আজ সাঁতারু অরুণ নন্দীর বিশ্ব রেকর্ড গড়ার অবিস্মরণীয় দিন
আজ ১২ অক্টোবর বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের ওই উত্তাল সময়ে দেশের বীর সংগ্রামী জনতা যখন লড়ছে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তখনই একজন সাঁতারু অরুণ কুমার নন্দী অস্ত্র হাতে নয়, জলের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে অবিরাম সাঁতার কেটে গড়েছিলেন বিশ্ব রেকর্ড। সারা বিশ্বকে কাঁপিয়ে তুলেছিলেন তিনি। তাঁর এ অনন্য রেকর্ড অনুপ্রেরণার উৎস হয় বাঙালি মুক্তি সেনানীদের।
ভারতের কোলকাতার কলেজ স্কোয়ার ট্যাঙ্কে অবিরাম ৯০ ঘণ্টা ৫ মিনিট সাঁতার কাটেন অরুণ নন্দী এবং ভেঙ্গে দেন ৩২ বছরের পুরানো রেকর্ড। তার এ সাফল্যগাঁথার সংবাদ ইথারে পৌঁছে গিয়েছিলো সারা বিশ্বে। বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকাসহ বেতার মাধ্যমগুলো ধারাবাহিক প্রতিবেদনে অরুণ নন্দীর ভূয়সী প্রশংসা করেন। অরুণ নন্দী ১৯৭১ সালের ৮ অক্টোবর সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে পানিতে নামেন এবং ডাঙ্গায় উঠেন ১১ অক্টোবর দিবাগত রাত ২টা ৩৫ মিনিটে।
১৯৪১ সালে চাঁদপুরে জন্ম নেয়া অরুণ নন্দীর জলের সাথে সেই ছোটবেলা থেকেই গড়ে ওঠে সখ্যতা। বাড়ির পাশে ডাকাতিয়া নদীতে কাটাতেন দিনের বেশির ভাগ সময়। ১৯৭১ সালে বাঙালি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ বৃদ্ধি, মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়তেই এক দুঃসাধ্য সাধনে নেমেছিলেন অরুণ নন্দী। এই বীর ক্রীড়াবিদ ১৯৯৬ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৭৪ সালে ১১০ কিলোমিটার সাঁতার কেটে এশীয় রেকর্ড সৃষ্টি করেন। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্তির পর অরুণ নন্দীকে ১৯৯৮ সালে চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এছাড়া চাঁদপুরের সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান থেকেও তাঁর সাফলের জন্যে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। অরুণ নন্দীর নামে তাঁরই জীবদ্দশায় চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামস্থ সুইমিং পুলটির নামকরণ করা হয় অরুণ নন্দী সুইমিং পুল। গত ২০০৮ সালের ১৬ নভেম্বর ভারতের কোলকাতায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
প্রয়াত সাঁতারু অরুণ নন্দীর জীবদ্দশায় ব্যক্ত শেষ ইচ্ছানুযায়ী বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শাহীনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় তাঁর মরদেহ ১৭ নভেম্বর রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকায় এসে পৌঁছে এবং ওই সময় বাংলাদেশের সাঁতার সংগঠক, প্রশিক্ষক এবং ছোট-বড় সাঁতারুরা শ্রদ্ধা জানান। পরদিন ১৮ নভেম্বর গাড়ি বহরযোগে সাঁতারু অরুণ নন্দীর জন্মস্থান ও শৈশব বিজড়িত স্থানে রাষ্ট্রীয় সমান শেষে চাঁদপুরের ইচলী মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। হাজার হাজার শোকার্ত মানুষ শবযাত্রায় অংশ নেয়।