• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

তুমুল চাহিদায় সর্বোচ্চ দামে চলছে তরমুজের কেনা-বেচা

প্রকাশ:  ২৮ এপ্রিল ২০২১, ১২:৫১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

একে তো রেকর্ড গরম, এর উপর চলছে রমজান। তাই তরমুজের এখন তুমুল চাহিদা। একই সঙ্গে সরবরাহেও পড়েছে টান, এরমধ্যে মৌসুমের সর্বোচ্চ দামে চলছে তরমুজের কেনা-বেচা। মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী আড়ৎ এবং কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

প্রচণ্ড গরমে প্রশান্তি দিতে তরমুজের স্থান সবার উপরে। তপ্ত দিনে ইফতারে তরমুজ চান না এমন রোজাদারের দেখা মিলবে না হয়তো। কিন্তু লোভনীয় এই ফলের দাম এখন অনেকটাই সাধারণের নাগালের বাইরে। খুচরা ব্যবসায়ীদের কেজি দরে তরমুজ বিক্রির স্বেচ্ছাচারিতা তরমুজকে এবার অনেকটাই দুর্মূল্য করে রেখেছে বলে দাবি ক্রেতাদের।

আড়তদার, পাইকাররা জানিয়েছেন, এবার তরমুজের ফলন ভালো। চাষিরা ভালো দাম পেয়েছে। চাহিদার কারণে এবার পুরো মৌসুমেই তরমুজের দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি ছিল। লকডাউন থাকলেও পণ্য পরিবহনে বাধা না থাকায় তরমুজ বেচাবিক্রিতে তেমন কোনো সমস্যাই হয়নি। এখন তরমুজের মৌসুম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তারপরও সরবরাহ হয়তো ১৫ দিনের মতো থাকবে বলেও জানিয়েছেন তারা।

সকালে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন গন্তব্য থেকে আসা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান থেকে তরমুজ নামানো হচ্ছে। আবার কিনে অনেকে ট্রাক ও ভ্যানে করে গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আড়তে এখন তরমুজের সরবরাহ অনেক কমে গেছে।

আড়তে বা পাইকারি বাজারে তরমুজ শ’ (১০০টি) হিসেবে বিক্রি হয়। কিন্তু খুচরা বাজারে ক্রেতাকে কিনতে হচ্ছে কেজি হিসেবে। মঙ্গলবারের বাজার অনুযায়ী মোটামুটি আকারভেদে ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা দরে তরমুজের শ’ বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা ৭০ টাকা কেজি দরে।

যাত্রাবাড়ী আড়তের তরমুজ বিক্রির দোকান মেসার্স ডি কে বাণিজ্যালয়ে সরকার মো. শামীম শেখ জাগো নিউজকে বলেন, এখন একেকটি ১০ থেকে ১২ কেজি ওজনের একশ তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। ৭ থেকে ৮ কেজি ওজনের মধ্যে থাকা একশ তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। একেকটি ৪ থেকে ৫ কেজি ওজনের মধ্যে থাকা একশ তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।

২ থেকে আড়াই কেজি ওজনে একেবারে ছোট ছোট তরমুজ ৩ হাজার টাকা শ’ দরে বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান শামীম।

তিনি আরও বলেন, ‘এই দামই এই মৌসুমের সর্বোচ্চ দাম। তরমুজ হয়তো আর হয়তো রোজার মাসটাই থাকবে। শেষ পর্যন্ত দাম মোটামুটি এই রকমই থাকবে।’

বাংলালিংক, বিগ ফ্যামিলি, সাদা তরমুজ ও খরমুজ- বাজারে এ চার ধরনের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান শামীম।

মৌসুমের প্রথমে যাত্রাবাড়ী আড়তে সিলেট ও সুনামগঞ্জের তরমুজ আসে। এরপর আসে ভোলার তরমুজ। শেষে খুলনা ও বরগুনা এলাকার তরমুজ আসছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার জন্য শ’ দরে তরমুজ কিনে কেজি দরে বিক্রি করে।

এখন বাজারে আসছে গাঢ় সবুজ রঙয়ের ছোট আকারের তরমুজ, এটাকে খরমুজও বলা হয়। তবে খরমুজ আড়ৎ পর্যায়েই কেজি দরে বিক্রি হয়। যাত্রাবাড়ী আড়তে মানভেদে ৩০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে খরমুজ বিক্রি করতে দেখা গেছে।

