পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের পাশাপাশি সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে : অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান
‘প্রকৃতি সংরক্ষণ করি, প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করি’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘প্রতিবেশ পুনঃরুদ্ধার, হোক সবার অঙ্গীকার’। অন্যদিকে জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ২০২১ সালের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো ‘মুজিববর্ষে অঙ্গীকার করি, সোনার বাংলা সবুজ করি’। বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২১ উপলক্ষে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), চাঁদপুরের আয়োজনে গতকাল ০৮ জুন ২০২১ ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সনাক সভাপতি শাহানারা বেগমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, পরিবেশের বিরূপ প্রভাব আমরা প্রতিনিয়ত উপলব্ধি করছি। আইনের সঠিক ব্যবহার না থাকায় পরিবেশ দিন দিন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। পরিবেশ দূষণের ফলে প্রচ- গরম পরিলক্ষিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের পাশাপাশি সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেককে ৩টি করে গাছ লাগানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। কারণ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ লাগানোর বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, পরিবেশ রক্ষা করতে না পারলে মানবসভ্যতা বিলীন হয়ে যাবে। তিনি সবাইকে স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি পরিবেশ দিবস উপলক্ষে চমৎকার একটি আয়োজন করায় সনাক-টিআইবিকে ধন্যবাদ জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ অধিদপ্তর, চাঁদপুরের সহকারী পরিচালক নাজিম হোসেন শেখ বলেন, বাতাস ও পানি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকলে আমাদের বেঁচে থাকা কষ্টসাধ্য হবে। ময়লা আবর্জনাগুলো যেখানে-সেখানে স্তূপ থাকার কারণে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। যা পরিবেশ তথা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কার্বন-ডাই-অক্সাইডের চেয়েও ২০ গুণ ক্ষতিকর হলো মিথেন গ্যাস।
তিনি বলেন, আমাদের বেঁচে থাকার সকল কিছুই ইকো সিস্টেমের অংশ। পুকুর, নদী, খাল ভরাট সারা দেশেই চলছে। সেদিক থেকে চাঁদপুরও পিছিয়ে নেই। আমরা এ ব্যাপারে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। অপরিকল্পিতভাবে পুকুর ও খাল ভরাট করার কোনো সংবাদ থাকলে পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানোর আহ্বান জানান। তিনি পরিবেশ রক্ষায় সকলের পরামর্শ ও সহযোগিতা কামনা করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন চাঁদপুর জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক রতন কুমার মজুমদার বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যে দেশগুলো পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং সকল দায়ভার ঐ দেশগুলোর নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ৫টি দেশ সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃস্বরণের জন্য দায়ী। বাংলাদেশের নদীগুলো প্রচুর পরিমাণে দূষিত হচ্ছে। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে। চাঁদপুরের নালাগুলো দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তিনি পরিবেশ রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চাঁদপুর প্রেসক্লাবে সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী বলেন, পরিবেশ দিবস উপলক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তর কোনো কর্মসূচি না নিলেও টিআইবির আজকের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তিনি আরও বলেন, চাঁদপুরের পরিবেশ দিন দিন বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে চাঁদপুরের বাহির থেকে বানর, অজগর সাপ, রাসেল ভাইপার সাপ চাঁদপুরে প্রবেশ করছে। বিভিন্ন দিবসে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপন করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরকে সেই গাছগুলো তদারকি করতে হবে। কারণ পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগানোর বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, চাঁদপুরের নদী, খাল ও পুকুরগুলো অপরিকল্পিতভাবে ভরাট করা হচ্ছে। এতে চাঁদপুরের পরিবেশ দিন দিন হুমকির মুখে পড়ছে। তিনি বলেন, নদীকে আমরা ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করছি। চাঁদপুরের পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তরকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
সাহিত্য একাডেমী চাঁদপুরের মহাপরিচালক, সনাক সদস্য কাজী শাহাদাতের সঞ্চালনায় দিবসের উপর ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন টিআইবির এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মোঃ মাসুদ রানা। ধারণাপত্রের উপর মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন দৈনিক চাঁদপুর খবর পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক সোহেল রুশদী, চাঁদপুর পৌরসভার সচিব মোঃ আবুল কালাম, সনাক সদস্য অধ্যক্ষ মোঃ মোশারেফ হোসেন, সনাকের সহ-সভাপতি সবিতা বিশ্বাস, স্বজন গ্রুপের সহ-সমন্বয়কারী রুমা সরকার, স্বজন গ্রুপের সদস্য কামরুজ্জামান টুটুল, ইয়েসের দলনেতা মারজাহান আক্তার, ইয়েস সদস্য দীন মোহাম্মদ দিলরাজ ও মৈশাদী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোঃ আবু বকর মানিক।
সম্মানীয় অতিথির বক্তব্যে টিআইবি চট্টগ্রাম ক্লাস্টারের ক্লাস্টার কো-অর্ডিনেটর মোঃ জসীম উদ্দিন বলেন, সোনার বাংলা সবুজ করার জায়গায় আমরা কতটুকু অবদান রাখছি। বিভিন্ন সময়ে কী সংখ্যক গাছ লাগানো হয়েছে এবং বর্তমানে কী পরিমাণ গাছ টিকে আছে সে ধরনের একটা তথ্য পরিবেশ অধিদপ্তরের থাকা দরকার বলে মনে করি। তিনি বলেন, যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ও পলিথিন ফেলার ফলে নালাগুলো দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আমাদেরকে পরিবেশ সংরক্ষণে আরও সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, প্রায় ১৭৫ নদী মৃতপ্রায়। প্রতিদিন গড়ে ১/২টি নদী নাব্যতা হারাচ্ছে। পরিবেশ রক্ষায় জলবায়ু প্রজেক্টগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি-না তা টিআইবি মনিটরিং করছে।
সনাক সভাপতি শাহানারা বেগম বলেন, আমাদের চারপাশে যাকিছু আছে তা নিয়েই আমাদের পরিবেশ। পরিবেশ সংরক্ষণের দায়িত্ব আমাদের সকলের। নিয়ম করে গাছ লাগানো হলেও তা তদারকি করা হচ্ছে না। এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নজর দিতে হবে। পুকুরগুলো যদি ভরাট না হতো, খালগুলো যদি দখল না হতো তাহলে পরিবেশ এতোটা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতো না। পরিবেশ আমরাই দূষণ করছি। আমাদেরকে পরিবেশ রক্ষায় মনোযোগী হতে হবে। তিনি এধরনের একটি ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান।
টিআইবির এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মাসুদ রানার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সনাকের সহ-সভাপতি ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিকবৃন্দ, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীবৃন্দ, সনাক-স্বজন-ইয়েস-ইয়েস ফ্রেন্ডস গ্রুপের সদস্যবৃন্দ ও টিআইবি কর্মীবৃন্দ।