এক বছর আগের রক্তাক্ত স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে তারা
আদালতের বারান্দায় ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন
ঠিক এক বছর পূর্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দলীয় কার্যালয়ে কর্মসূচি পালন করলেও একবছর পরে গতকাল রোববার (১০ জানুয়ারি) উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ আদালতের বারান্দাতেই দিবসটি পালন করলেন।
ওইদিন উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় অর্ধশত দলীয় নেতৃবৃন্দ আহত হলেও হামলাকারীরা উল্টো উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকারসহ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। জনৈক রাসেলের দায়ের করা মামলায় হাজিরার দিন ছিলো গতকাল রোববার বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের দিনই। ফলে আদালতের হাজিরা দিতে গিয়ে তারা বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসটি সেখানেই অর্থাৎ আদালতের বারান্দাতেই পালন করতে বাধ্য হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকার জানান, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও আজ আমাদের জাতির পিতার বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের দিনে মিথ্যা মামলায় আদালতের বারান্দায় কাটাতে হলো। সেদিন তারা জাতির পিতা, প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর, অন্তত অর্ধশত নেতা-কর্মীকে আহত এবং মোটরসাইকেল, কয়েকটি গাড়ি প্রকাশ্যে ভাংচুর করলেও উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। সেই মামলায় আজ আমরা হাজিরা দিতে এসেছি।
সাহেদ সরকার বলেন, ফলে দিবসটি উপলক্ষে আমরা আদালতের সামনে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্তম্ভের সামনে দাঁড়িয়ে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের দাবিতে প্রতীকী নীরবতা পালন ও স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন করেছি। এ সময় মামলার আসামী হওয়ায় আমি ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমান রানা, ইউপি চেয়ারম্যান এইচএম হারুন, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহবুব আলম সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক রবিউল হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক কাউছারুল আলম কামরুল, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব পাটওয়ারী, যুবলীগ নেতা রুহুল আমিন রুবেল, আবু সালেহ বাবু, পৌর কাউন্সিলর জামাল হোসেন, পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদ আহমেদ রাসেলসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি শুক্রবার সকালে ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। সকালে এরপর দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভার শুরুতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী বঙ্গবন্ধুর জীবন আদর্শ ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন। এরই মাঝে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সাবেক এমপি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া পৌনে ১১টার দিকে সভায় উপস্থিত হন। এর কিছুক্ষণ পর বেলা ১১টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ব্যানারে একটি মিছিল এসে আকস্মিকভাবেই আওয়ামী লীগের সভাস্থলে প্রবেশ করে হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ মিছিলের সামনে থাকলেও তারা বাধা দিয়ে ব্যর্থ হয়। হামলাকারীরা জঘন্য তা-ব চালায়। মুহূর্তের মধ্যে সে এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দলীয় কার্যালয়ে থাকা নেতা-কর্মীরা আত্মরক্ষার্থে এদিক-সেদিক ছোটাছুটির সময় মারধরের শিকার হয়। এ সময় হামলা ও ভাংচুরের ছবি তুলতে গিয়ে গাজী মমিন নামে এক সাংবাদিক হামলার শিকার হন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টার সময় এএসআই দিদার হোসেন, এএসআই মঞ্জুর আলম ও কনস্টেবল রাশেদ আহত হন। হামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান আহমেদ রিপন, যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মহিউদ্দিন ইরান, আবু সালেহ বাবু, আওয়ামী লীগ নেতা মিজান ভদ্র, মোস্তফা কামাল, নূর হোসেন, মোবাশ্বেরা বেগম, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ইলিয়াছ বেগ, সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমানসহ অন্তত অর্ধশত আহত হন। আহতের মধ্যে মিজান ভদ্র, মোস্তফা কামাল, নূর হোসেন, হৃদয়, রানা এবং দুই পুলিশ সদস্য ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেয়। অন্যরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসাগ্রহণ করে। হামলার সময় সাবেক এমপি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়াকে বহন করা বৈশাখী টেলিভিশনের একটি নোয়াহ গাড়ি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের পাটওয়ারী এবং ১২নং চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউপি চেয়ারম্যান হাসান আব্দুল হাইয়ের দুইটি প্রাইভেটকার এবং অন্তত ৩০/৩৫টি মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়।