রোজা রেখেও নেয়া যাবে করোনা ভ্যাকসিন
যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এবং ইসলামি শিক্ষাবিদরা বলছেন, রমজানের সময় রোজা রেখেও মুসলিমরা করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে পারবেন। ভ্যাকসিন নেয়া থেকে বিরত থাকা উচিত হবে না বলে উল্লেখ করেছেন তারা। খবর বিবিসির।
বাংলাদেশের ইসলামিক ফাউন্ডেশনও গত ১৪ মার্চ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভা কক্ষে দেশের জ্যেষ্ঠ আলেমদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ের পর জানিয়েছে, রোজা রেখে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিতে কোন সমস্যা নেই।
রমজানের সময় দিনের বেলায় মুসলিমরা সব ধরনের খাবার এবং পানি গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে তারা রমজানে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত শরীরের ভেতরে কোনো খাবার বা পানীয় গ্রহণ করেন না।
যুক্তরাজ্যের মসজিদ এবং ইমামদের জাতীয় উপদেষ্টা বোর্ডের চেয়ারম্যান ইমাম আসিম বলেন, ভ্যাকসিন যেহেতু পেশীতে দেয়া হয়, এটি রক্তের শিরায় যায় না। এটি পুষ্টিকর কিছু নয়। সুতরাং ভ্যাকসিন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
আসিম বলেন, ইসলামি চিন্তাবিদদের বেশিরভাগের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, রমজানের সময় ভ্যাকসিন নেয়া হলে তাতে রোজা ভঙ্গ হয় না।
মুসলিম কমিউনিটির জন্য তার বার্তা হলো, ‘আপনি যদি ভ্যাকসিন নেয়ার উপযুক্ত হন এবং ভ্যাকসিন নেয়ার আমন্ত্রণ পান তাহলে আপনার নিজেকেই জিজ্ঞেস করতে হবে, আপনি ভ্যাকসিন নেবেন কিনা। এর মধ্যেই ভ্যাকসিন কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে। কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নেবেন কিনা সেটা আপনার সিদ্ধান্ত। করোনা আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে এবং এর ফলে হয়তো পুরো রমজানই হারাতে পারেন, হয়তো হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকারও হতে পারে।’
যুক্তরাজ্যে স্বাস্থ্য সেবা নটিংহ্যাম এবং ব্রাইটনের মতো অনেক কেন্দ্র তাদের কার্যক্রমের সময় বাড়িয়েছে, যাতে মুসলিমরা ইফতারের পর সেখানে ভ্যাকসিন নিতে আসতে পারেন। তবে পূর্ব লন্ডনের সার্জারি প্রজেক্টের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক ড. ফারজানা হুসেইন বলেন, দিনের বেলায় ভ্যাকসিন নেয়া থেকে বিরত থাকার আসলে কোন প্রয়োজন নেই।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, রমজানের সময় কোভিডের ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক মুসলিমের মধ্যে সংশয় রয়েছে। অনেকে বিশ্বাস করেন, এই সময় ভ্যাকসিন নিলে তাদের রোজা ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু এটা একেবারেই তা নয়, কারণ এর মাধ্যমে আসলে শরীরে কোন খাবার প্রবেশ করছে না।’
তিনি বলেন, ‘কুরআনে বলা আছে, তোমার জীবন রক্ষা করা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একটা জীবন বাঁচানো মানে হলো পুরো মানব জগতকে বাঁচানো। সুতরাং একজন মুসলিম হিসেবে টিকা নেয়া একটা দায়িত্ব।’
যুক্তরাজ্যের মুসলিমদের মধ্যে ভ্যাকসিন নেয়ার হার বৃদ্ধি করার জন্য অনেক মসজিদেও টিকাদান কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
ইপসোস মোরির একটি জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যের জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভ্যাকসিন গ্রহণের হার জানুয়ারিতে ছিল ৭৭ শতাংশ, মার্চ নাগাদ তা বেড়ে হয়েছে ৯২ শতাংশ।
রমজানে মসজিদে একত্রে নামাজ পড়া অথবা একত্রে ইফতার করার প্রচলন দীর্ঘদিনের। যুক্তরাজ্যে যদিও সম্প্রদায়গত প্রার্থনায় কোন বাধা নেই, তবে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করার বিষয়টি সবাইকে মেনে চলতে হবে এবং কোন একটি ঘরে একাধিক বাসার লোকজনের মেলামেশায় নিষেধ রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ইসলামিক মেডিকেল এসোসিয়েশন রমজানের সময় মসজিদগুলোর জন্য একটি নির্দেশনা জারি করেছে। সেখানে তারা তারাবি নামাজ সংক্ষিপ্ত আকারে পড়ার পরামর্শ দিয়েছে। সেই সঙ্গে যথেষ্ট বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখার কথা বলেছে। তারা বলছে, ইমামদের অবশ্যই সঠিকভাবে দু’টি মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
ডার্বির চিকিৎসক এবং এসোসিয়েশনের প্রতিনিধি ড. শেহলা ইমতিয়াজ উমর বলেন, ‘কোভিড মহামারির কারণে আমাদের কমিউনিটির ভেতর অনেক ক্ষয়ক্ষতি হতে দেখেছি। সুতরাং আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, এবারের রমজানে যেন কোনভাবেই মুসলিমরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’
তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক ব্যাপার হলো, গত বছর আমাদের সম্প্রদায়ের অনেকের ক্ষতি হয়েছে, এবারও হচ্ছে। কিন্তু আমরা যদি ভ্যাকসিন নিতে থাকি এবং নিজেদের সুরক্ষার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করি তাহলে আমরা এই রমজানেই কিছু স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারব।’
সূত্র : জাগো নিউজ।