• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

জীবনের সঙ্গে বদলানোর দাবি পারফরম্যান্সও

প্রকাশ:  ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ১৭:২৪ | আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ১৭:৩১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

ক্রীড়া প্রতিবেদক : লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের সঙ্গে তাঁর প্রথম পরিচয় ২০১৪-র ২৮ নভেম্বর। কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের বিপক্ষে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন আবাহনীর হয়ে। ওই আসরে খেলেছেন আরো চারটি ম্যাচ। ২৭ ডিসেম্বর খেলা এর শেষটিই এত দিন মুস্তাফিজুর রহমানের জন্য হয়ে থেকেছে সব শেষ ডিপিএল ম্যাচ।এর মাস চারেকের মধ্যেই পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে এই বাঁহাতি পেসারের আন্তর্জাতিক অভিষেক ২০১৫-র এপ্রিলে। দুই মাস পর দেশের মাটিতেই ভারতের বিপক্ষে অভিষেক ওয়ানডে সিরিজে হইচই ফেলে দেওয়া পারফরম্যান্সের পর আর পেছনে ফিরেও তাকাতে হয়নি তাঁকে। পারফরম্যান্সের জোয়ারের পর ভাটার টানও এসেছে তাঁর সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ারে। সেই সঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলেছে চোট সমস্যাও। কখনো জাতীয় দলের ব্যস্ততা, কখনো চোট সারাতে অস্ত্রোপচারের পর দীর্ঘ পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় থাকা কিংবা কখনো ভবিষ্যৎ ভাবনা থেকে তাঁর বিশ্রাম পাওয়া—এমন নানা কারণে ডিপিএলের মাঝের তিনটি আসরে আর খেলাই হয়নি মুস্তাফিজের।

এবার অবশ্য খেলার কথাই ছিল। বিশ্বকাপ সামনে রেখে নিউজিল্যান্ড সফর থেকে ফিরে নির্দিষ্ট সময় বিশ্রামে থাকার পর খেলতে পারবেন বলে জানানো হয়েছিল আগেই। তাই প্লেয়ার্স ড্রাফট থেকে ২৫ লাখ টাকার ‘এ প্লাস’ ক্যাটাগরি থেকে তাঁকে দলে ভিড়িয়েছিল শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে গত ১৫ মার্চ নূর মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় একটু আগেভাগেই দেশে ফেরার পর ৬ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্রামে থাকা মুস্তাফিজ গত পরশু শাইনপুকুরের হয়ে প্রথম অনুশীলনে নামেন। পরদিনই নেমে পড়েন ম্যাচ খেলতে।ডিপিএলে তাঁর সবশেষ ম্যাচ আর এই ম্যাচের মাঝখানে পেরিয়ে গেছে সোয়া চার বছর। এই ফেরাও তাঁর লিস্ট ‘এ’ অভিষেকের মতোই উজ্জ্বল। অভিষেকেই কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের বিপক্ষে ১০ ওভারে ৩২ রান খরচায় নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। এবার ডিপিএলে ফেরার ম্যাচেও গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে ৬.৫ ওভার বোলিং করে ১টি মেডেনসহ ২৩ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। যদিও এতে ঠিক ‘কাটার মাস্টার’-এর পারফরম্যান্স বোঝানো যাচ্ছে না। এত বছর পর ডিপিএলের ম্যাচ খেলতে নেমে প্রথম ওভারেই হেনেছিলেন জোড়া আঘাত। যদিও তাঁর দল শাইনপুকুর খুব বেশি রান করতে পারেনি। ৪৮ ওভারের সীমিত ম্যাচে ৯ উইকেট হারিয়ে তোলে ১৭৭ রান। এই রান তাড়ায় মুস্তাফিজের বোলিংয়ে গাজী গ্রুপের বিপর্যয় জাগিয়েছিল আশাও। দ্বিতীয় বলেই এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন গাজী গ্রুপের ওপেনার ওয়ালিউল করিমকে। প্রথম ওভারের শেষ বলে শিকার বানান ইমরুল কায়েসকেও। শামসুর রহমানকে নিয়ে বিপর্যয় সামলে নিতে থাকা অন্য ওপেনার মেহেদী হাসানকেও তুলে নেওয়া মুস্তাফিজ অবশ্য তাঁর দলকে জেতাতে পারেননি শেষ পর্যন্ত।

তা না পারুন, ‘দ্য ফিজ’-এর বোলিং অন্তত বিশ্বকাপ সামনে রেখে আশার আলো দেখাতে পারে। ডিপিএলের ম্যাচ খেলেই ম্যাচ প্রস্তুতি সেরে নিতে চান এই বাঁহাতি পেসার। সেই প্রস্তুতি যদি কালকের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখে, সে ক্ষেত্রে বিশ্ব আসরের আগে কিছুটা স্বস্তিতেও থাকতে পারেন বাংলাদেশ দল-সংশ্লিষ্টরা। কারণ এরই মধ্যে ডিপিএলে বিশ্বকাপের সম্ভাব্য দলের অনেকের পারফরম্যান্স নিয়ে উদ্বিগ্ন নির্বাচকরা। ফর্ম নিয়ে উৎকণ্ঠার মধ্যে মুস্তাফিজের বোলিং নিয়েও দুশ্চিন্তা কম ছিল না। কারণ এমন বিশেষ কিছু তো নিউজিল্যান্ডেও করে আসেননি।নেপিয়ারে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩৬ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন। ক্রাইস্টচার্চে ২ উইকেট পেলেও ৪২ রান দেওয়া মুস্তাফিজসহ অন্য বোলাররা কতটা কার্যকরী ছিলেন, সেটি তো কিউইদের ৮ উইকেটের সহজ জয়ই বুঝিয়ে দিতে যথেষ্ট। ডানেডিনে শেষ ম্যাচে করেছেন তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে খরুচে বোলিংও। এর আগে নিজের সর্বোচ্চ ব্যয় ৬৩ পেরিয়ে ওই ম্যাচে দিয়েছিলেন ৯৩ রান! সামনে বিশ্বকাপ বলে হ্যামিল্টনে সিরিজের প্রথম টেস্টে বিশ্রাম পেয়েছিলেন। কিন্তু তাতে নবীন পেস আক্রমণ নিয়ে হাবুডুবু খাওয়া বাংলাদেশ ওয়েলিংটনে পরের ম্যাচেই ফেরায় মুস্তাফিজকে। কিন্তু সেখানেও খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেননি।

একটি টেস্ট তবু বাকি ছিল। সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট বাতিল হয়ে যাওয়ায় সবার মেলে বাড়তি ছুটিও। সাতক্ষীরায় গিয়ে সেই ছুটিও আরো রঙিন করেছেন মুস্তাফিজ। পাল্টেছে তাঁর ‘রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস’ও। একা থেকে সংসারী হয়েছেন। সামনে যখন বিশ্বকাপ, তখন জরুরি হয়ে পড়েছে তাঁর ‘পারফরম্যান্স স্ট্যাটাস’ বদলানোও। সোয়া চার বছর পর ডিপিএলের ম্যাচ খেলতে নেমে এর শুরু হলো কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য সময়ের হাতেই তোলা থাকছে।কালের কণ্ঠ

সর্বাধিক পঠিত