• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

অপ্রতিরোধ্য চট্টগ্রামকে উড়িয়ে ফাইনালে খুলনা

প্রকাশ:  ১৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

বড় ম্যাচে জ্বলে উঠবেন বড় খেলোয়াড়- ক্রিকেটের এই অমোঘ সত্যটি আবারও প্রমাণ করলেন সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মাশরাফি বিন মর্তুজারা। ব্যাট হাতে জহুরুল ইসলাম অমির ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ের পর ঝড় তুলেছিলেন সাকিব-রিয়াদরা। যার সুবাদে খুলনা পায় ২১০ রানের বিশাল সংগ্রহ।

পরে বল হাতে বুড়ো হাড়ের ভেলকি দেখালেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। বয়সের কাঁটা ৩৭ পেরুনোর পর নিলেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফার, ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে দলকে এনে দিলেন ৪৭ রানের বড় জয়। চট্টগ্রাম অলআউট হয়েছে ১৬৩ রানে। এ জয়ের সুবাদে সোজা ফাইনালে চলে গেছে খুলনা আর দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ঢাকার মুখোমুখি হবে চট্টগ্রাম।

খুলনার করা ২১০ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাশরাফি বিন মর্তুজার প্রথম ওভারে ঝড় তোলেন লিটন দাস। দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি দিয়ে শুরু, চতুর্থ বলে হাঁকান ছক্কা। কিন্তু পঞ্চম বলে নেয়া সিঙ্গেলটিই যেন বিপদ ডেকে আনে চট্টগ্রামের জন্য। মাশরাফির শেষ বলে ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টায় ডিপ মিড উইকেটে দাঁড়ানো শামীম পাটোয়ারির হাতে ধরা পড়েন সৌম্য সরকার, ফেরেন গোল্ডেন ডাক নিয়ে।

আলআমিন হোসেনের পরের ওভারে একটি চার ও ছয়ের মারে ১২ রান তুলে নেন লিটন। কিন্তু এমন ঝড়ো শুরুটা ধরে রাখতে পারেননি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ইনিংসের চতুর্থ ও মাশরাফির করা দ্বিতীয় ওভারে বাউন্সের তারতম্য বুঝতে না পেরে বোল্ড হন ১৩ বলে ২৪ রান করা লিটন। মাঝে এক ওভার করে মাত্র ১ রান খরচ করেন সাকিব আল হাসান।

তবে সাকিবের পরের ওভারে আর ধরে খেলেননি চট্টগ্রাম অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন, প্রথম দুই বলেই হাঁকান জোড়া ছক্কা। সেই ওভারে আসে ১৫ রান। দুই ওপেনারের ব্যর্থতার দিনে বিশ্বজয়ী অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদুল হাসান জয়কে নিয়ে এগুতে থাকেন মিঠুন। দুজনের তৃতীয় উইকেট জুটিতে আসে ৪৭ বলে ৭৩ রান। জয়-মিঠুনের জুটিতে দলীয় ১০০ করে ফেলে চট্টগ্রাম।

দ্বিতীয় স্পেলে বোলিংয়ে এসেই এ জুটি ভাঙেন মাশরাফি, দ্বাদশ ওভারের প্রথম বলে ২৭ বলে ৩১ রান করা মাহমুদুল জয়ের ক্যাচ নেন ইমরুল কায়েস। বেশিদূর যেতে পারেননি মিঠুনও। তিনি সাজঘরে ফেরেন ১৪তম ওভারে, আউট হওয়ার আগে করেন ৩৫ বলে ৫৩ রান। তার ইনিংসটি সাজানো ছিল ৩টি করে চার ও ছয়ের মার।

মিঠুন ফিরে যাওয়ার পরেই মূলত লেখা হয়ে যায় ম্যাচের ভাগ্য। এরপর অনেকটা চমক হিসেবেই আসে মাশরাফির ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার। মিঠুন ও জয়ের জুটি ভাঙার পর মাশরাফিকে বোলিং থেকে সরান খুলনার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আবার আনেন ১৮তম ওভারে। সেই ওভারের প্রথম তিন বলে ৮ রান দেন মাশরাফি। কিন্তু পরের তিন বলে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ান, ফেরান শামসুর রহমান (১০ বলে ১৮) ও মোস্তাফিজুর রহমানকে (২ বলে ০)।

সবমিলিয়ে নিজের ৪ ওভারে ৩৫ রান খরচায় ৫টি উইকেট নেন মাশরাফি। এটি তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগার। এর আগে সেরা বোলিং ছিল বিপিএলে নেয়া ১১ রানে ৪ উইকেট। সেটি ছাপিয়ে আজ একাই ৫ উইকেট নেন মাশরাফি।

