রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিয়ে আরাকানে ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে: মাওলানা ইসহাক
খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেছেন, রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমারের পূর্ণ নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা সহকারে আরাকানে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদেরকে জোরপূর্বক মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া যাবে না। মানবিক বিপর্যয়ের শিকার রোহিঙ্গা সমস্যা একটি আন্তর্জাতিক বিষয়। তাই দ্বি-পাক্ষিক নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাথে নিয়েই রোহিঙ্গাদের সমস্যার সমাধান করতে হবে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে খেলাফত মজলিস আয়োজিত ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান ও গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে রক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ পাঠ করেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের।
সংগঠনের যুগ্ম-মহাসচিব শেখ গোলাম আসগর ও মুহাম্মদ মুনতাসিন আলীর সঞ্চালনায় আলোচনা করেন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুর রকিব, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা সৈয়দ মজিবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম. মুজাহিদুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম, সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, সাংবাদিক ইব্রাহীম রহমান, অধ্যাপক মাওলানা আজীজুল হক প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য দেন, সেমিনার বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হালিম, অধ্যাপক মোঃ আবদুল জলিল, অধ্যাপক কে এম আলম, মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন, আবদুল জব্বার, ছাত্র মজলিসের সেক্রেটারি জেনারেল খালেদ হোসেন, শ্রমিক মজলিস সভাপতি নূর হোসেন প্রমুখ।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে। রাখাইনের সমস্যা ছাড়াও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বড় ধরনের পরিকল্পনা করে রেখেছে শত্রুরা। রোহিঙ্গাদের তাদের বাসস্থান রাখাইনে স্বাধীনভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করতে হবে। সেইফ জোনের নামে কোনো ক্যাম্পে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া গ্রহনযোগ্য নয়। রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে নেয়া উচিত হবে না। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেখা গেছে কারা বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু। বাংলাদেশের কোন ছলনাময়ী ও প্রতারণার বন্ধুত্বের প্রয়োজন নেই।
নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির লোকেরা বাঙালী বলে মিয়ানমার যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তা দৃঢ়তার সাথে খণ্ডন করতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্যে পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। সরকার জাতীয় ঐক্যের উদ্যোগ না নিলে অন্যান্য সব দল মিলে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ অসহনীয়। রোহিঙ্গাদের উপর এবারের নির্যাতনের শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি আমলে নেননি। তখন সরকার বর্ডার সিল করা, পুশব্যাক, নৌকা ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। পরে জনগণ সোচ্চার হলে রোহিঙ্গাদের জন্যে বর্ডার খোলা হয়। যে কাজটি শুরুতে প্রধানমন্ত্রী করতে চাননি তার জন্যে আওয়ামী লীগ তাকে মানবতার জননী বলেতে চাচ্ছে, যা অত্যন্ত বিস্ময়কর। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নোবেলের জন্য লন্ডনে বসে আছেন অথচ রোহিঙ্গা নির্যাতরের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি নিন্দা প্রস্তাব পর্যন্ত পাশ করাতে পারলেন না। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্যে ভারতের ত্রাণ গরু মেরে জুতো দানের মতো।
দুদু আরো বলেন, একজন সুস্থ মানুষ প্রধান বিচারপতিকে কি ভয়ংকরভাবে আড়ালে পাঠিয়ে দেয়া হলো, সে কাহিনী মিডিয়ায় তেমন না এলেও সোস্যাল মিডিয়ায় কিছু এসেছে। এরকম একটি সরকারের কাছ থেকে আর্তমানবতার জন্যে সাহায্য আশা করা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
লিখিত প্রবন্ধে ড. আহমদ আবদুল কাদের রোহিঙ্গ সংকট নিরসনে ও সমস্যা সমাধানে ১৬ দফা সুপারিশ পেশ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়ে অন্যান্য নাগরিকদের মতো তাদের যাবতীয় নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করা ও গণহত্যাসহ যাবতীয় নির্যাতন নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে। রাখাইন রাজ্যের মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে পূর্বতন ‘ম্যায়ো ফ্রন্টিয়ার ডিস্ট্রিক’ এর আদলে একটি বিশেষ অঞ্চল গঠন করে সেখানে মুসলমানদের নিরাপদে ও সম্মানের সাথে যাবতীয় নাগরিক অধিকারসহ বসবাস করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। মিয়ানমার সরকার নিয়োগ করা আনান কমিশনের সুপারিশগুলো মিয়ানমারের সরকারকে শর্তহীন ও পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।