মুস্তাফিজের বিদায়ী ম্যাচে হারল চেন্নাই
চেন্নাইয়ের হয়ে চলতি আইপিএলে শেষবারের মতো মাঠে নেমেছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। ব্যাটে-বলে দলীয় ভরাডুবির দিনে দলের সবচেয়ে সফল বোলারের বিদায়টা রাঙাতে পারল না হলুদ শিবির। নিজেদের ঘরের মাঠে পাঞ্জাব কিংসের কাছে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে গেছে রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের দল। সেই সঙ্গে প্লে-অফের দৌড়েও খানিকটা পিছিয়ে পড়ল চেন্নাই।
এবারের আইপিএলে যৌথভাবে এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক মুস্তাফিজ নিজের শেষ ম্যাচে উইকেট না পেলেও ছাপ রেখে গেছেন ঠিকই। এক মেইডেনসহ চার ওভারে খরচ করেছেন মোটে ২২ রান। চেন্নাইয়ের হয়ে অভিষেক আসরটাও স্মরণীয় করে রাখলেন ফিজ। এবারের আসরে হলুদ জার্সিতে ৮ ম্যাচে ১৪ উইকেট শিকার করেছেন।
বুধবার চেন্নাইয়ের এম চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি স্বাগতিক ব্যাটাররা। পুরোটা সময়ই বলতে গেলে রাজত্ব করেছেন পাঞ্জাবের বোলাররা। দুই স্পিনার রাহুল চাহার এবং হারপ্রীত ব্রারের দুর্দান্ত বোলিংয়ের কল্যাণে চেন্নাই ম্যাচে খেই হারিয়েছে বারবার। পুরো ইনিংসে ছক্কা ছিল মোটে ৪টি। আর চারের মার দেখা গিয়েছে ১৩ বার। অধিনায়ক গায়কোয়াড়ের ৬২ রানের পর ৩০ পেরোতে পারেননি আর কেউই। চেন্নাই শেষ পর্যন্ত থামে ১৬২ রানে।
অল্প পুঁজির পর মাথিশা পাথিরানা ও তুষার দেশপান্ডের মতো দলের সেরা দুই পেসারবিহীন চেন্নাই বোলিংয়ে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। মুস্তাফিজ প্রত্যাশামতো রান আটকালেও ব্রেকথ্রু এনে দিতে পারেননি। বিপরীতে জনি বেয়ারেস্টো ও রাইলো রুশোরা ভালো শুরু এনে দিয়েছিলেন প্রতিপক্ষকে। শেষ দিকে শশাঙ্ক-স্যাম কারেনের ব্যাটে ১৭ দশমিক ৫ ওভারেই ম্যাচ জিতে নেয় পাঞ্জাব।
এর আগে পাঞ্জাবের বিপক্ষে আগে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের শুরুটা যদিও নেহাত মন্দ করেননি দুই ওপেনার আজিঙ্কা রাহানে এবং রুতুরাজ গায়কোয়াড়। দুজনে মিলে এবারের আইপিএল চেন্নাইয়ের হয়ে সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটি গড়েছেন। ৮ ওভার ১ বল পর্যন্ত দুজনেই ছিলেন দারুণ ছন্দে। স্কোরবোর্ডে ওঠে ৬৪ রান।
এরপরেই পথ হারায় সিএসকে। হারপ্রীত ব্রারের বলে প্রথমে রাহানে ফিরেছেন রাইলি রুশোর হাতে ক্যাচ দিয়ে। এদিন ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়েছিলেন দুবে। সেটা কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। প্রথম বলেই বিগ শট খেলতে গিয়ে বল মিস করেছেন। হয়েছেন এলবিডব্লিউ। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি।
এরপরেই প্রমোশন পেয়ে এসেছিলেন জাদেজা। টিকলেন চার বল, করেছেন ২ রান। রাহুল চাহারের বলে লেগ বিফোর তিনি। সামির রিজভীকে আনা হয়েছিল ইম্প্যাক্ট সাব হিসেবে। সেটা প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দিয়েছিল বটে।
সামির রিজভীকে নিয়ে রুতুরাজ গায়কোয়াড় জুটি গড়লেন ৩৭ রানের। তবে দুজনেই খেলেছেন ধীরগতির ইনিংস। সামির খেলেছেন ২৩ বলে ২১ রানের ছোট এক ইনিংস। তবে অপরপ্রান্তে রুতুরাজ ঠিকই নিজের কাজ করে গিয়েছেন। রানের চাকা রেখেছেন সচল। যদিও সেটা ঠিক টি-টোয়েন্টির জন্য আদর্শ না। তবে কার্যকরী ইনিংসে এদিন ঠিকই সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের অরেঞ্জ ক্যাপ নিজের করে নিয়েছেন তিনি।
দলীয় ১০৭ রানে ফেরেন সামির রিজভি। কাগিসো রাবাদার বলে হার্শাল প্যাটেলের দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত হন তিনি। গায়কোয়াড় ফিফটি পেয়েছেন এরপরেই। যদিও এরপরেই বিগশট খেলতে গিয়ে হয়েছেন আউট। আর্শদীপ সিংয়ের বলটা ব্যাটে লাগলেও স্ট্যাম্পে আঘাত করে। অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড় ফেরেন ৬২ রান করে।
মঈন আলী আশা জাগানো শুরু করে ফিরেছেন ৯ বলে ১৫ করে। প্রত্যাশা ছিল বড় কিছুর। কিন্তু আজ তা আর হয়নি। আর্শদীপ সিংয়ের দুর্দান্ত শেষ ওভার থেকে বেশিকিছু আসেনি। বরং ইনিংসের শেষ বলে আউট হয়ে মৌসুমে প্রথমবার আউট হয়েছেন ধোনি।
জবাবে ১৬৩ রানের হাতের নাগালে থাকা লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে বিশেষ অসুবিধায় পড়তে হয়নি পাঞ্জাবকে। পাওয়ার প্লেতে প্রভসিমরন সিং আউট হয়ে গেলেও বেয়ারস্টো ইনিংসের হাল ধরেন। রাইলি রুশোর সঙ্গে দুরন্ত পার্টনারশিপ গড়ে ম্যাচের রাশ ফের পাঞ্জাবের দিকে ফেরান ইংলিশ এই ওপেনার ব্যাটার। শেষদিকে মুস্তাফিজরা চেষ্টা করলেও জয় অধরাই থেকে গেল ইয়েলো আর্মির।
ঘরের মাঠ চিপকে পাঞ্জাব কিংসের কাছে হেরে প্লে অফের দৌড়ে অন্য দলগুলোর থেকে বেশ খানিকটা পিছিয়ে পড়ল ইয়েলো আর্মি। অন্যদিকে টানা দুই ম্যাচে জয় পেয়ে প্লে অফে খেলার আশা এখনও বাঁচিয়ে রাখল পাঞ্জাব।