আড়তদার আশিক হোসেন বলেন, ‘এবার পরিবেশের কারণেই তরমুজের চাহিদা বেশি। গরম আবার রোজা। চাহিদা বেশি থাকায় পাইকার- আড়তদাররা জমি থেকেই ভালো দামে তরমুজ কিনে নিয়েছেন। কৃষকের ফলনও ভালো হয়েছে, দামও ভালো পেয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘খুচরা ব্যবসায়ীরা শ’দরে কিনে কেজি দরে বিক্রি করার কোনো মানে নেই। তারা আসলে বেশি লাভের জন্য এটা করে। সরকার সেটা দেখতে পারে।’

মাতুয়াইল মেডিকেল এলাকায় খুচরা তরমুজ বিক্রি করেন শহিদুল ইসলাম। তিনি যাত্রাবাড়ী আড়তে তরমুজ কেনার জন্য ঘুরছিলেন। শহিদুল বলেন, ‘আমি ছোট ব্যবসায়ী এখন তরমুজের যে দাম যাইতাছে, আমরা পুনজি (পুঁজি) কম, আমি কিনতে পারমু না। খরমুজ কেনা যায় কিনা দেখতাছি। ৪৫ টাকা কেজি দরে খরমুজ কিনা, খরচাপাতি দিয়া ৬০ টাকা কেজি বেচলেও আমার পোষাইব না। দেহি কী করতে পারি।’

jagonews24

আপনারা শ’ হিসেবে তরমুজ কিনে কেন কেজি দরে বিক্রি করেন- জানতে চাইলে শহিদুল বলেন, ‘তরমুজ কেনার পর হাজারে ১০ টাকা কয়ালি দিতে হয়, এরপর আছে কুলি খরচ, নেয়ার গাড়ি ভাড়া, দোকান ভাড়া। আর আড়তদাররা ছোড-বড় মিলাইয়া দেয়।’

সবকিছুর পর কেজি দরে বেচলে খুব বেশি লাভ থাকে না বলে দাবি করেন এই খুচরা বিক্রেতা।

রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ডের উত্তর পাশে ৫-৬টি খুচরা তরমুজ বিক্রির অস্থায়ী দোকান রয়েছে। মঙ্গলবার এসব দোকানে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এখানকার একজন দোকানদার ইমরান হোসেন ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। শ’হিসেবে তরমুজ কিনে এনে কেজি দরে বিক্রি করায় মানুষ অসন্তুষ্ট হচ্ছে- এ বিষয়ে ইমরান বলেন, আমার এখানে তরমুজের একেকটির ওজন ৩ থেকে ৬ কেজির মধ্যে। আমি ২০ হাজার টাকা শ’দরে কিনে আনছি। কয়ালি, লোবার ও গাড়ি ভাড়াসহ এক একটি তরমুজের দাম পড়েছে ২২০ টাকা।

তিনি ৩ কেজি ওজনের একটি তরমুজ তুলে ধরে বলেন, ‘আমি যদি এটার দাম আড়াইশ টাকা চাই তবে তো মানুষ আমারে মারবো। কিন্তু এটা কিনতেও তো আমার ২২০ টাকা পড়ছে। বড়গুলা বেইচা ছোটগুলোর দাম পোষাইয়া নেই, খুব যে লাভ সেটা না, সবাই যেমনে বেচে আমিও তেমনে বেচি।’

jagonews24

এই মৌসুমে কিছুদিন আগে সবচেয়ে কম ৩০ টাকা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করেছেন বলেও জানান ইমরান হোসেন।

মাতুয়াইল কবরস্থান রোডের বাসিন্দা ইলিয়াস হোসেন এসেছেন রায়েরবাগ বাজারে তরমুজ কিনতে। তিনি বলেন, ‘এই গরমে সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারে তরমুজটা খুবই স্বাস্থ্যকর একটা ফল। কিন্তু তরমুজের কেজি ৬০ টাকা, ছোট একটা তরমুজ চার কেজি হলেও দাম আসে ২৪০ টাকা। এটা হয় ভাই বলেন। তারপরও রোজার কারণে বাধ্য হয়ে কিনছি। হয় সরকার সবক্ষেত্রে কেজি দরে তরমুজ বিক্রির নিয়ম করে দিক কিংবা যারা কেজিতে বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।’

সর্বাধিক পঠিত