• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

করোনা নববর্ষ ১৪২৭

টুটুল মজুমদার

প্রকাশ:  ১৪ এপ্রিল ২০২০, ১১:৪৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

আজ পহেলা বৈশাখ ১৪২৭ নতুন বাংলা সনের শুরু। এ দিনটি ঘিরে বাঙালির অনেক আবেগ-অনুভূতি জড়িয়ে আছে। পৃথিবীজুড়ে নতুন এক সংক্রামক ভাইরাস এসেছে যার নাম করোনা ভাইরাস। এ ছোঁয়াচে সংক্রামকটি এবার কেড়ে নিয়েছে বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব পহেলা বৈশাখ। করোনা কি শুধু বাঙালির উৎসব-আবেগ কেড়ে নিয়েছে?-না, কেড়ে নিয়েছে অনেক কিছু। ছোট কর্মজীবী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী যারা সারাবছর ধরে অপেক্ষায় থাকেন গ্রামে গ্রামে মেলা বসবে, সেখানে গিয়ে তারা পণ্য নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসবেন, ঢাক বাজিয়ে ঢুলী বাজারে বাজারে ঘুরে নতুন বছরের আগমনী শব্দ শুনিয়ে সামান্য কিছু অর্থ নিয়ে ঘরে ফিরবেন, বাড়িতে তার ছোট্ট মেয়েটির জন্যে লাল চুড়ি নিয়ে যাবেন-এ রকম অসংখ্য মানুষ আছেন যারা এই উৎসবটি ঘিরেই বাঁচে। বিশেষ করে শিল্পীসমাজ যারা আমাদের ধর্মান্ধ সমাজের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে বাঙালির সমপ্রীতি সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন সেই মানুষগুলোর খবর কেউ কি রাখে?


করোনা ভাইরাসটি শুধুমাত্র মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েই থামবে না। সেই সাথে কেড়ে নিবে আরও অনেক কিছু। সমাজের অতি দরিদ্র, দরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত এই মানুষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে সবচেয়ে বেশি। এদের করোনা হলেও বিপদ, না হলেও বিপদ। বিপদ যেনো এদের পিছু ছাড়বে না। এ মানুগুলোর বিপদে ইতঃমধ্যে অনেকে এগিয়ে আসছেন, তবে তাদের বেশিরভাগই লোক দেখানো। এতে এদের সমস্যা খুব বেশি লাঘব হবে বলে মনে হয় না। এ মানুষগুলোকে এক সপ্তাহের খাবার বা এক মাসের খাবারসামগ্রী দিলেই এদের সমস্যা দূর হবে না। সরকারের উচিত এদের জন্যে মাসিক রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা, এদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং ঘরে থেকে এদের কীভাবে বিভিন্ন কাজে লাগানো যায় সেই উপায় বের করা।

করোনা ভাইরাসটি বৈশ্বিক মহামারী আকার ধারণ করেছে। যতোদিন পর্যন্ত ভ্যাকসিন তৈরি না হচ্ছে, আমাদের সতর্ক বা সাবধানতা অবলম্বন করা ছাড়া আর তেমন কিছু করার নেই। আমাদের সচেতন হতে হবে। আমরা বাঙালি সবসময় নিজেদের বীরের জাতি বলি। সময় এসেছে এটাকে শুধু মুখে নয় কাজেও করে দেখাতে হবে। আমরা নিজেরা যেমন ঘরে থাকব ঠিক এভাবে অন্য মানুষগুলো যেমন ঘরে থাকে, নিরাপদে থাকে সেই ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে। আপনি চাইলেও সবার ঘরে থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে একটা ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে, আপনি আপনার নিজ ঘর থেকে শুরু করুন। আপনি শুধুমাত্র আপনার পরিবারের দায়িত্ব নিন। পারলে আপনার দরিদ্র প্রতিবেশী, আত্মীয়দের খবর নিন। এভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র করে সবাই করলেই একসময় এ সংখ্যাটা অনেক বিশাল হয়ে যাবে। সব দায়িত্ব সরকারের উপর ছেড়ে দিলে হবে না। সমাজের যারা বিত্তবান আছেন তাদের এগিয়ে আসতে হবে। মানুষকে মানবিক হতে হবে। এ সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানবিক মানুষদের। যারা ইতঃমধ্যে মানুষের সেবায় এগিয়ে আসছেন, প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। যারা লোকদেখানোর জন্য ত্রাণ নিয়ে আসছেন তাদেরও ধন্যবাদ জানাই। হোকনা ছবি তোলার ত্রাণ। মানুষত কিছু পাচ্ছে।

বাংলা নতুন বছর ১৪২৭ সনটি কেমন হবে আমরা কেউ নিশ্চিত না। এই বিপদ কবে কাটবে আমরা কেউ জানি না। আমাদের সামনে অদৃশ্য এক শত্রু, অনিশ্চিত এক শত্রুকাল সময়। তাই বলে দমে যাবে বাঙালি ? না। কেউ আমাদের দমাতে পারবে না। জাতির পিতার সেই অমর বাণী আমাদের সাহস জোগায়। এই অাঁধার কেটে যাবে, শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। অধৈর্য না হয়ে সবাই একটু ধৈর্যধারণ করি। মানবিক হই, মানুষের পাশে দাঁড়াই। ভূপেন হাজারিকার গানের কিছু অংশ বলতে চাই-


বল কি তোমার ক্ষতি

জীবনের অথৈ নদী

পার হয় তোমাকে ধরে দুর্বল মানুষ যদি

মানুষ যদি সে না হয় মানুষ

দানব কখনো হয় না মানুষ

যদি দানব কখনো বা হয় মানুষ লজ্জা কি তুমি পাবে না?

ও বন্ধু।

মানুষ মানুষের জন্য

জীবন জীবনের জন্য

একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না

ও বন্ধু।

সবাইকে বাংলা নববর্ষ ১৪২৭-এর শুভেচ্ছা

ঘরে থাকুন, সচেতন থাকুন।

সর্বাধিক পঠিত