবেশ দ্বার। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে প্রতিটি প্যান্ডেলে আলোকসজ্জা চলে রাতভর। এ পূজাকে ঘিরে প্রতিটি মণ্ডপ এলাকায় বসেছে মেলা। গ্রামের মন্দিরগুলোও পিছিয়ে নেই। পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসবকে ঘিরে নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার, স্বেচ্ছাসেবকসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় ৭০/৭৫ বছর আগে শহরে পারনান্দুয়ালী এলাকার সতীশ মাঝি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম এ পূজার উৎসব শুরু করেন। গোষ্ঠীগত মানুষের সুবিধার্থে তিনি দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা সংক্ষিপ্ত করে প্রথম এককভাবে তার এলাকায় ধুমধামে কাত্যায়নী পূজা করেন।
যা বর্তমানে ধুমধাম করে উদযাপিত হয়। অন্যদিকে ধর্মীয় শাস্ত্রমতে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের আগে গোপীবালাবৃন্দ যুমনা তীরে শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর, বন্ধু, স্বামী, পুত্র হিসেবে আরাধনা করত। তাদের এক মাসব্যাপী আরাধনা সে সময় কাত্যায়নী পূজা হিসেবে চিহ্নিত হতো। যার সময়কাল ছিল কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস। প্রতিমা স্থাপনের ক্ষেত্রে দুর্গাপূজার আদলেই সবকিছু নির্মিত হতো। তবে অতিরিক্ত হিসেবে দেবীদুর্গার কোলে শ্রীকৃষ্ণের একটি মূর্তি স্থাপন করা হতো। যার অর্থ দেবীদুর্গার আরাধনার মাধ্যমে কৃষ্ণের সান্নিধ্য পাওয়া। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে আরম্ভর পূর্ণ মাগুরার ঐতিহ্যবাহী কাত্যায়নী উৎসব।