শুরুতে জোড়া উইকেটের পর মাঝে এসে জুটি ভাঙা, শেষে আবার লেজ মুড়ে দেয়া; যেন মাশরাফির কাছেই হার মানল চট্টগ্রামের ব্যাটিং লাইনআপ। এছাড়া ২ উইকেট নিয়েছেন হাসান মাহমুদ ও আরিফুল হক, ১টি উইকেট গেছে সাকিবের ঝুলিতে।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম দুই ওভার দেখেশুনে খেলেন খুলনার দুই ওপেনার জহুরুল ইসলাম অমি ও জাকির হাসান। তৃতীয় ওভার থেকে ঝড়ো ব্যাটিং শুরু করেন ফর্মে থাকা জহুরুল। নাহিদুল ইসলামের সেই ওভারে দুই চার ও এক ছয়ের মারে আসে ১৭ রান। বাঁহাতি পেসার শরীফুলের পরের ওভারে ফের ছয় ও চার মারেন জহুরুল। এ দুই ওভার থেকেই আসে ৩১ রান।

পাওয়ার প্লে শেষে খুলনার সংগ্রহ দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৪৬ রান। একপ্রান্তে জহুরুল যেখানে ছিলেন আক্রমণাত্মক, সেখানে জাকির খেলেছেন রয়েসয়ে। দুজনের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে রানআউটে। ইনিংসের দশম ওভারের দ্বিতীয় বলে খুব সহজেই দুই রান নিয়েছিলেন জাকির ও জহুরুল কিন্তু তৃতীয় রান নিতে গিয়েই বাঁধে বিপত্তি। মাহমুদুল হাসান জয়ের থ্রোয়ে সাজঘরের পথ ধরতে হয় ২২ বলে ১৬ রান করা জাকিরকে।

উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৭১ রান। তিন নম্বরে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন ইমরুল কায়েস। প্রথম বলেই হাঁকান বাউন্ডারি, এক বল ডট দিয়ে পরের দুই বলে হাঁকান ছয় ও চার। অন্যদিকে জাকির আউট হওয়ার আগেই টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে নিজের অষ্টম ও চলতি টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় ফিফটি পূরণ করেন জহুরুল। এগুতে থাকেন সেঞ্চুরির দিকে, কিন্তু তা পারেননি শেষপর্যন্ত।

জহুরুল থেমে যান ৮০ রান করে। মোসাদ্দেক সৈকতের বলে স্কুপ করতে সৈকত আলির হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ৫১ বলে ৮০ রান করা জহুরুল। ঝড়ো শুরু করা ইমরুল থামেন ১২ বলে ২৫ রান করে। তার এই ছোট্ট ঝড়ে ছিল ৩ চার ও ১ ছয়ের মার। ইনিংসের ১৫ ওভার শেষে খুলনার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ১৩৩ রান।

টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের গড়ে দেয়া এমন ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে চট্টগ্রামের বোলারদের ওপর সাইক্লোন বইয়ে দেন খুলনার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। উইকেটে থাকেন মাত্র ১০ বল, যেখানে মাহমুদউল্লাহ মোকাবিলা করেন ৯টি। এই ৯ বলের মধ্যে শরীফুলকে টানা তিন বলে তিন ছক্কাসহ মোট ২ চার ও ৩ ছয়ের মারে ৩০ রান করেন মাহমুদউল্লাহ।

দলীয় ১৬৩ রানে অধিনায়ক ফিরে গেলেও শেষের ঝড়টা তোলেন সাকিব আল হাসান ও আরিফুল হক। শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে ৯ বলে ১৫ রান করেন আরিফুল। একই ওভারে সরাসরি বোল্ড হন সাকিবও। তবে পুরো টুর্নামেন্টে রান না পেলেও, গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেই জ্বলে ওঠেন সাকিব। মোস্তাফিজের বলে আউট হওয়ার আগে ২টি করে চার-ছক্কার মারে ১৫ বলে ২৮ রান করেন তিনি।

শেষ ওভারটি পুরোটা করতে পারেননি মোস্তাফিজ। দুইটি বিমার করায় ৪ বল পর বোলিং থেকে সরে যেতে হয় থেকে। এ ৪ বলে খুলনা পায় ১০ রান। শেষ দুইটি বল করেন সৌম্য সরকার। উইকেটে নেমে প্রথম বলেই ছক্কা মেরে দেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, তবে ডট হয় শেষ বলটি। খুলনার ইনিংস থামে ৭ উইকেটে ২১০ রানে। টুর্নামেন্টের তৃতীয়বারের মতো ২০০ রানের দলীয় সংগ্রহ এটি।

বল হাতে দেদারসে রান বিলিয়েছেন চট্টগ্রামের সবাই। শুধুমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, ৪ ওভারে ২৭ রান খরচায় নেন ১টি উইকেট। এছাড়া সঞ্জিত সাহা ৪ ওভারে ৫০, শরীফুল ৪ ওভারে ৪৭ ও মোস্তাফিজের ৩.৪ ওভারে ৩১ রান নিয়ে নেয় খুলনা।

সর্বাধিক পঠিত