হঠাৎ কেন ক্রিকেট অপস ছাড়তে চান আকরাম খান?
জাতীয় দল নিউজিল্যান্ডে। ১০ দিন পর শুরু প্রথম টেস্ট। ১৪ দিন পর আজই প্রথম পুরো দল একসঙ্গে খোলা আকাশে প্র্যাকটিস করেছে। তা ছাপিয়ে এ মুহূর্তে ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ হলো আকরাম খানের ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি প্রধান পদ থেকে সরে দাঁড়ানো, যা নিয়ে গুঞ্জনের শেষ নেই।
গতকাল তার স্ত্রী সাবিনা খান যা বলেছিলেন, আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আকরাম খান নিজের মুখেও সেই কথাই জানিয়েছেন। মানে পারিবারিক কারণেই তার সরে দাঁড়ানো এবং পরিবারকে আরও বেশি সময় দিতেই ক্রিকেট অপস প্রধান পদে না থাকার সিদ্ধান্ত।
প্রশ্ন উঠেছে, এটাই কী আকরামের ক্রিকেট অপস চেয়ারম্যান পদ থেকে সড়ে দাঁড়ানোর মূল কারণ? নাকি এর পেছনেও আরও কারণ আছে?
এনিয়ে ক্রিকেট পাড়ায় দু’ধরনের কথা শোনা যাচ্ছে। এক পক্ষের দাবি, ‘কিছু অস্বস্তি, কর্মক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতায় কমতি এবং কারও কারও উক্তি, নেতিবাচক সমালোচনা ঠিক মন থেকে মেনে নিতে পারেননি আকরাম।’
যেমন- জাতীয় দলের পর ‘এ’ দলের বিকল্প হিসেবে প্রস্তাবিত বিসিবি টাইগার গঠিত না হওয়ার দায় বর্তেছে তার ওপর। এমনও বলা হয়েছে, আকরাম খান আর খালেদ মাহমুদের দ্বন্দ্বে ‘বিসিবি টাইগার’ গঠিত হয়নি। সরাসরি বললে, আকরাম তা করতে দেননি। এবং আকরাম খান সে অভিযোগ মন থেকে মানতে পারেননি।
এই দায়টা তার একার নয়। অথচ তার ওপর অভিযোগের তীর সবচেয়ে বেশি। সেটা তার মর্মপীড়ার কারণ। এছাড়া ভেতরের খবর জাতীয় দলে, টিম ডিরেক্টর পদ চালু করা নিয়েও আকরামের আছে চাপা অসন্তোষ। তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, নানা কারণেই আকরামের মনে হয়েছে বিষয়টি সাংঘর্ষিক।
ভাবটা এমন, ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান থাকার পরও টিম ডিরেক্টর পদ প্রবর্তনের দরকার কী? তাহলে আর ক্রিকেট অপসের চেয়ারম্যান রেখে লাভ কী? তারও দায়িত্ব জাতীয় দল পরিচালনা, কোচ, ক্রিকেটারদের দেখভাল করা। পাশাপাশি সবার পারফরম্যান্স খুঁটিয়ে দেখা। তথা কোচ, ক্রিকেটারদের পাখির চোখে পরখ করা। সেখানে আবার একজনকে টিম ডিরেক্টর করার অর্থ, সেই দায়িত্বে ভাগ বসানো।
অর্থাৎ আকরামের মনে হয়েছে এতে করে তার ক্ষমতা কমিয়ে ফেলা হয়েছে, যা তার মনঃপূত হয়নি এবং সেই সাথে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টিম লিডারের তকমা নিয়ে আরব আমিরাত যাওয়া এবং তার ভূমিকা নিয়ে যে সব কথাবার্তা হয়েছে, নানা তীর্যক সমালোচনার তীর ছুড়ে দেয়া হয়েছে। তাও মন থেকে গ্রহণ করতে পারেননি আকরাম।
প্রসঙ্গত অভিযোগ আছে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলনেতা হয়ে আরব আমিরাত গিয়ে ভিন্ন হোটেলে ছিলেন আকরাম। তার জাতীয় দলের বাইরে অবস্থান এবং সেভাবে দলের খোঁজখবর না রাখা নিয়েও অনেক কথাবার্তা হয়েছে।
আকরাম খানের বয়সে ছোট, জাতীয় দলের একাধিক সাবেক অধিনায়কও প্রকাশ্যে সেই টিম লিডারের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। সেটাও আকরামের ভালো লাগেনি, যা খানিক বিব্রতকর অবস্থা সৃষ্টির পাশাপাশি কিছুটা অস্বস্তিরও কারণ। তাই স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ানোর চিন্তা আকরামের।
আবার অন্যপক্ষের দাবি, ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তার পারফরম্যান্স ঠিক প্রত্যাশিত মানের হয়নি। এ কারণেই কয়েক বছর আগে আকরাম খানকে বাদ দিয়ে জাতীয় দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়কে ক্রিকেট অপস প্রধান করা হয়েছিল।
পরে আবার আকরামকে স্বপদে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। শোনা যায়, সেটাও বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনের একার ইচ্ছায় নয়। জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে আকরামের ভূমিকা-অবদান বিবেচনা এবং দুর্জয়ের চেয়ে তিনি বয়সে বড়- এসব বিবেচনায় আকরাম নিজেকে স্বপদে ফেরানোর চেষ্টা করেন এবং সফল হন।
জানা গেছে, তারপরও আকরাম খানের পারফরম্যান্সে তেমন সন্তুষ্টি ছিল না বোর্ডে। তার নেতৃত্বে আইসিসি ট্রফি (১৯৯৭ সালে) জিতে বিশ্ব ক্রিকেটে পা রেখেছিল বাংলাদেশ। আকরাম খান পরের প্রজন্মের কাছে আদর্শ। তিনিই পারবেন, পুরো দলকে এক সুতোয় গেঁথে রাখতে।
সে চিন্তায় তার কাছ থেকে বোর্ডের প্রত্যাশা ছিল আরও বেশি। কিন্তু ক্রিকেটারদের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন এবং জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে সখ্য তৈরি ও তাদের দেখভালের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে না পারার দায়ও আছে তার।
বিভিন্ন সময় জাতীয় দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, ক্রিকেটারদের ছুটি, ইনজুরিজনিত অনুপস্থিতি এবং সর্বোপরি ক্রিকেটার ও কোচদের যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখার কাজেও তিনি সেভাবে দক্ষতার ছাপ রাখতে পারেননি।
এর পাশাপাশি আরও একটি খবর আছে ক্রিকেট পাড়ায়। তাহলো বিসিবির নতুন পরিচালক পর্ষদের সম্ভাব্য নতুন ও খসড়া স্ট্যান্ডিং কমিটিতে আকরাম খানের ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি প্রধানের পদও নাকি নিশ্চিত ছিল না। সেখানে অন্য কাউকে বসানোর চিন্তা ভাবনা চলছে।
আকরাম খানকে টুর্নামেন্ট কমিটি প্রধান করে বিসিবির এক তরুণ পরিচালক, কাজী ইনাম আহমেদকে ক্রিকেট অপসের প্রধান করার গুঞ্জন আছে। এটাও আকরাম খান বিবেচনায় এনেছেন এবং মূলত এসব কারণেই তার স্বেচ্ছায় ক্রিকেট অপস প্রধান থেকে সড়ে দাঁড়ানো।